বঙ্গবন্ধুর আসন্ন বেলগ্রেড সফর তাৎপর্যপূর্ণ

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দিনব্যাপী যুগোস্লাভিয়া সফরে ২৬ জুলাই সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা ত্যাগ করবেন। বঙ্গবন্ধুর ঢাকা থেকে বোম্বাই হয়ে রাজধানী বেলগ্রেডে পৌঁছানোর কথা। বেলগ্রেডে সরকারি সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কানাডায় রাষ্ট্রপ্রধানদের সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশে ৩১ জুলাই অটোয়ার পথে বেলগ্রেড ত্যাগ করবেন। অটোয়ায় আগামী ২ আগস্ট থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত রাষ্ট্রপ্রধানদের সম্মেলন চলবে। তিনি অটোয়া থেকে ১১ আগস্ট দেশে ফিরবেন বলে জানানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে যাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ। স্বদেশে ফেরার পথে বঙ্গবন্ধু লন্ডনে দু’ঘণ্টা অবস্থান করতে পারেন। জোটনিরপেক্ষ সম্মেলন এবং জোটনিরপেক্ষ দেশসমূহের মধ্যে যুগোস্লাভিয়া যেহেতু নেতৃস্থানীয় একটি জোটনিরপেক্ষ দেশ, এ জন্য বঙ্গবন্ধুর এই সফরকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেখানকার নেতাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিষয় ও উপমহাদেশের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবেন।

২৩ এপ্রিল, ১৯৭৩ সালের পত্রিকার একাংশএছাড়া বাংলাদেশ ও যুগোস্লাভিয়ার পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়েও নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করবেন বঙ্গবন্ধু। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এবং এরপর বাংলাদেশের প্রতি যুগোস্লাভিয়ার সমর্থন সক্রিয় এবং প্রশংসনীয় বলেও জানানো হয়। সম্মেলনটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগদান খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, সম্মেলনে এমন একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী যোগদান করছেন যে দেশ সবেমাত্র রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। তাছাড়া বাংলাদেশ কমনওয়েলথের নবীনতম সদস্য। সুতরাং স্বাভাবিক কারণেই এশিয়া তথা সারা বিশ্বের শান্তিকামী ও শান্তি সংগ্রামী বাংলাদেশ সম্মেলনে সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।

বিজ্ঞানকে মানুষের কল্যাণে লাগাতে হবে

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আশা প্রকাশ করেন, মানুষের কল্যাণ ও বিশ্ব শান্তির জন্য অবশ্যই বিজ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে। খবরে বলা হয়, বাংলাদেশে রসায়ন সমিতির দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো একান্ত দরকার। এ জন্য আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ প্রয়োজন। প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে রসায়নবিদদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

২৩ এপ্রিল, ১৯৭৩ সালের পত্রিকার একাংশ

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বিভিন্ন দেশ সমর্থন জানিয়েছে

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ ও সন্তোষজনক হচ্ছে। এই সফরে ওই সব দেশের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে। বিপিআইর খবরে বলা হয়, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, বার্মা, সিঙ্গাপুর ও উত্তর ভিয়েতনামে দুই সপ্তাহ সফর শেষে এদিন ঢাকায় ফিরে এসে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করছিলেন।

কামাল হোসেন বলেন, তার এই সফর কুয়ালালামপুর ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তিতে সহযোগিতা ও বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আলোচনাকালে তারা সর্বশেষ আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও আলজেরিয়ার আসন্ন জোটনিরপেক্ষ সম্মেলন নিয়ে মতবিনিময় করেন। কামাল হোসেন বলেন, এসব দেশের নেতারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন এবং তাদের দৃঢ় বিশ্বাস, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সুখী ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠবে।

২৩ এপ্রিল, ১৯৭৩ সালের পত্রিকার একাংশআর একদিন পর ভারত-পাকিস্তান বৈঠক শুরু

২৪ জুলাই থেকে ভারত পাকিস্তানের প্রথম পর্যায়ের বৈঠক শুরু হবে। প্রেসিডেন্ট ভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়। পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিমন্ত্রী আজিজ আহমেদ। এ প্রতিনিধি দলে থাকবেন পাকিস্তানি পররাষ্ট্র দফতরের সচিব। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত মানবিক সমস্যাবলি হবে তাদের আলোচ্যসূচি। করাচি থেকে পরিবেশিত খবরে প্রকাশ করা হয়, পাকিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেল ইয়াহিয়া বখতিয়ার বলেছেন যে ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর থেকে ভারতে আটক পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের ভরণপোষণের জন্য ভারত পাকিস্তানের কাছে কোনও অর্থ দাবি করতে পারবে না।