ঢাকা-কায়রো যুক্ত ঘোষণা

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১৮ জুনের ঘটনা।)

কায়রো ও ঢাকায় উচ্চপদস্থ কূটনীতিকদের নেতৃত্বে মিশন স্থাপনের সিদ্ধান্তের কথা মিসর ও বাংলাদেশ সরকার জানায় ১৯৭৩ সালের এইদিনে। এ ব্যাপারে ঢাকা ও কায়রো থেকে একযোগে যুক্ত ঘোষণা প্রদান করা হয়। বাসস খবরটি দেয়।

উল্লেখ্য, এর কিছু দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশেষ দূত আতাউর রহমান বঙ্গবন্ধুর বাণী নিয়ে আরব দেশগুলো সফর করেন। তিনি কায়রোতে আনোয়ার সাদাতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

মিসরের প্রেসিডেন্ট সাবেক মন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। সেই সময় সাদাত শিগগিরই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। এর আগে মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান আল জাহিদ এবং প্রেসিডেন্ট সাদাতের বন্ধু আল-আহরাম পত্রিকার সম্পাদক হাসনাইন বাংলাদেশ সফর করে যান।

ভুয়া রেশন কার্ড উদ্ধার

খাদ্যমন্ত্রী ফনীভূষণ মজুমদার এই দিন বলেন, বঙ্গবন্ধুর আহ্বানের শহরের তিনটি রেশনিং সাব-এরিয়ায় ১২ দিনব্যাপী ভুয়া রেশন কার্ড উদ্ধার অভিযানের প্রথম দিনেই ঢাকা ৬, ৭ ও ৮ নম্বর সাব-এরিয়ায় অভিযান চালানো হয়। এক সরকারি পত্রে বলা হয়, খাদ্য দফতর গত সপ্তাহে প্রাথমিক অভিযান চালিয়ে এক লক্ষাধিক রেশন কার্ড উদ্ধার করেছে।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে এই অভিযান শুরু হয়। রেশন কার্ড উদ্ধারে ২৫০টি টিম কাজ করেছে।

দৈনিক ইত্থেফাক, ১৯ জুন ১৯৭৩উপমহাদেশের শান্তি নিয়ে ইন্দিরা গান্ধী

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে না পারলে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। যুগোস্লাভিয়ার গভর্নর জেনারেল রোনাল্ড মিচেসার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানার্থে যে ভোজসভার আয়োজন করেন, তাতে ভাষণদানকালে উপমহাদেশে শান্তি স্থাপনে ভারতীয় প্রচেষ্টা বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিমলা শীর্ষ সম্মেলনে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সব বিরোধ মীমাংসা করতে পাকিস্তান আগ্রহী বলে মনে হয়েছিল।

ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ এশীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলেই এই এলাকার পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব। এটা হবে বাস্তবতাকে স্বীকার করে নেওয়া এবং আমরা এই সিদ্ধান্তকে অভিনন্দিত করবো।’

যুগোস্লাভিয়া সফর শেষে বেলগ্রেড ত্যাগের প্রাক্কালে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলেন ইন্দিরা গান্ধী। যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দেওয়া সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, যুদ্ধবন্দি, বাংলাদেশে অবস্থানকারী পাকিস্তানি বেসামরিক নাগরিক ও পাকিস্তানে আটক বাঙালিদের বিষয় একইসঙ্গে মীমাংসা হতে পারে। ইন্দিরা বলেন, ভারত একদিনের জন্যেও যুদ্ধবন্দিদের আটকে রাখতে চায় না।

জোটনিরপেক্ষ নীতি প্রসঙ্গে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের জবাবে বলেন, জোট নিরপেক্ষ নীতির ব্যাপারে ভারত ও যুগোস্লাভিয়া ভিন্নমত পোষণ করে না। বিভিন্ন সমস্যার ব্যাপারে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি এ নীতি।

বাংলাদেশ অবজারভার, ১৯ জুন ১৯৭৩লন্ডনের পথে বিমানের বোয়িং

১৬৫ জন যাত্রী নিয়ে বাংলাদেশ বিমানের প্রথম বোয়িং আনুষ্ঠানিকভাবে এই দিন সকাল দশটায় লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করে ৯টা ২০ মিনিটে হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ উপলক্ষে বিমানবন্দরের ভিআইপি চত্বরে বিমানযাত্রার প্রাক্কালে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে নৌপরিবহনমন্ত্রী আতাউল গনি ওসমানী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল হোসেন, রাজস্বমন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, বাণিজ্যমন্ত্রী এইচ এম কামরুজ্জামান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মালেক উকিলসহ স্বদেশি-বিদেশি কূটনীতিক, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

করপোরেশন ও নাগরিকত্ব বিল পাস

জাতীয় সংসদে ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন ও বাংলাদেশ নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন বিল উপস্থাপন ও পাস করা হয়। মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সংসদে বিল উত্থাপন করেন। যেসব বাঙালি বর্তমানে চাকরিরত ও ব্যবসায়ের কাজে বিদেশে বসবাস করছে; বাংলাদেশ নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিলে তাদের বাংলাদেশের নাগরিকের অধিকার দেওয়া হয়েছে।

সংশোধনকল্পে আনীত বাংলাদেশ নাগরিকত্ব অস্থায়ী বিধান (সংশোধনী) বিলটি পেশ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মালেক উকিল।