ছয় দফা দিবসে সোনার বাংলা গড়ার শপথ

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৫ জুনের ঘটনা।)

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নে সুখী সমৃদ্ধশালী ও প্রগতিশীল সোনার বাংলা গড়ার জন্য নতুন করে শপথ গ্রহণ করবে সাড়ে সাত কোটি বাঙালি। ১৯৭৩ থেকে সাত বছর আগের এই দিনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে ছয় দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বাঙালির তাদের রক্ত দিয়েছিল।

আন্দোলনের কয়েকজন নেতা যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তারা বাসসের সঙ্গে পৃথক পৃথক সাক্ষাৎকারে তাদের মন্তব্য জানান এবং অন্যান্য অঙ্গনের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা মনে রেখে জাতি পুনর্গঠন ও মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির কাজে জনগণকে পুনরায় আত্মনিয়োগের আহ্বান জানান।

যাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছিল তারা হলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, প্রচার সম্পাদক সরদার আমজাদ হোসেন এবং বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ।

জিল্লুর রহমান বলেন, ১৯৬৬ সালের গণআন্দোলনে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ ধ্বনিত হয় এবং বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা কর্মসূচির প্রতি মানুষ প্রকাশ্যে সমর্থন জানায়। তিনি বলেন, সাতজুনের সাফল্যজনক আন্দোলন ছয় দফার ভিত্তিতে বাঙালি জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রথম গণঅভ্যুত্থান আন্দোলন প্রেরণা যোগায়।

প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ সাত জুনকে শপথ দিবস হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ওই দিন থেকেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ছয় দফার ভিত্তিতে মানুষ আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের সংগ্রাম শুরু করে। এই সংগ্রামই শেষ পর্যন্ত মুক্তিসংগ্রামে রূপান্তরিত হয়। তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, যখন তখন যারা ছয় দফা আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিলেন তারাই আজ শোষিত বিপ্লবী নেতা।

আব্দুর রাজ্জাক সাক্ষাৎকারে বলেন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন আমাদের মুক্তি সংগ্রামের পথ সুগম করে এবং বঙ্গবন্ধু ১৯৬৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐতিহাসিক ছয় দফা পেশ করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের আদর্শ ঊর্ধ্বে তুলে ধরেন।

সাত জুন পালনের প্রস্তুতি চলছিল

সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে সাত জুন পালনের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী প্রধান আব্দুর রাজ্জাক এইদিন এক বিবৃতিতে সকল শ্রেণির মানুষের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।

ঐতিহাসিক এ দিবসে জাতির পিতার স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলা গড়ে তোলার আহ্বান জানান রাজ্জাক। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, জাতীয় শ্রমিক ও কৃষক লীগ সাত জুন পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। জনসভা মিছিল ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ দিন পালন করা হবে বলে জানানো হয়।

আলোচনাসভার মাধ্যমে দিনটি পালনের জন্য বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি একটি পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা শেখ শহিদুল ইসলাম, এম এ রশিদ রশিদুল হাসান, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, আব্দুল কাইয়ুমসহ আরও অনেকে এক যুক্ত বিবৃতিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় ঐতিহাসিক সাত জুন পালনের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে এদিন বিকাল চারটায় বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গনে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।