করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে সাতদিনের কঠোর লকডাউন চলছে। শুক্রবার (২ জুলাই) লকডাউন কার্যকরে মাঠে রয়েছে পুলিশ, বিজিবির পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সকাল থেকে বিভিন্ন জেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র্যাব সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। এদিকে আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় ও সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন এলাকার সড়কে সাধারণ মানুষের চলাচল ছিল অনেক কম। তবে বাজারে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। তবে প্রয়োজন ছাড়া ও মাস্ক না পরে ঘর থকে বের হয়ে অনেককেই শাস্তি পেতে হয়েছে।
বাংলা ট্রিবিউনের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেলা শহরগুলোতে জরুরি পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়কে রিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাও দেখা গেছে হাতেগোনা কয়েকটা। তবে অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে যানবাহন চলাচল করছে।
ময়মনসিংহ: করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে জেলায় দ্বিতীয় দিনের মতো কঠোর লকডাউন চলছে। সকাল থেকেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্যাটদের নেতৃত্বে স্বশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা মহানগরীর মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে যানচালক ও অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষকে লকডাউন পালনে বাধ্য করছেন। যারা মানছেন না তাদেরকে জমিরানা করতেও দেখা গেছে। বিশেষ করে মাস্ক ছাড়া বের হলে আইনি ব্যবস্থার মধ্যে পড়ছেন নগরীর বাসিন্দারা। লকডাউনের কারণে গণপরিবহণ বন্ধ আছে। নগরীতে পণ্যবাহী ট্রাক ও ছোট যান চলতে দেখা গেছে। দোকানপাট বন্ধ ছিল, তবে কাঁচাবাজার, ওষুধ ও খাবারের দোকানপাট খোলা দেখা গেছে।
জেলা প্রশাসক মো. এনামুল হক জানান, লকডাউন সফল করতে জেলায় পুলিশের ১৬টি, র্যাবের দুটি, সেনাবাহিনীর ১০টি , বিজিবির চারটি, এপিবিএনের দুটি টিম কাজ করছে। প্রতিটি টিমের সঙ্গে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্যাট দায়িত্ব পালন করছেন। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জরিমানা করা হচ্ছে। এ ধরনের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
সিলেট: সিলেটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে লকডাউনের দ্বিতীয় দিন চলছে। সকাল থেকে সিলেট মহানগরীসহ উপজেলাগুলোতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের একাধিক টিম। একইসঙ্গে সিলেটের প্রবেশদ্বারগুলোতে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এসময় পুলিশ মানুষ ও লকডাউনে বের হওয়া গাড়ি দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিতরা। সদুত্তর দিলে গন্তব্যে যেতে পারছেন, অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থার নেওয়ার পাশাপাশি তাদের ঘরে ফিরিয়ে দিতে দেখা গেছে। এছাড়া মাস্ক ছাড়া কাউকে সড়কে পেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এদিকে সকালে সিলেটের সড়কে লোকজন একেবারেই কম দেখা গেছে। লকডাউনের পাশাপাশি বৃষ্টির কারণে অনেকেই প্রয়োজন থাকলেও ঘর থেকে বের হননি।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক দল লকডাউন বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। টহল পুলিশের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। একইসঙ্গে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে মাঠে কাজ করে যাচ্ছে একাধিক টিম। কেউ লকডাউন না মেনে ঘরের বাইরে এলে তার বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে জরিমানার পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা।
জানা গেছে, সিলেটের প্রশাসনের উদ্যোগে যথাযথভাবে লকডাউন পালন ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিতে বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী সিলেট মহানগর ও সব উপজেলায় ৩৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একযোগে মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করেন। মোবাইলকোর্ট পরিচালনাকালে ১৭২টি মামলা ও দুই লাখ ৬০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া লকডাউনে বিধিনিষেধ অমান্য করায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সিলেট মহানগর পুলিশ নগরীর বিভিন্ন স্থানে এবং সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর উপস্থিতিতে সর্বমোট ২৫ জনকে ১১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এসময় পুলিশের অভিযানে ৯টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৩০টি মোটরসাইকেল, দুটি প্রাইভেট কার ও অন্যান্য সাতটি মামলাসহ সর্বমোট ৪৮টি মামলা করা হয়। সিএনজিচালিত অটোরিকশা ১৮টি, মোটরসাইকেল ৫৯টি, প্রাইভেট কার তিনটি, অন্যান্য ২৪টিসহ মোট ১০৪টি গাড়ি আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান জানান, লকডাউন বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন তারা। নগরীর ২০টি স্পটে চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া মানুষকে সচেতন করতে চলছে মাইকিং।
জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার জানিয়েছেন, লকডাউন বাস্তবায়নে ২০ জন ম্যাজিস্ট্রেট বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ নগরবাসীকে সচেতন করতে কাজ করছেন।
চট্টগ্রাম: করোনা সংক্রমণরোধে দেওয়া লকডাউনের দ্বিতীয় দিন মাঠে তৎপর রয়েছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। সকাল থেকে পাঁচলাইশ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাঈমা ইসলাম। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, অন্য সময়ের তুলনায় এবার লকডাউন নির্দেশনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নগরবাসীকে অনেক বেশি সচেতন দেখা যাচ্ছে। সকাল থেকে এই পর্যন্ত পাঁচলাইশ থানার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। সড়কে কয়েকটি সিএনজি, প্রাইভেটকার চলছে। তবে এদের প্রত্যেকেই সুনির্দিষ্ট প্রয়োজনে বের হয়েছেন। দোকান-পাটও খুব একটা খোলা নেই। সাধারণ মানুষ যারা বের হচ্ছেন তারা মাস্ক পরেই বের হচ্ছেন। এরপরও যারা নির্দেশনা মানছেন না জরিমানা করা হচ্ছে। সকাল থেকে ৭-৮জনকে জরিমানা করার তথ্য জানান তিনি।
এদিকে নগরীর নতুন ব্রিজ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এনামুল হাসান। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, সড়কে তেমন যানবাহন নেই। অনেকে নানা অজুহাতে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হচ্ছেন। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। সন্তোষজনক উত্তর না দিতে পারলে তাদেরকে জরিমানা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৯টি মোটরসাইকেলকে জরিমানা করা হয়েছে। মিথ্যা কথা বলে ভাড়ায় ট্রাক চালানোর দায়ে একটি ট্রাক টো করা হয়েছে। এছাড়া মাস্ক পরিধান না করায় তিন জনকে জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
খুলশি আর বায়েজিদ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গালিব চৌধুরী। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, সকালে কর্ণফুলী কমপ্লেক্স পরিদর্শনে যাই। সেখানে গিয়ে দেখেছি মানুষ সচেতন। প্রায় সবাই মাস্ক পরিধান করছেন। কিন্তু বায়েজিদ বোস্তামির বাংলাবাজার এলাকায় গিয়ে দেখি লোকজন সচেতন না। বস্তি এলাকা হওয়ায় এখানে মানুষজনের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা কম। অনেকেই মাস্ক ছাড়াই ঘরের বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মাস্ক না পরায় সকাল থেকে আট জনকে জরিমানা করা হয়েছে।
খুলনা জেলা প্রশাসক মো মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, খুলনায় ১০ প্লাটুন সেনা সদস্য টহলে রয়েছে। তারা মহানগরীসহ প্রতিটি উপজেলায় টহল দিচ্ছে। পাশাপাশি ১ প্লাটুন বিজিবিও মহানগরীতে টহলে রয়েছে। পুলিশসহ অন্য বাহিনীর সদস্যরাও কার্যকর দায়িত্ব পালন করছেন।
রিকশাচালক কেরামত আলী বলেন, সকালে ৪০ টাকা ভাড়ায় একজন যাত্রী নিয়ে খুলনা থেকে দৌলতপুর যাই। কিন্তু ফিরতে হয়েছে খালি রিকশা নিয়ে।
রিকশা চালক হাসমত আলী বলেন, লকডাউনের মধ্যে এখন রিকশা চালাতে পুলিশ বাঁধা দিচ্ছে না। তবে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। লকডাউনে প্রশাসন শক্ত হওয়ার কারণে মানুষ বের হচ্ছে না। আর যাত্রী না পেলে রিকশা নিয়ে শুধু শুধু ঘুরতে হচ্ছে।
জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া টুটপারার হাসিনা বেগম বলেন, মেয়ের শরীর হঠাৎ খারাপ করছে। তাই মেডিক্যালে যাওয়ার জন্য বের হতে হয়েছে।
নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সরকারি-বেসরকারি জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠানের গাড়ি, পণ্যবাহী বাহন ছাড়া হাতে গোনা কিছু রিকশা চলতে দেখা গেছে। নগরীর প্রায় প্রতিটি মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। চেকপোস্টে পুলিশসহ আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানে চলাচলকারী রিকশা ও হেঁটে চলা মানুষদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে বের হয়েছেন প্রমাণে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতেও দেখা গেছে। আর সকালের দিকে নগরীতে সেনাবাহিনী ও বিজিবির টহল দেখা গেছে। কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশের পাশাপাশি দুই প্লাটুন সেনাবাহিনী ও চার প্লাটুন বিজিবি মাঠে টহলে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
রাজশাহী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শরিফুল হক জানান, লকডাউনে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। নাটোর কাদিরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট থেকে সোনাবাহিনী এসে রাজশাহীতে লকডাউনের দায়িত্বপালন করছেন। জেলা প্রশাসনের প্রায় ১০ টি ভ্রাম্যমাণ টিম মাঠে কাজ করছে। নির্দেশনা অমান্য করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজ করছেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ও অংশগ্রহণে সুন্দরভাবে রাজশাহীতে লকডাউন পালিত হচ্ছে।
গাজীপুর: করোনাভাইরাস ঊর্ধ্বগতির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেওয়া লকডাউনের দ্বিতীয়দিনে বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সকাল থেকেই শিল্প নগরী গাজীপুরে তৎপর ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনের ওপর চলছে নজরদারি। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকার অলিগলিতেও চলছে পুলিশের টহল। পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের পাশাপাশি গাজীপুরে মোতায়েন করা হয়েছে ছয় প্লাটুন সেনা ও বিজিবি সদস্য। সড়কে মানুষ ও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে গাজীপুর জেলা ও মহানগরে ৫০টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। দুপুরে গাজীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম তরিকুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ডিসি তরিকুল ইসলাম জানান, লকডাউনে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং জেলা পুলিশ ৫০টি পয়েন্টে কাজ করছেন। এরম মধ্যে জেলা প্রশাসন ১৮টি চেক পয়েন্টে এবং জেলা পুলিশ ও মেট্রোপলিটন আরও ৩২টি চেকপোস্টে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, তিন প্লাটুন সেনাসদস্য, তিন প্লাটুন বিজিবি ও পর্যাপ্ত সংখ্যক র্যাব ও পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এসব পয়েন্টে লকডাউনে তারা অন-অনুমোদিত যানবাহন, দোকান-পাট খোলা নিয়ন্ত্রণ এবং অনুমোদিত গাড়ির চালক, যাত্রী বা শ্রমিকদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতে কাজ করছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৮টি টিমে ১৮ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান ডিসি।
এদিকে, সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পায়ে হেঁটে এবং রিকশায় যাতায়াত করেছে বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কর্মস্থলে যেতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় শ্রমিক আনা-নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলেও অনেকেই সেটি মানছেন না।
অন্যদিকে আগের লকডাউনগুলোতে সড়কে সিএনজি, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা গেলেও এবার গাজীপুরের সড়ক-মহাসড়কে দেখা যায়নি এসব যানবাহন। ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশা বন্ধ থাকায় সড়কে রিকশার পরিমাণ ছিল কম।
টঙ্গীর বিসিক এলাকার বিভিন্ন পোশাক কারখানা ঘুরে দেখা যায়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানায় যোগ দিচ্ছেন শ্রমিকরা। কারখানায় ঢুকতে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে কারখানায় প্রবেশ করানো হচ্ছে। তবে ছোট ছোট কারখানাগুলোতে এসব স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) উপ-কমিশনার (অপরাধ-দক্ষিণ) মোহাম্মদ ইলতুৎ মিশ জানান, লকডাউনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পণ্যবাহী গাড়ি ছাড়া অন্য কোনও গাড়ি চলতে দেওয়া হচ্ছে না। বিভিন্ন অলিগলিতে পুলিশের টহল টিম নজরদারি করছে। জরুরি প্রয়োজনে যারা ঘর থেকে বের হচ্ছে তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ: লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে নারায়ণগঞ্জে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নগরীর চাষাঢ়াসহ অন্যান্য চেকপোস্টগুলোতে সকাল থেকে ব্যাপক তৎপরতা দেখা গেছে। পণ্যবাহী ও জরুরি সেবার কাজে নিয়োজিত যানবাহন ছাড়া লকডাউনের আওতায় নিষিদ্ধ কোনও যানবাহন চলাচল করতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া মাস্ক ব্যবহার ছাড়া কিংবা বিনা প্রয়োজনে মানুষ ঘরের বাইরে বের হলেও চেকপোস্টগুলোতে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হচ্ছে। অনেকে জরিমানাও গুনছেন।
জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও আনসার ব্যাটালিয়ানসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনসহ টহল অব্যাহত রেখেছে।
একই চিত্র দেখা গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে। সকাল থেকে মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি কঠোর দায়িত্ব পালন করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে ছয়টি চেকপোষ্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। জরুরি প্রয়জনে বা অন্য যেকোনও কারণে রাস্তায় বের হলেই পড়তে হচ্ছে জেরার মুখে। যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারলে আটকে দেওয়া হচ্ছে, মামলা ও জরিমানার মুখেও পড়তে হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাসান বিন আলী জানান, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সকাল থেকেই লকডাউন শতভাগ বাস্তবায়নের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বিনা কারণে বা মাস্ক ছাড়া কেউ রাস্তায় বের হলে বা ভ্রাম্যমাণ আদালতের নজরে আসলেই জরিমানা করা হচ্ছে। তিনি সবাইকে আগামী ছয়দিন বাড়িতে থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যাতে ছড়িয়ে না পড়ে এবং আক্রান্তের সংখ্যা যাতে না বাড়ে এ জন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
মুন্সীগঞ্জ: এদিকে লকডাউন ও বৃষ্টির কারণে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ঘাট একদম ফাঁকা ছিল। ঘাটে কোনও যাত্রী নেই। যানবাহনও বেশ কম। শুক্রবার (২ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একই অবস্থা দেখা গেছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের উপমহাব্যবস্থাপক (এজিএম) শফিকুল ইসলাম জানান, লকডাউনের কারণে ঘাটে কোনও যাত্রী নেই। অল্প কিছু পণ্যবাহী যান আছে। ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। মাওয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল কবীর জানান, ঘাট একদম ফাঁকা। ফেরিগুলোকে বরং যানের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। কিছু পণ্যবাহী ট্রাক ছাড়া সব যান রানিং আছে।
মুন্সীগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নোমান হোসেন বলেন, লকডাউন বাস্তবায়নে তিন প্লাটুন সেনাবাহিনী, দুই প্লাটুন বিজিবি ও এক প্লাটুন র্যাব সদস্য সড়কে টহল দিচ্ছে। এছাড়া, পুলিশের চেকপোস্টও রয়েছে। বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতও কাজ করছে বলে জানান তিনি।