ত্রাণের সুষ্ঠু বিতরণের নিশ্চয়তা চান বঙ্গবন্ধু

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৩০ জুনের ঘটনা।)

বন্যাকবলিত জনসাধারণকে আশ্বাস দিয়ে ১৯৭৩ সালের এদিন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘তাদের জন্য খাদ্য-আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে। ত্রাণ সামগ্রীর অভাব হবে না। যেখানে থেকে হোক আমি ত্রাণের ব্যবস্থা করবো। কিন্তু আমি চাই, এই সামগ্রী বন্যার্তদের মধ্যে ঠিকভাবে বিতরণ করা হোক।’

বন্যায় ধ্বংসলীলা প্রত্যক্ষ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারযোগে পুরো এলাকা ঘুরে দেখেন। কয়েকঘণ্টা ধরে ময়মনসিংহ, পাবনা ও রংপুরের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। পরে নাটোরে ফিরে সাংবাদিকদের বলেন, উত্তরাঞ্চলীয় এলাকাগুলোর ক্ষেতের ফসল ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছে। প্রায় ৭০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।



প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকাপ্টার ময়মনসিংহ জেলার দেওয়ানগঞ্জ, পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ ও রংপুর জেলায় অবতরণ করে। বন্যা নিয়ন্ত্রণমন্ত্রী খোন্দকার মুশতাক আহমেদ, রেড ক্রিসেন্ট প্রধান গাজী গোলাম মোস্তফা ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। প্রতিকূল আবহাওয়ার সত্ত্বেও নারী ও শিশুসহ হাজার হাজার লোক প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে হাজির হন।

প্রধানমন্ত্রী বন্যা উপদ্রুত লোকজনের কষ্ট নিবারণের উদ্দেশ্যে অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আবেদন জানান। ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণের যত্ন নেওয়ার জন্য স্থানীয় নেতা ও সরকারি কর্মচারীদের নির্দেশ দেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বন্যার্তদের মধ্যে যথোপযুক্তভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক করে বলেন, ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের ব্যবস্থা ও আত্মসাতের চেষ্টা কঠোর হস্তে দমন করা হবে। বন্যা অবরুদ্ধদের মধ্যে যারা তাদের প্রিয় নেতাকে দেখতে আসেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে আলাপ করেন।

সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী বন্যায় ৫ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। অবশ্য বেসরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১৬। সরকারি হিসাব মতে উত্তরাঞ্চলীয় তিনটি জেলায় ভয়াবহ বন্যায় শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 ভোগ্যপণ্য সরকারিখাতে আনা হবে

জুলাই-ডিসেম্বর আমদানি মৌসুমে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য আমদানি ব্যবস্থা ও বিলাস দ্রব্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে। ১৯৭৩ সালের এদিন বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য ও বৈদেশিক বাণিজ্য দফতরের মন্ত্রী এএইচএম কামরুজ্জামান রেডিও-টেলিভিশনে চলতি আমদানি নীতি ঘোষণা করতে গিয়ে একথা বলেন। তিনি বলেন, অত্যাবশ্যকীয় শিল্পখাতগুলোকে শতকরা এক শ’ ভাগ লাইসেন্স ও ওষুধ শিল্পের শতকরা দেড় শ’ ভাগ লাইসেন্স দেওয়া হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী কামরুজ্জামান বলেন মোট আমদানির ৮৩ ভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমদানি করা হবে এবং বেসরকারি খাতকে মোট আমদানির ১৮ ভাগ আনয়নের সুযোগ দেওয়া হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি ও সরবরাহের ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও অন্যান্য উপাদানের মাধ্যমে কৃষি ও শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করাই আমদানির নীতির লক্ষ্য।



 বৃক্ষরোপণ পক্ষ জুলাই

১ জুলাই বৃক্ষরোপণ পক্ষ শুরু হওয়ার কথা। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু এই বৃক্ষরোপণ অভিযানকে সফল করে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। মিরপুর শহীদ স্মৃতিসৌধের পাদদেশে দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ অভিযানের উদ্বোধন করবেন পশুপালন ও ভূমি সংস্কারমন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত। এ অভিযানকে সফল করে তোলার জন্য সরকার এ বছর নামমাত্র মূল্যে ৩৩ লাখ চারাগাছ জনগণের মাঝে বিক্রয়ের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ১২১ ধরনের ফলগাছের চারা রয়েছে। উল্লেখ্য বাংলাদেশের আয়তনের শতকরা মাত্র ১০ ভাগ সরকার নিয়ন্ত্রিত বনভূমি। কিন্তু সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী একটি দেশের সার্বিক প্রয়োজন ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার স্বার্থে আয়তন হওয়া উচিত শতকরা ২৫ ভাগ।