বাংলাদেশ মুক্তিকামী জনতার পাশে থাকবে: বঙ্গবন্ধু

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২০ জুলাইয়ের ঘটনা।)

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবার দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করেন যে, বাংলাদেশের মানুষ সব সময় জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে রত বিশ্বের জনগণের পাশে থাকবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের নির্যাতিত জনগণের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। বিশ্বের নির্যাতিত জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের কল্যাণে আমরা বিশ্বাসী। বার্লিনে বিশ্ব যুব উৎসব উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এসব কথা বলেন।

বঙ্গবন্ধু দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করেন যে, বার্লিনে বিশ্ব যুব উৎসবে সমবেত যুবসম্প্রদায় বিশ্বসমাজের সম্মুখে কল্যাণের পথ উন্মুক্ত করবে, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রেরণা দেবে এবং সাম্রাজ্যবাদ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে গগনবিদারী আওয়াজ তুলবে। এছাড়া বর্তমান পৃথিবী ক্ষুধা, দারিদ্র আর নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্তির পথ পাবে।

সংগ্রামী বিশ্ব যুব সমাজের প্রতি অভিনন্দন জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, বিশ্বের যুবসমাজ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের দিনগুলিতে যে সহযোগিতা দেখিয়েছে, তা কোনও দিন ভুলবো না। বাণীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, কোনও দেশের কাছে আশা আকাঙ্ক্ষার একমাত্র প্রতীক পৃথিবীর যেকোনও দেশে জাগ্রত যুব সমাজ এবং তারাই অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠ। উৎসবে সারাবিশ্ব যুব সমাজের এক উচ্ছল প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন বঙ্গবন্ধু।

শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, বিশ্ব যুব সমাজের প্রাণকেন্দ্র বার্লিন যুব উৎসবের সমাবেশ ও মহাসম্মেলনের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের যুবকদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এতে করে তারা পরস্পর পরস্পরকে জানবে, বুঝবে এবং ভবিষ্যতের কথা ভাববে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের যুবসমাজ আমাদের গর্ব। আমাদের জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে যুব সমাজের অবদান অবিস্মরণীয়। আজ তারা দেশ শোষণমুক্ত একটি সমাজ গড়ে তোলার জন্য আত্মনিয়োগ করেছে।

বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে যুব সমাজ যে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছিল, তা আমরা কখনও ভুলবো না। বিশ্বের নির্যাতিত জনগণের জাতীয় মুক্তির সংগ্রামের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ সংহতি জানিয়েছে। জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে রত জনগণের পাশে আমরা সব সময় থাকবো। নির্যাতিত জনগণের কল্যাণ ও আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারে আমরা বিশ্বাসী।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে, যুবসমাজ পৃথিবীর মানুষের কল্যাণের পথ উন্মুক্ত পর্বের বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রেরণা দেবে এবং সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে। আমি বিশ্বাস করি, বিশ্ব যুবসমাজ ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্তির পথ দেখাবে। বিশ্বের সংগ্রামী যুবসমাজে আমার অভিনন্দন গ্রহণ করুন।

মুজিববর্ষ-২১-জুলাই-3

স্বীকৃতির আগে শীর্ষ বৈঠকের প্রশ্ন ওঠে না
বেলগ্রেডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠানের কোনও প্রস্তাবের কথা বাংলাদেশ সরকার অবগত নয়। এই দিন পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র এ কথা জানান বলে বাসস থেকে সংবাদ পরিবেশিত হয়। পাকিস্তান কূটনৈতিক সূত্রে যুগোস্লাভিয়ায় বৈঠক অনুষ্ঠানের সুবিধার কথা জানিয়েছে বলে বিদেশি প্রতিষ্ঠান যে খবর দিয়েছে সে দিকে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মুখপাত্র জানান, পাকিস্তান বাংলাদেশকে পূর্ণ কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়ার আগে এ ধরনের শীর্ষ বৈঠকের প্রশ্নই ওঠে না। তিনি আরও বলেন, কেবল সমতার ভিত্তিতে এ দু’ দেশের মধ্যে যেকোনও বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে।

মুজিববর্ষ-২১-জুলাই-3

বাংলাদেশ-ইরান স্বীকৃতি দিয়েছে
বাংলাদেশ সরকার আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট মো. দাউদ খানের সরকারকে স্বীকৃতি দেয়। পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র এ দিন বাসসকে এ কথা জানায়। তেহরান থেকে তাস-এর খবরে জানানো হয়, ইরান আফগানিস্তান প্রজাতন্ত্রের স্বীকৃতি দিয়েছে। সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয় রাওয়ালপিন্ডি থেকে। একটি পরিবেশিত খবরে বলা হয়, আফগান সরকার অবিলম্বে সব পাকিস্তানিদের বহিষ্কার আদেশ দিয়েছে। পেশোয়ার থেকে পাওয়া সূত্রের খবর দিয়ে পাকিস্তানি বার্তা প্রতিষ্ঠানে খবর দেয়, কিন্তু পাকিস্তানি পররাষ্ট্র দফতর থেকে বলা হয়, তারা এ ব্যাপারে কাবুল থেকে কোনও খবর পায়নি।