জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের প্রথম বৈঠক

দেশে তখন খারাপ সংবাদের ছড়াছড়ি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ছে নতুন নতুন এলাকা। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ত্রাণ তৎপরতা শুরু হলেও বিতরণ নিয়ে শুরু হয়েছে প্রশ্ন। এমন পরিস্থিতিতে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর সভাপতিত্বে এইদিন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সকাল সাড়ে নয়টা থেকে দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের বৈঠকে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। বৈঠকে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সকল সদস্য, অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, যোগাযোগমন্ত্রী ও সম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে কমিশন গঠনের উদ্যোগ

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার বাইরে মাছ ধরার ব্যাপারে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সমন্বয়ে একটি কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। দৈনিক বাংলার পরের দিনের সংবাদে এ তথ্য জানানো হয়। বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করাই হবে এই কমিশন গঠনের উদ্দেশ্য। বাংলাদেশ ছাড়া ভারত সিংহল, বার্মা এবং অন্যান্য যেসব দেশ বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরায় আগ্রহী তাদেরকে নিয়ে এই কমিশন গঠিত হতে পারে। এই দেশগুলো ছাড়াও থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং আরও কয়েকটি দেশকে এরমধ্যে নেওয়ার কথাও বিবেচনা করা হয়।

উপমহাদেশে শান্তি না এলে...

উপমহাদেশের সম্পর্কে মার্কিন নীতির কঠোর সমালোচনা করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন যুক্তরাষ্ট্র এখনও পাকিস্তানকে ভারতবর্ষের সঙ্গে এক করে দেখতে চায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র কিছুতেই এভাবে দেখাতে পারে না। পাকিস্তানকে ভারতের সঙ্গে এক করে দেখানো যেতে পারে না। ভারতবর্ষ একটি বিশাল দেশ এবং এই বিশাল দেশের সঙ্গে পাকিস্তানকে এক করে দেখা মানে একে ছোট করা। প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি গান্ধী এইদিন ভারত সম্পর্কে একটি মার্কিন ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে একথা ঘোষণা করেন।

শ্রীমতি গান্ধী বলেন যখন কোনও একটি দেশকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সরবরাহ করা হয় তখন সে দেশে এমন এক আবহ সৃষ্টি হয় যে তারা আরও অস্ত্রের জন্য হন্যে হয়ে ওঠে এবং সর্বাধুনিক অস্ত্রের ব্যবহারের কথা বলে।

তিনি উল্লেখ করেন, ভারত-বাংলাদেশ আপ্রাণ চেষ্টা করছে এ উপনহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়টি দেশ পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে সমর্থন করছে। ভারতের কথা হলো, তোমরা যদি একটি দেশ হিসেবে পাকিস্তানকে সমর্থন করো করতে পারো। কিন্তু তোমরা ব্যক্তিকে সমর্থন করতে পারো কি? তিনি বলেন, উপমহাদেশে শান্তি না এলে সমগ্র এশিয়া ভুগবে।

খাদ্য পরিস্থিতি ভয়াবহ

জাতিসংঘের মহাসচিব ওয়ার্ল্ড হেইম বলেন, বিশ্বের খাদ্য পরিস্থিতি ভয়াবহ ও অসহনীয়। ন্যূনতম মৌলিক খাদ্য মজুত সুনিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের অধিবেশন চলাকালে তিনি বলেন, প্রধান প্রধান খাদ্য উৎপাদনকারী দেশ খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং কোনও অদৃষ্টের কথা বাদ দিলে তারা চলতি বছরে প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদনে সমর্থ হবে।

এই ব্যাপারে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গ্রহণের সময় আসছে বলে তিনি উল্লেখ করেন, এ ধরনের একটি পরিকল্পনার জন্য মহাসচিব প্রস্তাব পেশ করার অভিপ্রায়েকে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ স্বাগত জানায়।