শোষণমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার শপথ নেবে বাংলাদেশ

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৬ জুনের ঘটনা।)

বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্য ১৯৬৬ সালের ৭ জুন যে বাঙালি বীর শহীদেরা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের কথা পরম কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করেন। ১৯৭৩ সালের ৬ জুন সেই দিনটিকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার প্রাক্কালে এক বাণীতে বঙ্গবন্ধু বলেন, ১৯৬৬ সালের এই দিনে তিনি যখন ঐতিহাসিক ছয়দফা কর্মসূচি ঘোষণা করার পর কারারুদ্ধ ছিলেন, সেসময় বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির জন্য শহীদ শহীদুল্লাহ ও আরও অনেকে তাদের রক্ত দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির জন্য তারা জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। তাদের কথা স্মরণ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ার এবং একটি শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পুনরায় আত্মোৎসর্গ শপথ গ্রহণের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

দিনটিকে শপথ দিবস হিসেবেও ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ।

বঙ্গবন্ধু বলেন লক্ষ লক্ষ জীবনের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি বটে, কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য এখনও সংগ্রাম করে যেতে হবে।

বঙ্গবন্ধু বলেন, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে আসুন আমরা এখন ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাই। যাতে আমাদের জনগণ অন্ন-বস্ত্র-আশ্রয় পায়।

‘পার্বত্য জনগণ সমান সুবিধা পাবে’

বঙ্গবন্ধু এইদিন বলেন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে পার্বত্য অঞ্চলের জনগণ দেশের অন্য অঞ্চলের জনগণের মতো সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। বাসস পরিবেশিত খবরে বলা হয়, রাঙ্গামাটির জাতীয় সংসদ সদস্য সুদীপ্তা দেওয়ান সংসদ ভবনে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার চেম্বারে দেখা করলে বঙ্গবন্ধু এ কথা বলেন।

পার্বত্য অঞ্চলের কিছু সমস্যার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সুদীপ্তা। এ সময় তিনি কিছু প্রস্তাব পেশ করেন। দেওয়ান প্রস্তাব করেন, পার্বত্য অঞ্চলের সমস্যাবলী- বিশেষ করে উন্নয়ন, যোগাযোগ ও শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দরকার।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী যে পার্বত্য অঞ্চলকে বঞ্চিত রেখেছিল সে ব্যাপারে তিনি সজাগ। চিকিৎসা ও প্রকৌশল মহাবিদ্যালয় কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পার্বত্য অঞ্চলের ছাত্রদের জন্য কিছু আসন সংরক্ষিত রাখার প্রস্তাব সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করবেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুকে উপহার

সৌজন্য উপহার হিসেবে ইতালীয় ভাষায় কবি জসীম উদ্দীনের ‘নকশী কাঁথার মাঠ’-এর ইতালীয় অনুবাদ প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উপহার দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর সংসদ অফিসে এই উপহার প্রদান অনুষ্ঠানে স্বয়ং কবি জসিম উদ্দীন উপস্থিত ছিলেন। ইতালিয়ান লিয়েফ নামের একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বইটি প্রকাশ করে।

পিকিং-পিন্ডির বাস্তবতা মানা উচিত

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুইটলাম বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতাকে পাকিস্তান ও চীন মেনে নেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। দিল্লিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। এর আগে প্রকাশিত ভারত-অস্ট্রেলিয়ার যুক্ত ইস্তেহারে ঘোষণা করা হয়, অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী ভারত-বাংলাদেশ যুক্ত ঘোষণাকে একটি গঠনমূলক পদক্ষেপ বলে ঘোষণা করেছেন। আশা প্রকাশ করেছেন যে শিগগিরই এ ব্যাপারে আরও অগ্রগতি হবে এবং উপমহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

ভাসানীর অহিংস আন্দোলন

ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রধান মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এদিন বলেন যে, বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে তৎপর দেশি ও বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলন শুরু করা হবে। এদিন বিকালে এক জনসভায় ভাষণদানকালে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, এ কাজের জন্য একদল স্বেচ্ছাসেবক সংগ্রহ করতে হবে এবং টাঙ্গাইলের শিবির স্থাপন করে তাদের সেখানে ট্রেনিং দেওয়া হবে।