বিশ্ব আদালতের রায়ে ঢাকার সন্তোষ

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১৫ জুলাইয়ের  ঘটনা।)

যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরে ভারতকে বিরত রাখার ইনজাংশন দাবি করে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করেছিল। সে সম্পর্কে আন্তর্জাতিক আদালত যে রায় দিয়েছে, বাংলাদেশ পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র তাতে আনন্দ প্রকাশ করেন। রবিবার বাসস এ খবর দেয়। ১৯৭৩ সালের ১৫ জুলাই মুখপাত্র আদালতের রায় সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, ‘ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখা হয়েছে বলে আমরা আনন্দিত। তিনি বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা জানতাম পাকিস্তানের মামলাটি দুর্বল। বিশ্বদৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর জন্য পাকিস্তান আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিল।’

স্বীকৃতির পক্ষে শওকত  হায়াত ও কাউসার মিয়াজী

পাকিস্তানের দুই জন বিশিষ্ট নেতা বাংলাদেশকে পাকিস্তানের স্বীকৃতিদানের পক্ষে জোরালো বক্তব্য পেশ করেন। কাউন্সিল মুসলিম লীগ নেতা শওকত হায়াত খান রাওয়ালপিন্ডিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান হবে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। পাকিস্তানের রেডিওতে এ খবর প্রচারিত হয়। পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যারা মুসলিম বাংলাকে স্বীকৃতিদানের বিরোধী, তারা পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধিতা করেছিল।’

সংবিধান সংশোধনী বিলে সম্মতি

সংবিধান সংশোধনী বিলে সম্মতি দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। এই দিন তিনি ‘১৯৭৩ সালের সংবিধান (প্রথম সংশোধনী) বিলে’ সম্মতি দেন  বলে বাসসের খবরে প্রকাশ করা হয়। জাতীয় সংসদের স্পিকার কর্তৃক অনুমোদিত এই  বিলটি ১৪ জুলাই সংসদ সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের ভোটে পাস হয়।

দৈনিক বাংলা, ১৬ জুলাই ১৯৭৩চীনের নরম মনোভাব হচ্ছে

বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানে পাকিস্তান সরকারকে ক্ষমতা দিয়ে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবকে চীন উপমহাদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের পক্ষে সঠিক পদক্ষেপ বলে মনে করে। তারা মনে করছে, যুদ্ধবন্দি সমস্যাসহ উপমহাদেশের অমীমাংসিত সব সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ সম্ভব করে তুলবে এবং উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশেষ সহায়ক হবে। ঘোষণাটি ছিল উপমহাদেশের ঘটনাবলির ওপর রাজনৈতিক ভাষণ। এই ভাষ্যে নতুন জাতিকে বাংলাদেশ বলে উল্লেখ করা হয়। ঢাকার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে বিষয়টিকে নতুন বাংলাদেশের প্রজাতন্ত্রের প্রতি চীনের নয়া মনোভাবের আভাস বলে মনে করেন। বাংলাদেশের বাস্তবতা স্বীকারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এতে চীনের ক্রমবর্ধমান উপলব্ধির প্রতিফলনও পাওয়া যায়।

মোজাম্বিকে হত্যাযজ্ঞ, বাংলাদেশ ক্ষুব্ধ

বাংলাদেশ সরকার উত্তর মোজাম্বিকে পর্তুগিজ সৈন্যদের নির্যাতনের নিন্দা জানায়। পর্তুগিজ সৈন্যদের হাতে উত্তর মোজাম্বিকের একটি গ্রামে নারী ও শিশুসহ ৪শ’ লোকের হত্যার খবর নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বাংলাদেশ সরকারের মুখপাত্র হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করেন। খবরটি প্রকাশ করে মুখপাত্র বলেন, স্বাধীনতাকামী জনগণকে দাবিয়ে রাখার জন্য উপনিবেশবাদী শাসকদের এ ধরনের কার্যকলাপ বাংলাদেশ সরকার উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে। আফ্রিকা ও অন্যান্য দেশে উপনিবেশিক শাসনে শাসিত ও নির্যাতিত জনগণের মুক্তি-সংগ্রামকে বাংলাদেশ সরকার আগাগোড়া সমর্থন করে আসছে।

দৈনিক বাংলা, ১৬ জুলাই ১৯৭৩প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করতে হবে

মুজিবনগর বিপ্লবী সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এই দিন বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধকালে আমাদের একটি বাহিনী ছিল, তা হচ্ছে মুক্তিবাহিনী। নিয়মিত ও গণবাহিনী হলো মুক্তিবাহিনীর দুটি অংশ। তাজউদ্দীন বলেন, ‘১৯৭১ সালে মার্চ থেকে ডিসেম্বর মোট ১ লাখ ১ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।’ মুক্তিবাহিনীর সাবেক প্রধান সেনাপতি জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর বলেন, ‘থানা পর্যায়ে প্রশ্নমালার মাধ্যমে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নির্ণয় করতে হবে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করা একটি জরুরি কাজ। এটা না করলে জাতি একটি ভুল করবে।’ তিনি বলেন, ‘সেক্টর কমান্ডারদের মাধ্যমে না দিয়ে প্রশাসকের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়েছে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সার্টিফিকেট দিয়েছে। এর ফলে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়ে  প্রশ্ন উঠছে।’

ডেইল অবজারভার, ১৬ জুলাই ১৯৭৩ফারাক্কা প্রশ্নে বাংলাদেশ-ভারত বৈঠক শুরু

নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত আলোচনা শুরু হয়েছে। আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকবেন বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানিসম্পদমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদ ও ভারতীয় পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন সর্দার শরণ সিং। পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ বলেছেন, আলোচনার আলোকে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী গঙ্গার পানি কোন দেশ কতটা পাবে, তা নির্ধারণ করবেন।