যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রশ্নে সুস্পষ্ট অবস্থান বাংলাদেশের

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন যুদ্ধাপরাধের বিচারে বাংলাদেশ সরকারের দৃঢ় সংকল্পের কথা আবারও উল্লেখ করেন। দ্ব্যর্থহীনভাবে তিনি বলেন যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পর্কে আমাদের পূর্বঘোষিত নীতির কোনও পরিবর্তন আসবে না এবং আমরা কোনওভাবেই পিছু হটছি না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ দূত পি এন হাকসারে সঙ্গে বৈঠকের পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল হোসেন এ কথা ঘোষণা করেন।

উপমহাদেশের মানবিক সমস্যাগুলি সমাধানের উদ্দেশ্যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রস্তাবিত অফিসার পর্যায়ের বৈঠকের আলোচনার সূত্র ধরে তিনি ঢাকায় এসেছেন। এই খবরে বলা হয় প্রেসিডেন্টের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গে বাংলাদেশের সংকল্পের কথা উল্লেখ করেন তিনি। এ খবরে আরও উল্লেখ করে তিনি বলেন আসন্ন ভারত-পাকিস্তান আলোচনা বিশেষভাবে ভারত বাংলাদেশ যুক্ত ঘোষণার ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন পাকিস্তানের আজিজ আহমেদ একথা জানেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে এক ঘণ্টা ৫০ মিনিট দীর্ঘ আলোচনার পর সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ তথ্য প্রকাশ করেন। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের সঙ্গে তার আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে কামাল হোসেন বলেন ১৭ এপ্রিল ঘোষিত ভারত বাংলাদেশ যুক্ত ঘোষণার পর এ বিষয়ে যে অগ্রগতি হয়েছে তারা তাৎপর্য রচনা করেছে। ভারত-পাকিস্তান আসন্ন বৈঠক সম্পর্কে মতপ্রকাশের অনুরোধ করা হলে কামাল হোসেন বলেন ভারত এবং বাংলাদেশ আমরা উভয়েই কামনা করি ভারত-বাংলাদেশ যুক্ত বিবৃতিতে উপমহাদেশের মানবিক সমস্যাবলীর সমাধান হোক। আমরা দুটি দেশই মনে করি যে আসন্ন ভারত-পাকিস্তান বৈঠক উপমহাদেশের মানবিক সমস্যাবলীর সমাধান এর সহায়ক হতে পারে। কামাল হোসেন বলেন আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে ৬ তারিখে তারা আবার আলোচনায় বসবেন।

ভুট্টোর হুমকি

বৈঠকে তারিখ ও স্থান ঠিক না করা হলেও আলোচনায় পথে এটা কোনও বাধা হবে না। প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর যুক্তরাষ্ট্র সফরের পর এই মাসের শেষ দিকে অথবা আগস্ট মাসের প্রথম দিকে এ বৈঠক হবে বলে আশা করা যায়। রাওয়ালপিন্ডি থেকে প্রকাশিত খবরে বলা হয় বাংলাদেশে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের পরিকল্পনা রিভিউ না করা পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবেন না। একজন সাংবাদিকের সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। যুদ্ধাপরাধী সম্পর্কে একটি পথই খোলা আছে। সেটা হলো বাংলাদেশে যাদের বিচার করতে চাচ্ছে তাদের বিচার পাকিস্তানে করা। অবাঙালি গ্রহণ সম্পর্কে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট বলেন যে মানবিক কারণে পাকিস্তান নীতিগতভাবে বাংলাদেশে বসবাসকারী কিছুসংখ্যক অবাঙালি গ্রহণ করতে রাজি আছে। কিন্তু আলাপ-আলোচনা করে তাদের সংখ্যা ঠিক করতে হবে। পিটিআইয়ের খবরে প্রকাশ পাকিস্তান পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র বলেন যে ভারতের সাথে অফিসার পর্যায়ে আলোচনার ব্যবস্থা এখন শেষ হয়েছে এবং পরস্পরের সুবিধামতো বৈঠকের তারিখ ও স্থান নির্ধারণ করা হবে। মুখপাত্রের বরাত দিয়ে রেডিও পাকিস্তান খবরে বলা হয় এবার বৈঠক পাকিস্তানে হওয়া উচিত কেননা এর আগের বৈঠক দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভারতের সর্বশেষ পত্রের জবাব কয়েকদিনের মধ্যে পাঠানো হবে। রাওয়ালপিন্ডি থেকে একটি প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে আসন্ন ভারত-পাকিস্তান বৈঠক সম্পর্কে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজিজ আহমেদ ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর শরণ সিং এর জবাব দিয়েছেন। তবে পাকিস্তান ১৬জুলাই বৈঠক অনুষ্ঠানের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে কিনা তা জানানো হয়নি।

গুপ্তহত্যা সংখ্যা ২০৩৫

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মালেক উকিল জাতীয় সংসদে জানান যে ১৯৭২ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ১৯৭৩ সালের ২০এপ্রিল পর্যন্ত দেশে ২০৩৫ গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এদিন শুক্রবার পরিষদে আব্দুস সাত্তার প্রশ্নের লিখিত জবাবে বলেন এ ঘটনায় এ পর্যন্ত হাজার ১৯জন অভিযুক্তদের বিচার হয়েছে এবং ৪৪৩ জন বিচারাধীন। অধ্যক্ষ আব্দুর রহমানকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জানান ১৮৭২ সালের জানুয়ারি থেকে ৭৩ এর জুন পর্যন্ত সময়ে দুষ্কৃতিকারীদের হাতে ৪৯২৫ জন প্রাণ হারিয়েছে। একই সময়ে ৩৭৭ জন নারীকে অপহরণ করা হয়েছে এবং ১৯০ নারীকে অসম্মান করা হয়েছে।