বরখাস্ত ব্যক্তিদের চাকরি ফেরাতে যথেষ্ট যাচাই হয়েছে: বঙ্গবন্ধু

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১৫ জুনের ঘটনা।)

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের এই দিন (১৫ জুন) সংসদে বলেছেন, পাকিস্তানি আমলে সামরিক শাসক কর্তৃক অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়াকে কোনও সরকারি কর্মচারীর দেশপ্রেমের মাপকাঠি ধরে নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, ‘এটা দিয়ে তাদের দেশপ্রেম যাচাই করা যায় না।’ সরকারি দলের সদস্য ব্যারিস্টার আমির উল ইসলামের অতিরিক্ত প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু এ কথা বলেন।

ব্যারিস্টার আমির উল ইসলামের অতিরিক্ত প্রশ্নটি ছিল—‘ইয়াহিয়া খানের সময় চাকরি থেকে বরখাস্ত কর্মচারীদের মধ্যে যেসব বাঙালি পদস্থ অফিসার রয়েছেন, তাদের সকলকে স্বাধীনতার পর গঠিত বোর্ডের কাছে চাকরিতে নিয়োগের জন্য আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল কিনা।’ এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্ক্রিনিং বোর্ডের কাছে আবেদনের জন্য সকলকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তবে যারা আবেদন করেছেন এবং যাদের ব্যাপারে কিছু পাওয়া যায়নি, তাদেরকে সরকারের বিভিন্ন বিভাগে চাকরিতে নিয়োগ করা হয়েছে।’

দৈনিক বাংলা, ১৬ জুন ১৯৭৩তিনি বলেন, ‘কমিটি তদন্তের জন্য যথেষ্ট নয়, সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে অনেক কিছু। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় কোন সরকারি কর্মচারী কী ভূমিকা পালন করেছিল, তা অনেকেই জানে না।’

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য, এদিন সংসদে উত্থাপিত এতদ্বসংক্রান্ত প্রশ্নটি ছিল আতাউর রহমান খানের। তার অনুপস্থিতিতে স্বতন্ত্র সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। প্রশ্নটি ছিল, ‘পাকিস্তান আমলে যে ৩শ’ জন কর্মচারীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল, তাদের মধ্য থেকে কোনও বাঙালি কর্মচারীকে চাকরিতে নিয়োগ করা হয়েছে কিনা, তাদের নাম কী?’

প্রশ্নের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জানান যে তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক শাসক গোষ্ঠী যে ৩০৩ জন সরকারি অফিসারকে দরখাস্ত করেছিল, তাদের মধ্যে কয়েকজন বাঙালি অফিসারকে স্বাধীনতার জন্য তাদের ত্যাগ ও সমর্থনের কথা বিবেচনা করে পুনরায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালির দাবি সমর্থন করায় তৎকালীন সামরিক শাসনামলে অনেক বাঙালি অফিসারকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। স্বাধীনতার পর পুরনো রেকর্ড ও কর্মতৎপরতার ভিত্তিতে তাদের অনেককেই পুনরায় চাকরি দেওয়া হয়েছে।’

দৈনিক ইত্তেফাক, ১৬ জুন ১৯৭৩বাজেট পাসের আগেই কয়েকটি পণ্যের দাম বৃদ্ধি

বাজেটে কতিপয় পণ্যদ্রব্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক ও কর আরোপ করার প্রস্তাবের সুযোগ নিয়ে একদল অসাধু ব্যবসায়ী কয়েকটি বিশেষ পণ্যদ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাব চূড়ান্তভাবে গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত প্রস্তাবিত কর কার্যকর হতে পারে না। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সিগারেট। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, স্টার সিগারেট বিক্রি হচ্ছে প্রতি প্যাকেট এক টাকা ২০ পয়সা দরে, যা আগের দিন ছিল ৯০ পয়সা, আর কোম্পানির নির্ধারিত দাম হচ্ছে ৪০ পয়সা।

বৈদেশিক সাহায্য পাওয়া যাবে

অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেছেন, ‘আগামী অর্থবছরে প্রায় ৫২৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকার উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য প্রয়োজনীয় ৩৫২ কোটি টাকা বৈদেশিক সাহায্য পাওয়া যাবে।’ সাংবাদিক ও বার্তা  প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলছিলেন তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘৩৫২ কোটি টাকা বৈদেশিক সাহায্যের একটা অংশের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। বাকি অংশের জন্য আলোচনা চলছে।’ সব পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আগামী অর্থবছরের রাজস্ব বাজেটের উদ্বৃত্ত একশ’ কোটি ৭৬ লাখ টাকা উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।’

বাংলাদেশ অবজারভার, ১৬ জুন ১৯৭৩ভারত স্থায়ী শান্তি স্থাপনে আগ্রহী

ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী পুনরায় পাকিস্তানের সঙ্গে স্থায়ী শান্তি স্থাপনে তার আগ্রহের কথা উল্লেখ করেন। তার সম্মানে যুগোস্লাভ প্রধানমন্ত্রী জামাল বিজেডিক আয়োজিত এক ভোজসভায় ভাষণদানকালে শ্রীমতি গান্ধী বলেন, ‘উপমহাদেশের দেশগুলো প্রতিবেশীদের সঙ্গে সহমত বিশ্বাস, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার ভিত্তিতে স্থায়ী সম্পর্ক স্থাপনই ভারতের লক্ষ্য।’