(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৭ জুলাইয়ের ঘটনা।)
উপমহাদেশের মানবিক সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্দেশ্যে প্রস্তাবিত ভারত-পাকিস্তানের কর্মকর্তা পর্যায়ের আলোচনার বিষয়ে ভারত ঘোষিত নীতির প্রতি বাংলাদেশ ও ভারত ঐক্যমত্যে পৌঁছেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ দূত পিএন হাকসার এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনের মধ্যে তিন দফা দীর্ঘ আলোচনার পর এদিন (৭ জুলাই) দুই দেশের মধ্যে এ কথা ঘোষণা করা হয়। তৃতীয় দফা আলোচনা শেষে এই দিন ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘গত ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ-ভারত যুক্ত ঘোষণার পর এ ব্যাপারে সামগ্রিক অগ্রগতি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি এবং এ সম্পর্কে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি।’ হাকসার বলেন, ‘‘পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের আসন্ন আলোচনায় এই ‘ঢাকা আলোচনা’ আমাদের আলোচনার ভিত্তি হবে। উপমহাদেশের সমস্যাবলী সংক্রান্ত সব বিষয় নিয়েই আমরা আলোচনা করেছি। এর মধ্যে যদি কোনও কিছু বাকি থাকে, তবে তা নিয়ে আবারও আমরা আলোচনা করবো।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল হোসেনের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত যুক্ত ঘোষণার আলোকে বিভিন্ন সমস্যা সংক্রান্ত বহু বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি এবং তা খুবই ফলপ্রসূ হয়েছে।’
সংবাদ সংস্থা এনার খবরে বলা হয়, শুক্রবার ঢাকায় আসার পর ওই দিন তাদের (পিএন হাসকার ও কামাল হোসেন) মধ্যে একঘণ্টা ৫০ মিনিট প্রথম দফা আলোচনা হয়। তারপর শনিবার আবারও তারা আলোচনায় মিলিত হন এবং উভয় পক্ষের মধ্যে দ্বিতীয় দফা বৈঠক শুরু হয়। বেলা তিনটায় কামাল হোসেন বলেন, উপমহাদেশের সমস্যাবলী ছাড়াও তারা পরবর্তী অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদিন সন্ধ্যায় কারিগরি মিলনায়তনে আয়োজিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্যামা নৃত্যনাট্য অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যার্থে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ভুট্টোর মতিগতি সম্পর্কে পাশ্চাত্যমহলের সংশয়
এনার বিশেষ প্রতিনিধি জানাচ্ছেন যে, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রশ্নে ভুট্টো পাশ্চাত্যে যা বলছেন, এটা আরেকটি কৌশল এবং সমস্যা সমাধানের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির প্রয়াস। পাশ্চাত্যের রাজনৈতিক মহলে ভুট্টোর উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রাক্কালে তিনি কূটনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যই উপমহাদেশ সম্পর্কে কথাবার্তা বলছেন, বলেই তাদের ধারণা। পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, ভুট্টো বিশ্ব জনমতকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ায় শর্ত এবং এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সঙ্গে শাসনতান্ত্রিক ও আইনানুগ জটিলতার বিষয়টি এড়িয়ে চলেছেন। তিনি (ভুট্টো) এখন আরও অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর কষাকষি করছেন।
কারও বশ্যতা শিকার নয়
অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন যে, যখন আমরা কারও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি, তখন তার বশ্যতা শিকার করে নিচ্ছি, এটা ভাবা ঠিক হবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনোদিন কারও বশ্যতা স্বীকার করবো না।’ এই দিন সংসদে বাজেটের দায়মুক্ত ব্যয় সম্পর্কিত মঞ্জুরি দাবি ও নির্দিষ্টকরণ সম্পর্কে আলোচনাকালে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন।