(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২৭ মে’র ঘটনা।)
বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান আবারও শ্রমিকদের প্রতি উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি সমাজবিরোধীদের দমনে সরকারকে সহায়তা করারও আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর শুরুতেই যে আহ্বান জানিয়ে আসছেন, তা হলো উৎপাদন বাড়াতে হবে, সমাজবিরোধীদের দমন করতে হবে। তিনি দেশের সমস্যার কথা উল্লেখ করে ১৯৭৩ সালের এই দিনে (২৭ মে) বলেন, ‘ক্ষেতে-খামারে ও কলকারখানাসহ সকল স্তরে উৎপাদন বৃদ্ধি ছাড়া এসব সমস্যার সমাধান করা যাবে না এবং মানুষকে বাঁচানো যাবে না। বঙ্গবন্ধু এদিন গণভবনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থার শ্রমিকদের উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন। উল্লেখ্য, এর আগে বিআরটিসির শ্রমিক-কর্মচারী লীগের উদ্যোগে সংস্থার মতিঝিল ডিপোতে এক শ্রমিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বিআরটিসি শ্রমিকদের একটি মিছিল শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে গণভবনে যায়। তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এবং আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর উপস্থিত ছিলেন।
এশীয় শান্তি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু জুলিও কুরি পদক লাভের ঘটনায় অভিনন্দন জানানোর জন্য বিআরটিসি কর্মচারী শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা গণমিছিল নিয়ে গণভবনে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘যেসব শ্রমিক কাজ না করে বেতন বৃদ্ধির দাবি জানায়, তারা শুধু নিজেদের না, দেশেরও ক্ষতি করছে।’ কঠোর ও আন্তরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশের সম্পদ বৃদ্ধি করার জন্য তিনি তাদের পরামর্শ দেন। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুকে মাল্যভূষিত করা হয়। এ সময় বঙ্গবন্ধু শ্রমিকদের প্রশংসা করেন। কলকারখানার উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।
লন্ডনে বাংলাদেশবিরোধী পাকিস্তানি তৎপরতা
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করার এক সম্মিলিত পাকিস্তানি চক্রান্তকে জোরদার করা হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ করা হয়। আর লন্ডনে এই চক্রান্তকারীদের হেডকোয়ার্টার। সেখানে বিশেষ সংবাদ সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল— বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নানারকম ধ্বংসাত্মক কাজ চালানোর একটি শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলা। মাহমুদ আলী তার সাম্প্রতিক সফরকালে কিছু সংখ্যক প্রবাসী বাঙালিকে নিয়ে একটি বৈঠক করেন। এসব বাঙালি শত্রু পাকিস্তানের প্রতি তাদের আনুগত্যের দরুন সম্প্রতি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব হারায়। বৈঠকে ইসলামাবাদের বেতনভুক্ত প্রতিক্রিয়াশীলরা উপস্থিত ছিলেন। মোহাম্মদ আলী তাদের কাছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের চক্রান্ত পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেন।
ইরাকি মন্ত্রী ও শান্তি সম্মেলনে ইরাকের প্রতিনিধি দলের নেতা আজিজ শরীফ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বঙ্গবন্ধুকে তিনি এক অনন্য ব্যক্তিত্ব ও মহৎ হৃদয়ের মানুষ বলে বর্ণনা করেন। এদিন বিপিএনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ইসলামের নামে পাকিস্তান শোষণ ও বর্বর নির্যাতন চালিয়েছিল। মধ্যপ্রাচ্যের সাধারণ মানুষ আজ সে কথা বুঝতে পারছে।’
তিনি বলেন, ‘ইরানের বর্তমান শাহ তার দেশের জনগণের সুখ-সমৃদ্ধি ও শান্তি জলাঞ্জলি দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী প্রভুকে তোষণ করছে।’
আজিজ শরীফ আরও বলেন, ‘ইরানের জনগণ আদৌ সুখী নয় এবং তাদের ওপর যে যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাতে তারা শঙ্কিত।’ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় ইরানের ব্যাপক সমরসজ্জা সম্পর্কে আজিজ বলেন, ‘সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো তাদের হীন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এশিয়া এবং বিশেষ করে উপমহাদেশে উত্তেজনা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে।’