বঙ্গবন্ধুর কাছে শিক্ষা কমিশনের প্রতিবেদন পেশ

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৮ জুনের ঘটনা।)

জাতীয় শিক্ষা কমিশনের অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে প্রাথমিক স্তরে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা এবং মাধ্যমিক স্তরে বৃত্তিমূলক ও কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষার সুপারিশ করা হয়। মোট জাতীয় ব্যয়ের কমপক্ষে শতকরা ৭ ভাগ অবিলম্বে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করার জন্য সুপারিশ করা হয়। ২১ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় শিক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কুদরত-ই-খুদা ১৯৭৩ সালের এই দিন (৮ জুন) সন্ধ্যায় সংসদ ভবনে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনটি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পেশ করেন। প্রতিবেদন পেশ করার সময় কমিশনের সদস্য ও সেক্রেটারিসহ অন্য সদস্যরা চেয়ারম্যানের সঙ্গে ছিলেন।

দৈনিক ইত্তেফাক, ৯ জুন ১৯৭৩কুদরত-ই-খুদা পরে সাংবাদিকদের  জানান, প্রতিবেদনে তারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কৃষিভিত্তিক ও কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন। প্রাথমিক স্তরে হস্তশিল্প ও এই জাতীয় অন্যান্য কাজ শেখানোর ওপরও জোর দেওয়া হবে বলে যে শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বিবেচনা করা হয়েছে, তাতে ছাত্রদের ব্যবহারিক জীবনে উজ্জ্বল সম্ভাবনা যেমন দেখা যাবে, তেমনই তা হবে আকর্ষণীয়। একইসঙ্গে  ছাত্ররা হবে স্বনির্ভর ও স্বাবলম্বী বলেও জানান তিনি।

ভুয়া রেশন কার্ড উদ্ধারের নির্দেশ

আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ঢাকা শহর থেকে সব ভুয়া রেশন কার্ড উদ্ধারের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খাদ্য দফতরকে নির্দেশ দেন। ঢাকা শহরে রেশন কার্ডের সংখ্যা শহরের মোট জনসংখ্যার অপেক্ষা কয়েক লাখ বেশি বলে জানার পরই প্রধানমন্ত্রী খাদ্য দফতরের প্রতি এই নির্দেশ দিয়েছেন বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। যেসব ব্যক্তির সুপারিশে এবং যেসব সরকারি কর্মচারীর রিপোর্টে ভুয়া রেশন কার্ড ইস্যু করা হয়েছে, সেসব ব্যক্তি ও সরকারি কর্মচারীর একটি তালিকা প্রস্তুত ও তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের ৯ জুন প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকার খবরনির্দেশ দেন। ঢাকায় খাদ্য দফতরের  উদ্ধার অভিযানের ফলাফল সন্তোষজনক না হলে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সান্ধ্য আইন জারি করে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়ে ভুয়া রেশন কার্ড উদ্ধার করা হবে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় সেনাবাহিনী তল্লাশি চালিয়ে ভুয়া রেশন কার্ড উদ্ধারের পাশাপাশি প্রত্যেক পরিবারকে নতুন রেশন কার্ড ইস্যু করবে। পরিবার প্রধানের  সার্টিফিকেটের বিবৃতি অনুযায়ী নতুন রেশন কার্ড ইস্যু করা হবে। ১৫ দিনের মধ্যে নতুন রেশন কার্ড করতে খাদ্য দফতরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শহীদ জব্বারের মায়ের জন্য বাড়ি

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে শহীদ জব্বারের  মায়ের জন্য ঢাকার তেজগাঁওয়ের তেজকুনিপাড়ায় একটি গৃহ নির্মাণ করা হয়। বর্তমান সংসদ সদস্য সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত কমিটি কাজটি সম্পাদন করছে। এই সংসদ সদস্য বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে এ বিষয়ে জানান, ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে যোগদান করে জব্বার শহীদ হওয়ায়, তার প্রতি সম্মান জানিয়ে ঘর তৈরি করতে প্রয়োজনীয় অর্থ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এমনকি এর বাইরেও প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে জব্বারের মায়ের জন্য আর্থিক সাহায্য মঞ্জুর করা হয়।

বাংলাদেশ অবজারভার, ৯ জুন ১৯৭৩পাকিস্তানি নাগরিকদের বিচার এড়ানো কঠিন হবে

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানি অসামরিক ব্যক্তিদের বিচারের জন্য সরকারের ওপর জনমতের চাপ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালিদের বিচার করা হবে বলে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো হুমকি দেন। মূলত এ কারণেই আটক পাকিস্তানিদের বিচারের জন্য জনগণ সরকারকে চাপ দিচ্ছে। এনার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এদিন জিল্লুর রহমান এই তথ্য প্রকাশ করেন।