আটক বাংলাদেশিদের করাচিতে জড়ো করা হবে

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৫ জুলাইয়ের  ঘটনা।)

পাকিস্তানের বিভিন্ন শহর এলাকা থেকে বাঙালিদের করাচিতে একটি মাত্র কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করার জন্য পাকিস্তান সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাঙালিরা যাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে না পারে, সে জন্য এ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ১৯৭৩ সালের এ দিনের দৈনিক পত্রিকায় এ খবর প্রকাশিত হয়। মোট বাঙালি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় এক লাখ বাঙালিকে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহর থেকে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে করাচিতে নিয়ে আসা হবে বলে প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়। এদিকে পাকিস্তানে আটক বাঙালিদের বিষয়ে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, যুদ্ধবন্দিদের ফেরত পাঠানো ও বাংলাদেশে আটক অবাঙালিদের ফেরত নেওয়ার প্রশ্নে ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক আলোচনার প্রস্তুতি চলছিল। এ বিষয়ে বাংলাদেশের মনোভাব জানতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ ‍দূত বাংলাদেশ সফরে আসার কথা।

ঢাকা-দিল্লি নতুন বাণিজ্য চুক্তি

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিন বছর মেয়াদি একটি সুষম বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদিত হয়। এদিন ঢাকায় এই চুক্তি সই হয়েছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, প্রথম বছরে বাংলাদেশ এবং ভারত  ৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকা মূল্যের পণ্য দ্রব্য লেনদেন করবে। চলতি বছরের (১৯৭৩) ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে এই চুক্তি কার্যকর হবে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ভারত প্রথম বছর বাংলাদেশ থেকে ২০ কোটি টাকা মূল্যের কাঁচা পাট নেবে। এই দিন ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবরন আনন্দঘন পরিবেশে বাণিজ্যমন্ত্রী এইচ এম কামরুজ্জামান বাংলাদেশের পক্ষে এবং ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী ডিপি চট্টোপাধ্যায় তার দেশের পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে এই চুক্তিতে সই করেন। অনুষ্ঠানে উভয় দেশের বাণিজ্য সচিব এবং বৈদেশিক বাণিজ্য সংক্রান্ত দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মচারী ছাড়াও ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সুবিমল দত্ত এবং বহু সংখ্যক দেশি-বিদেশি সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।

দৈনিক ইত্তেফাক, ৬ জুলাই ১৯৭৩বঙ্গবন্ধুর যুগোস্লাভিয়া সফর ২৬ জুলাই

যুগোস্লাভিয়া সরকারের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সরকারিভাবে সে দেশে সফর করবেন। এই দিন এক সরকারি প্রেসনোটে বলা হয় যে, সফরকালে তিনি যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট জোসেফ টিটো ও প্রধানমন্ত্রী বিজেদিকের সঙ্গে উভয় দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন।

বাজেট সমাজতন্ত্রের পথ প্রশস্ত করবে

এই দিন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের বাজেট গণতান্ত্রিক উপায়ে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের পরিবেশ সৃষ্টি করবে।’ বাজেটে উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে সর্বত্রভাবে চেষ্টা করার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। এ দিন জাতীয় সংসদে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা সভায় বক্তৃতাকালে অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এই বাজেট সমাজতান্ত্রিক বাজেট না। বাজেট সমাজতন্ত্রে উত্তরণের পথ সুগম করবে মাত্র।’ এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বাজেটের ওপর সংসদে সাত দিন ধরে সাধারণ আলোচনা হয়। এই অধিবেশনে ৭২ জন সংসদ সদস্য  আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া সংসদের বাইরেও বিভিন্ন মহল ও সংবাদপত্রে বাজেট সম্পর্কে সমালোচনার জায়গা রাখা হয়। পরিষদের বাইরে ও ভেতরে এই আলোচনাকে অর্থমন্ত্রী উৎসাহব্যঞ্জক লক্ষণ বলে অবহিত করেন। দেশের বর্তমান অর্থনীতি সম্পর্কে তাজউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা বর্তমানে জটিল। আমরা রয়েছি ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির সংযোগস্থলে।’

ডেইলি অবজারভার, ৬ জুলাই ১৯৭৩ঢাকা-আলজিয়ার্স যুক্ত ইশতেহার

আলজেরিয় প্রেসিডেন্ট  বুমেদিনের বিশেষ দূত মোহাম্মদ ইয়াজিদের তিন দিনব্যাপী ঢাকা সফর শেষে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক যুক্ত ইশতেহারে বলা হয়, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধান সম্পর্কে বাংলাদেশ ও আলজেরিয়ার অভিমতের মধ্যে নিবিড় সাদৃশ্য রয়েছে। ঢাকায় তিন দিনের সফর শেষে ইয়াজিদ স্বদেশের পথে নয়াদিল্লি রওনা হয়ে গেছেন। ইয়াজিদের ঢাকা ত্যাগের পর পরই যুক্ত ইশতেহার প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, আলজেরিয় প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত ইয়াজিদ বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে বাংলাদেশ- আলজেরিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা করেন। উভয় দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য যে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তাতে উভয়পক্ষ সন্তুষ্টি প্রকাশ করে।