যুদ্ধাপরাধ বিচারে বিল উত্থাপন

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১৬ জুলাইয়ের  ঘটনা।)

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করতে এদিন জাতীয় সংসদে একটি বিল উত্থাপন করা হয়। বিলে এই বিচারের জন্য একটি বা একাধিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের ব্যবস্থা রাখা হয়। অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রদান করতে পারবে এই ট্রাইব্যুনাল। দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা যাবে।

আইনমন্ত্রী শ্রী মনোরঞ্জন ধর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৯৭৩ নামে পরিচিত বিলটি সংসদে উপস্থাপন করেন। বিলটি উপস্থাপনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আইনমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী এবং তাদের সহায়ক বাহিনী যে নৃশংস ও বর্বর মানবতাবিরোধী হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তা মানবজাতির বিবেককে দারুণভাবে আঘাত করে।

তিনি বলেন, এ ধরনের অপরাধে দায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের ও তাদের শাস্তি দেওয়া সব দেশের দায়িত্ব। বিলে এই ধরনের অপরাধের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের একজন চেয়ারম্যান থাকবেন এবং সদস্য হবে কমপক্ষে দুজন ও সর্বোচ্চ চার জন। প্রয়োজন অনুযায়ী সরকার এক বা একাধিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে। সরকারি গেজেটে ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা ঘোষণা করা হবে।

বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে ছিল এমন কোনও হাইকোর্টের বিচারক বা বিচারক হওয়ার উপযুক্ত কোনও ব্যক্তি বা সামরিক আইন অনুযায়ী জেনারেল কোর্ট মার্শালের সদস্য হওয়ার উপযুক্ত যে কেউ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বা সদস্য নিযুক্ত হতে পারবেন।

গঙ্গার পানিবণ্টন প্রশ্নে বৈঠক শুরু

নয়াদিল্লিতে গঙ্গার পানি ভাগাভাগি নিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শুরু হচ্ছে। ঢাকায় অল ইন্ডিয়া রেডিওর খবরে জানানো হয়, নয়াদিল্লিতে উভয় দেশের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শুরু হবে।

সকালের অধিবেশনে বাংলাদেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক ভারতীয় পক্ষকে জানান, তার দেশের অগণিত মানুষের ভাগ্য এই নদীর সঙ্গে জড়িত। তারা বর্তমান আলোচনার অর্থবহ ফলাফল জানার জন্য গভীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে।

তিনি আরও বলেন, তার এই কথায় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মনোভাবই ব্যক্ত হয়েছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে এ আলোচনায় এসেছেন।

মোশতাক আহমেদ ১৯৭২ সালে তার সঙ্গে কে এল রাওয়ের গৃহীত সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে বলেন, গঙ্গার পানি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সুষম বণ্টনের বিষয়ে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন।

বাংলাদেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণমন্ত্রী আরও বলেন, গঙ্গার পানির সঙ্গে যেসব সমস্যা জড়িত, উভয় পক্ষের ভালোভাবে তা জানা আছে। উভয় দেশের মধ্যে পানির ভাগাভাগি সম্পর্কিত তথ্য বিনিময় হয়েছে।

ভারতের ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের পরিণতি হিসেবেই গঙ্গার পানি ভাগাভাগি নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। কলকাতা বন্দর নৌ-চলাচলের উপযোগী রাখার জন্য ভগীরথী নদীতে পানি প্রবাহের উদ্দেশ্যেই ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করা হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এই আলোচনা দুদিন ধরে চলবে বলে আশা করা হয়। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর উক্ত সমস্যা সম্পর্কে এটাই হচ্ছে প্রথম পূর্ণাঙ্গ আলোচনা।

আন্তর্জাতিক আদালতের এখতিয়ার প্রশ্নে বিশেষ অধিবেশন

গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে পাকিস্তান অনুরোধ জানিয়েছিল। এ সম্পর্কে রায় প্রদানের এখতিয়ার আন্তর্জাতিক আদালতের আছে কিনা তা নির্ধারণের উদ্দেশ্যে আদালত বিশেষ অধিবেশনে মিলিত হবে বলে ঘোষণা করে। এক ইশতেহারে বলা হয়, আদালত ৮-৪ ভোটে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং নিজস্ব বক্তব্যের জন্য পাকিস্তানকে অক্টোবর পর্যন্ত এবং ভারতকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়।

ভারত এযাবৎ আদালতের সামনে বক্তব্য পেশ করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছে। পাকিস্তান এই মর্মে আদালতের রুল ইনজাংশন দাবি করেছে যে ১৯৭১ সালের যুদ্ধে যেসব যুদ্ধাপরাধী ভারতে আটক রয়েছে এবং বাংলাদেশ যাদের বিচার করতে চাচ্ছে তাদের প্রেরণ করা উচিত।