চাঁপাইনবাবগঞ্জের ‘লকডাউনে’ অরক্ষিত রাজশাহী

চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়ায় গত ২৪ মে দিবাগত রাত থেকে এক সপ্তাহের লকডাউন চলছে। এ সময়ে পার্শ্ববর্তী রাজশাহী ও নওগাঁ থেকে কোনও যানবাহন চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রবেশ না করার নির্দেশনা থাকলেও সরেজমিনে দেখা গেছে, এ এলাকাগুলোয় নানা উপায়ে মানুষের চলাচল অব্যাহত রয়েছে। এমনকি আক্রান্ত রোগীও চিকিৎসার জন্য মাত্র ৪৫ মিনিট দূরত্বের বিভাগীয় শহর রাজশাহী যাওয়ার অভিযোগ আছে। ফলে লাগোয়া জেলা হিসেবে রাজশাহী অরক্ষিত হয়ে উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমতাবস্থায়  রাজশাহীকে লকডাউনের আওতায় আনা জরুরি। সীমান্তবর্তী এলাকা হিসেবে এমনিতেই এই অঞ্চলগুলো অনিরাপদ। তারওপর যদি করোনা আক্রান্তরা আন্তঃজেলা যাতায়াত করেন তবে সেটির ফল ভয়াবহ হতে পারে।

২৪ তারিখ থেকে চালু হওয়া লকডাউনে ১১ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরমধ্যে বলা হয়, লকডাউনের সময় সব দোকানপাট ও যানচলাচল বন্ধ থাকবে। রাজশাহী ও নওগাঁ থেকে কোনও যানবাহন চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রবেশ করতে পারবে না, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকেও কোনও যানবাহন জেলার বাইরে যাবে না। রোগী ও অন্য জরুরি সেবাদানকারীর ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না। কিন্তু ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক কারণে পাশাপাশি এই দুই জেলার মানুষের যোগাযোগ এতই বেশি যে এই কয়দিনে তা কিছুটা কমলেও থামানো সম্ভব হয়নি। ফলে রাজশাহী ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে দিন দিন।

রাজশাহী জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. কাইয়ুম তালুকদার জানান, রাজশাহী জেলায় ২৪ মে করোনা আক্রান্তের হার ছিল ৩৩ শতাংশ, ২৫ মে ছিল ২২.৬৮ শতাংশ এবং ২৬ মে  ছিল ১৮.০৩ শতাংশ।  ২৭ মে সেই সংক্রমণ ৪২ শতাংশ হয়েছে।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, বুধবার রাতে থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে তারা সকলেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা।

রাজশাহী জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. কাইয়ুম তালুকদার মনে করেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে লকডাউন করায় কিছুটা হলেও রাজশাহীর জন্য লাভ হচ্ছে। কারণ লকডাউন না থাকলে তারা সবাই চলে আসতো। আগে যেখানে ১০০ জন রাজশাহীতে আসতো। এখন চেকপোস্ট ফাঁকি দিয়ে অর্ধেক আসছে। কিন্তু এই যে অর্ধেক  লোক আসছে তাতেই রাজশাহী শঙ্কার মধ্যে পড়ছে। রাজশাহীতেও একইসঙ্গে লকডাউন দিলে বেশি কার্যকর হতো কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন শতভাগ নিরাপদ করা যায়নি। লকডাউন ঘোষণা তো শুধু আমার দফতরের একার কাজ নয়। এটা সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নিয়ে সর্বশেষ পর্যায় বিবেচনা করে ঘোষণা দিতে হবে। তবে আমরা আরও কয়েক দিন পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে পারবো আশা করি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মৌলিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এম ইকবাল আর্সলান মনে করেন রাজশাহীতে সংক্রমনের হার ৪২ শতাংশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লকডাউন ঘোষণা করা উচিত। তিনি বলেন, যখন ‍দুই জেলার মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ করা যাচ্ছে না এবং চিকিৎসা নিতে বা অন্যান্য অনেক কারণে ‍দুই জেলার মধ্যে বিচরণ অব্যাহত আছে তখন অবশ্যই রাজশাহী সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে। এখনই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। দুই জেলার মধ্যে মাত্র আধাঘন্টা থেকে ৪৫ মিনিটের পথ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকার মধ্যে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা যেতে এরচেয়ে বেশি সময় লাগে। বিষয়টা মোটেই অবহেলা করা যাবে না।

পরিস্থিতি যখন এমন ভয়াবহ হয়ে উঠছে তখন রাজশাহী শহরের মধ্যে অধিকাংশ মানুষকে মাস্কহীন অবস্থায় ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। বেশিরভাগের সঙ্গে মাস্ক থাকলেও সেটি সঠিকভাবে পরার বিষয়ে একেবারেই সচেতন নন। রাজশাহীর কাঁচাবাজার, ব্যাটারিচালিক রিক্সা (৬ থেকে আটজন ওঠেন) সব জায়গাতেই এখনও মাস্কহীন মানুষের দেখা  মেলে। সিভিল সার্জন ডা. মো. কাইয়ুম তালুকদার বলেন, রাজশাহীর শহরের মানুষ অনেক সচেতন। তারপরও অনেকেই মাস্ক পরছে না। তবে মাস্কসহ অন্যন্য স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য সবাই চেষ্টা করছি। নিজেরা একটু সচেতন হলে সংক্রমণ কমানো সহজ হবে।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২৭ মে) রাজশাহী সিভিল সার্জনের নিয়মিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীতে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত আরও ১ জনের মৃত্যু হয়। প্রাণঘাতি এ রোগে আক্রান্ত হয়ে জেলায় এ পর্যন্ত মোট ৮২জনের মৃত্যু হলো। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ৭০ জনসহ এ পর্যন্ত মোট ৮৪৮৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আরও ১৩জনসহ এ পর্যন্ত মোট ৭৩২৩ জন সুস্থ হয়েছেন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে ১০৭৮জন।