অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ‘গিয়ার’ হলো বাজেট: পরিকল্পনামন্ত্রী

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ  মান্নান বলেছেন, অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ‘গিয়ার’ হলো বাজেট। হাই-গিয়ারে যাবে, নাকি লো-গিয়ারে যাবে, নাকি নিউট্রালি বসে থাকবে, তা ঠিক করার অধিকার সরকারের আছে। 

শুক্রবার (২৫ জুন) সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ কি বৈষম্যমূলক পুনরুদ্ধারের পথে?’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বাজেটের কিছু জায়গা ‘পলিশ’ করার প্রয়োজন আছে বলে মন্তব্য করেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন,  ‘কিছু এরিয়া পলিশ করার প্রয়োজন আছে। বাজেটের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—বিগত বছরগুলোতে যে মোমেন্টাম আমরা অর্জন করেছি, তা ধরে রাখা।’

পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা অর্থমন্ত্রীও সেরা বাজেট দিতে পারেন না উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতির যে মডেলে আমরা এগোচ্ছি, তাতে উই আর রাইট অন দ্য মিডল অব দ্য রাইট ট্র্যাক।’

এম এ মান্নান বলেন, ‘বিগত ১২ বছরে একটি চমৎকার পথরেখা দিয়ে আমরা এসেছি। আমাদের মূল দায়িত্ব ছিল বাঙালিকে ঘরে ফিরিয়ে আনা, আস্থা দিয়ে বসবাস করানো। পেটে-ভাতে, জলে-পানিতে, আলো-বাতাসে পৃথিবীর অন্যান্য মানুষের মতো ভদ্রভাবে বাস করার সে রকম একটি সুযোগ তৈরি করা। আমরা বোধহয় সে পথেই আছি। যদিও আমি স্বীকার করবো, যে গতিতে আমরা আশা করেছিলাম, সে গতিতে আমরা পারিনি।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অন্য রাজনৈতিক দলের মতো শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়, একটি রাজনৈতিক আন্দোলন। এর মূল উদ্দেশ্য মানুষের বিকাশ। আর বিকাশের অর্থ উন্নয়ন।’

সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)-এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। বক্তব্য রাখেন, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী,  সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন প্রমুখ।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। বাংলাদেশের ইকোনমি পিকুলিয়ার (অদ্ভুত) মডেলে রয়েছে।’ একটা গোষ্ঠীতান্ত্রিক শাসকগোষ্ঠী দেশকে পরিচালনা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুরো বাজেট অ্যালোকেশন গোষ্ঠীতান্ত্রিক হয়েছে। ১০ হাজার লোক কালো টাকা সাদা করার সুযোগ পেয়েছে। তাদের থেকে ১০ শতাংশ কর আদায় হয়েছে। আট লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে।’ বিগত বছরগুলোতে একটা টার্গেটেড কিছু লোকের সুযোগ-সুবিধার জন্য বাজেট করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘‘অতিরিক্ত কয়েকগুণ খরচ করে যে প্রকল্প করছে সেগুলো জিডিপিতে চলে আসছে। বর্তমানে বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক মডেল চালু আছে, তা বন্ধ হবে না। ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে তাদের সুবিধা দিতে হবে, এক থেকে দুই শতাংশ মানুষের হাতে সম্পদ পুঞ্জিভূত হয়ে আছে। যারা অর্থনীতি সচল করবে তাদের কাছে টাকা যাচ্ছে না। অপরদিকে মাথাপিছু আয় বেড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘মহেশ আর গফুরের’ কাছে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা কেউ বোধ করছে না। কারণ, ভোটের প্রয়োজন হয় না। বাংলাদেশের ইকোনমির অ্যালাইনমেন্ট করতে হবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে, জনগণের কথা মাথায় রেখে। ১০ হাজার লোক কালো টাকা সাদা করেছে। তাদের কি দুদক জিজ্ঞাসা করেছে? জিজ্ঞাসা করবে শুধু বিরোধীদের।’

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন,  ‘বাজেট প্রণয়নের আইনগত অধিকার সরকারের। কিন্তু যেহেতু বাজেটটি জনগণের জন্য, তাই তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। কিন্তু তারা তা করছেন বলে আমরা দেখিনি। বাজেট বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ার মধ্যেও কোনও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নেই।’

আমরা দেখেছি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। সেখানকার প্রস্তাবনাগুলোও বাজেটে প্রতিফলন হতে দেখা যায় না। বাজেট ঘোষণার পর অনেক গণতান্ত্রিক দেশে তাদের সংসদে সেটি নিয়ে প্রচুর তর্ক-বিতর্ক হয়।’