যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য সংসদে বিল পাস

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১৭ জুলাইয়ের ঘটনা।)

জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনাল) বিল পাস করা হয়। আইন ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী  মনোরঞ্জন ধর এ দিন (১৭ জুলাই) গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধে অপরাধী ব্যক্তিদের আটক ও দণ্ডদানের উদ্দেশ্যে বিলটি উত্থাপন করেন।  তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্যে কোনও প্রকার সংশোধনী ছাড়াই বিলটি গৃহীত হয়।

পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীরা আন্তর্জাতিক আইনের সব ধারা ভঙ্গ করেছে

পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীরা জেনেভা কনভেনশনের প্রতিটি ধারাকে লঙ্ঘন করেছে। মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক ঘোষণা এবং জাতিসংঘ সনদের ১ নম্বর ধারাকে লঙ্ঘন করে তারা ৩০ লাখ নারী-পুরুষ-শিশুকে হত্যা করেছে,  বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছে, নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়কে। জাতীয় সংসদে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিষয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে  আইন ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর আবেগজড়িত কণ্ঠে এই মন্তব্য করেন।

পাকিস্তান শর্তহীন স্বীকৃতি দিলে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব: নজরুল

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের উপনেতা ও শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপমহাদেশের মানবিক ও অন্যান্য সকল সমস্যা সমাধানে বন্ধুত্বের মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ দিন জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় সংসদের উপনেতা বলেন, ‘শান্তির সন্ধানে আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে, তবে শান্তি প্রতিষ্ঠা নির্ভর করছে পাকিস্তানের মনোভাবের ওপর।’ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়ে পাকিস্তান এগিয়ে আসলে উপমহাদেশের সমস্যার সমাধান এবং শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

দৈনিক বাংলা, ১৮ জুলাই ১৯৭৩ফারাক্কা সমস্যা নিষ্পত্তির মূলনীতি আলোচিত

আজ  দ্বিতীয় দিনেও গঙ্গার পানি ভাগাভাগি নিয়ে  বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনা চলতে থাকে। বাংলাদেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণমন্ত্রী খোন্দকার মোশতাক আহমদ আজ সকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার সিং ও সেচমন্ত্রী ডা. কে এল রাওয়ের  সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনায় মিলিত হন। আড়াই ঘণ্টা আলোচনা চলে। এ সময় তাদেরকে উভয় দেশের বিশেষজ্ঞরা সাহায্য করেন। গঙ্গার পানি ভাগাভাগির বিষয়ে আলোচনা অনেকটা কূটনৈতিক পর্যায়ে হলেও সকালের বৈঠকে কিছু সময়ের জন্য কারিগরি ব্যাখ্যার জন্য উভয় পক্ষই বিশেষজ্ঞদের ডাকেন। তারা ফারাক্কা সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে প্রধান প্রধান নীতি আলোচনা করেন বলে মনে করা হচ্ছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসব নীতি ও সুপারিশ পেশ করা হবে।

দৈনিক বাংলা, ১৮ জুলাই ১৯৭৩ প্রতি তিন জনে একজন  রোগাক্রান্ত

সকল প্রকার ব্যাধির জন্য ঢাকা ভেতরে বা বাইরে একটি অরক্ষিত শহর। ঢাকার তুলনা করা যায় মধ্যযুগের প্রতিরোধহীন শহরের সঙ্গে, যা ছিল শত্রুর আক্রমণের মুখে অসহায়। তেমনই নিরুপায় নগরীতে প্রতিবছর কলেরা, বসন্ত মহামারি হয়ে আসে, মারা যায় অনেক লোক। গতবছর ঢাকায় ৪ হাজার মানুষ মারা গেছে বসন্ত আর অন্যান্য রোগে। যদিও এসব মৃত্যুর কোনও পরিসংখ্যান নেই। তবে বিনা দ্বিধায় বলা যায় অনেক। গতবছর হেপাটাইটিস রোগে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শতকরা ৯৫ জন রোগী মারা গেছে। এদের প্রায় সবাই ছিল নারী এবং অন্তঃসত্ত্বা।

এছাড়া রয়েছে বহু ব্যাধি যা কখনও মহামারি আকারে দেখা দেয় না। কিন্তু আক্রান্তকে তিলে তিলে কর্মক্ষমতাহীন করে ফেলে। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত করে অনেক নাগরিককে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে টেনে নেয়। ঢাকায় রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার অভাব ছাড়াও রয়েছে সুচিকিৎসার অভাব।  অথচ দেশের সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে বলে কথিত। এ ব্যাপারে চিকিৎসকদের সুচিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার অভাবে নাগরিকদের স্বাস্থ্যের মান দিন দিন খারাপ থেকে আরও খারাপ হচ্ছে। ফলে শহরের জটিল চিকিৎসা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা শহরের চিকিৎসা সংকট একদিনের নয়, দীর্ঘ দুই যুগ ধরে নাগরিকদের এই সংক্রান্ত সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি। ফলে একদিকে নগরের জনসংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনই অপরদিকে ব্যাধি ও চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্যা বেড়েছে। আর এই সমস্যা বর্তমানে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।