পাকিস্তানের মনোভাব স্থায়ী শান্তির অন্তরায়

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২৪ মের ঘটনা।)

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন বলেছেন,  পাকিস্তানের নেতাদের অব্যাহত শত্রুতা এবং নিরীহ বাঙালিদের ওপর নির্যাতনের মাধ্যমে উপমহাদেশে স্বাভাবিক অবস্থায় স্থায়ী শান্তি আসতে পারছে না। এই দিনে এশিয় শান্তি সম্মেলনের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ভাষণ দানকালে তিনি বলেন, ‘উপমহাদেশের  রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক রচনা, সমতা ও সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে পারস্পারিক কল্যাণকর সম্পর্ক অন্যতম।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এশিয়ায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ তিনি বিশ্বের সকল নির্যাতিত এবং ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে লিপ্ত জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশ সংহতি প্রকাশ করেন।

ন্যায্য মূল্যের দোকান কর্মসূচি ব্যর্থ হয়েছে

ইসলামিক অ্যাকাডেমিতে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে বাণিজ্যমন্ত্রী এএইচএম কামরুজ্জামান স্বীকার করেন যে, ন্যায্য মূল্যের দোকান কর্মসূচি সফল হচ্ছে না। তিনি ঘোষণা করেন, অসাধু ব্যবসায়ী এবং ভুয়া লাইসেন্স- পারমিট পরীক্ষার পর আদালতে বিচার করা হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে। তিনি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে তাদের অনেককে বিচারিক আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।’

দৈনিক ইত্তেফাক, ২৫ মে ১৯৭৩কামরুজ্জামান বলেন, ‘সরকার সাধারণ ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে মধ্যস্বত্বভোগীদের আলাদা করে চিহ্নিত করেছে।’ মন্ত্রী প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন, যে সব লোকাল ম্যানেজারের কাছে পণ্য শূন্যতার খবর এসেছে, শিগগিরই রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প কারখানায় উৎপাদিত ও পাবলিক সেক্টরের আমদানিকৃত পণ্য সরাসরি সেইসব দোকানে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এর ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা সম্ভব হবে।

বেলুচিস্তানে বিদ্রোহ দমনে জঙ্গি বিমান

বেলুচিস্তানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী আতাউল খান এই দাবি করেন যে, পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে  বিদ্রোহ দমনে জঙ্গি বিমান  তার এলাকায় হামলা চালাচ্ছে এবং হাজার হাজার মানুষ তাদের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম শুরু করতে বাধ্য হয়েছেন। করাচির ডেইলি স্টার পত্রিকা জানায়, আকাশে পূর্ণাঙ্গ সামরিক অভিযান শুরু করেছে এবং অনেক এলাকায় অবরোধ করে খাদ্য ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য পাকিস্তান সরকারের মুখপাত্র গোলযোগে বিমানবাহিনীর অংশগ্রহণের কথা অস্বীকার করেন এবং এই অভিযোগকে ‘বাজে মন্তব্য’ বলেন।

যৌথ প্রস্তাব সংশোধনের প্রশ্নই ওঠে না

বাংলাদেশ পররাষ্ট্র দফতরের সেক্রেটারি এনায়েত করিম বলেন, উপমহাদেশের মানবিক সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য বাংলাদেশ-ভারত যে যৌথ প্রস্তাব দিয়েছে, তা সংশোধনের কোনও প্রশ্ন উঠতে পারে না। উপমহাদেশের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় পাকিস্তানের বৈরী মনোভাব ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য একটি যৌথ স্ট্র্যাটেজি গ্রহণের বিষয়ে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পর এনায়েত করিম সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। আলোচনার পর ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেন, আলোচনায় উভয়পক্ষ অক্ষমতা প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রস্তাবের প্রতি পাকিস্তানের নেতিবাচক মনোভাব এবং বিচারের জন্য বাংলাদেশের হাতে পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দিদের তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে পাকিস্তানের আবেদনের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এই আলোচনার প্রয়োজন দেখা দেয়।

দি বাংলাদেশ অবজারভার, ২৫ মে ১৯৭৩অসুস্থ শরীরে ঢাকায় সৈন্যরা

পাকিস্তানের কারাগার থেকে অসুস্থ অবস্থায় মুক্তি পেয়ে সামরিক বাহিনীর ৯ জন অসুস্থ বাঙালি সৈন্য ঢাকায় এসে পৌঁছান এই দিনে (২৪ মে)। তারা দিল্লি থেকে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমানে করে ঢাকা পৌঁছান। সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে তাদের অভ্যর্থনা জানান এবং প্রতিরক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে তাদের গ্রহণ করেন।