আটক বাঙালিদের ফেরাতে বিমানের ব্যবস্থা

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৩ জুলাইয়ের ঘটনা।)

পাকিস্তান থেকে আটক বাঙালিদের প্রথম দলকে ফিরিয়ে আনার জন্য জাতিসংঘ একটি বিমান ভাড়া করার ব্যবস্থা করেছে। এই দিন বলা হয় যে বাংলাদেশ ও ভারত গত বছর থেকে যে মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এটা তারই ফলশ্রুতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গত ২৯ মার্চ জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের কাছে যে পত্র দিয়েছিলেন তারই পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ বাঙালিদের জন্য এই ব্যবস্থা করে। বাঙালিদের নিয়ে জাতিসংঘের চার্টার্ড বিমান ঢাকায় অবতরণের জন্য বাংলাদেশ সরকার নীতিগতভাবে স্বীকৃতি দেয়। কূটনৈতিক মহল থেকে বলা হয় যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের সিদ্ধান্তের অনুকূল সাড়াদানে মানবীয় সমস্যা সমাধানের পথে সক্রিয় অগ্রগতি হয়। তবে জাতিসংঘের বিমানটি কবে নাগাদ বাঙালিদের প্রথম দলকে নিয়ে আসবে এবং তাদের সংখ্যা কত হবে তা জানা যায়নি।

দুই বছরের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব
কৃষিমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ বলেন যে, সম্মিলিত প্রচেষ্টার বলে বাজেটে উল্লেখিত পাঁচ বছরের স্থলে দুই বছরে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা সম্ভব। তিনি এদিন জাতীয় সংসদে ১৯৭৩-৭৪ সালের বাজেটের ওপর আলোচনাকালে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অর্থনৈতিক মুক্তির আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

সংসদ অধিবেশন শুরু হলে কৃষিমন্ত্রী সর্বপ্রথম বাজেটের ওপর আলোচনা শুরু করেন। দুপুরে অধিবেশন মুলতবি হওয়া পর্যন্ত অপর দুইজন সংসদ সদস্য আব্দুল মোমিন তালুকদার ও এমাজউদ্দিন প্রামাণিক আলোচনায় অংশ নেন। বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনার পূর্বে মইনুদ্দিন আহমেদ একটি জরুরি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মালেক উকিলের জবাব প্রদান করেন। এছাড়া আব্দুল মোমিন তালুকদারের একটি বিশেষ অধিকার প্রস্তাব সম্পর্কে রুলিং দেন।

মুজিববর্ষ-৩-জুলাই-3

পিন্ডির চিঠির জবাবে শরণ সিং
ভারত চলতি মাসের শেষ দিকে দিল্লিতে অফিসার পর্যায়ে আলোচনা অনুষ্ঠানের জন্য পাকিস্তানের নিকট প্রস্তাব করে বলে জানা যায়। ২৩ জুন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজিজ আহমেদ ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং-এর কাছে লেখা এক পত্রে উপমহাদেশের মানবিক সমস্যাগুলো সম্পর্কে আলোচনার প্রস্তাব দেন। এজন্য পাকিস্তানের একটি প্রতিনিধি দলও পাঠানোর জন্য চিঠিতে লিখেছিলেন পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তার প্রত্যুত্তরে শরণ সিং দিল্লিতে আলোচনার প্রস্তাব করেছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার এইচ জে এলেন এই দিন সকালে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর নিজ কক্ষে সাক্ষাৎ করেন এবং কিছু সময় অতিবাহিত করেন।

মুজিববর্ষ-৩-জুলাই-2

বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
দেশের প্রধান প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি অব্যাহতভাবে হ্রাস পেতে শুরু করায় সামগ্রিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সিরাজগঞ্জ যমুনা, বাহাদুরাবাদ ঘাটে ব্রহ্মপুত্র এবং গোয়ালন্দের পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে যায়। নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যায়, ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও আশঙ্কাজনক নয় বলে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ তথ্যে জানানো হয়। সিলেটের সুরমা, রংপুরের তিস্তা নদীতেও পানি কমতে শুরু করে।

বাণিজ্য চুক্তি সম্পর্কে মতৈক্য
বাংলাদেশ ও ভারত তিন বছর মেয়াদি নতুন বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে পূর্ণ ঐকমত্যে পৌঁছায়। একদিন পরে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে জানানো হয়। ভারত ও বাংলাদেশের সরকারি মুখপাত্র জানান যে, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন বাণিজ্য চুক্তি কার্যকর হবে। বর্তমান বাণিজ্য চুক্তির মেয়াদ ২৭ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। বর্তমান সীমিত পরিসরে চুক্তি অনুসারে ২২৫ কোটি টাকার পণ্য আমদানি রফতানি করতে পারে না। চুক্তি অনুসারে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। খবরে বলা হয়েছে, ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় ও বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী প্রথম বৈঠকে মিলিত হন এবং রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে আলোচনা করে তারা সিদ্ধান্তে পৌঁছান।