(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৭ জুনের ঘটনা।)
কোনও কোনও বিরোধী দলের ভারতবিরোধী সমালোচনার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, এটা হচ্ছে তার সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইল। বাংলাদেশ ভারতের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে। বঙ্গবন্ধু মন্তব্য করেন, বাংলাদেশ সরকার সিমলা চুক্তিকে স্বাগত জানায়। পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে ভারত যে কিছু সমস্যার সমাধান করেছে, তা অভিনন্দনযোগ্য। কারণ, আমরা উপমহাদেশে শান্তি চাই। ভারতের একটি সাপ্তাহিকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু এসব কথা বলেন।
সাপ্তাহিকটির দিল্লির ব্যুরো চিফ মি. বাগবন ১৯৭৩ সালের ২৮ মে ঢাকায় এই সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ যা-ই হোক না কেন, বাংলাদেশে ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর বিচার হবে। এর নড়চড় হবে না। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওই সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এই বিচারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর দরখাস্তে বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্তে কোনও পরিবর্তন হবে না। যে আদালতে খুশি তিনি যেতে পারেন।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘তাঁর সরকার যে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার করছে, তা নয়। আমরা এটা এজন্যই করছি—যাতে বিশ্ববাসী এসব যুদ্ধাপরাধের কথা জানতে পারেন এবং ভবিষ্যৎ বংশধররাও যাতে এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।’
বন্দিরা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন
বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বন্দিদের অবাধ ও নিরপেক্ষ বিচার হবে, সেই বিষয়ে আপনারা আশ্বস্ত থাকতে পারেন। তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য পাকিস্তান ছাড়া বিশ্বের যেকোনও স্থান থেকে আইনজীবী নিয়োগ করতে দেওয়া হবে।’ বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল—পাকিস্তান যদি ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়ে দেয়, তাহলে যুদ্ধাপরাধের বিচারে পাকিস্তানি আইনজীবী নিয়োগের অনুমতি দেওয়া হবে কিনা। বঙ্গবন্ধু এর জবাবে বলেন, ‘পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিক বা না দিক, তাতে কিছু যায় আসে না। বাংলাদেশ টিকে রয়েছে এবং বিশ্বের সর্বাধিক দেশ তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আজকের প্রশ্ন হচ্ছে—বাংলাদেশ পাকিস্তানকে স্বীকার করে কী করে না। পাকিস্তানের যেটুকু আছে তার কী ভবিষ্যৎ আমি জানি না। আপনি কি তার অখণ্ডতা সম্পর্কে সন্দিহান প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘খোদা জানেন কী আছে পাকিস্তানের কপালে। আমার আশঙ্কা হয়, পাকিস্তান হয়তো আরও বেশি গোলযোগের সম্মুখীন হতে পারে। কারণ, তার শাসকদের মনোভাব ভালো না। যাই হোক, আমি পাকিস্তানের জনগণের কল্যাণ কামনা করি।’
পল্টন ময়দানে এক জনসভায় বক্তৃতাকালে আওয়ামী লীগ নেতারা স্বাধীনতার শত্রু প্রতিবিপ্লবী ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের প্রতিহত করার আহ্বান জানান। দেশ থেকে গুপ্তহত্যা, ডাকাতি, রাহাজানি ও দুর্নীতি নির্মূল করার জন্য তারা প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে ডাক দেন। এছাড়া আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে জনগণের সমস্যা সমাধানে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য তারা বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানান। ঐতিহাসিক ৭ জুন পালন উপলক্ষে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত এক জনসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।