(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২২ জুলাইয়ের ঘটনা।)
সরকারি পর্যায়ে ভারত-পাকিস্তান বৈঠকে যোগদানের জন্য ভারতীয় প্রতিনিধিদল এদিন বিকালে ইসলামাবাদ পৌঁছায়। ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন পিএন হাকসার। ২৪ জুলাই থেকে ইসলামাবাদে এ বৈঠক শুরু হওয়ার কথা জানায় পাকিস্তান বেতার।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিমন্ত্রী আজিজ আহমেদ ও অন্যান্য পদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে ভারতীয় প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানায়। ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, আটক লোকজনের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রস্তাবে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট মানবিক সমস্যাগুলো সমাধানের আন্তরিক প্রচেষ্টা রয়েছে।
ভারতীয় প্রতিনিধিদলে পররাষ্ট্রসচিব কে ওয়ান সিং ছিলেন। এ ছাড়া ছিলেন ১১ জন সাংবাদিক। এদিন পাকিস্তান বেতারে বলা হয়, পররাষ্ট্র ও দেশরক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী আজিজ আহমেদ পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব করবেন। তিনদিন বৈঠক চলবে বলে আশা করা হয়।
ভারত-পাকিস্তান বৈঠক বিষয়ে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতা বলেন, পাকিস্তানের আটকেপড়া বাঙালিদের দেশে ফিরতে দেওয়া, বাংলাদেশে অবস্থিত পাকিস্তানি ও ভারতে আটক যুদ্ধাপরাধীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মানবিক দিকের ওপর সমান শক্তি ও উদ্যোগ প্রয়োগ করা হবে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সময় হাকসার বলেন, ‘পাকিস্তান মানবিক কারণেই যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির ব্যাপারে মাঝেমধ্যে কথাবার্তা বলে। তবে আমার বক্তব্য হলো একজন মানুষ সে সৈনিক হোক বা সাধারণ নাগরিক, সবার আগে সে মানুষ। সৈনিক বলে সে অতিমানব নয়। কারণটা যদি মানবিকই হয়, তবে তা শুধু যুদ্ধবন্দিদের ক্ষেত্রে নয়, আটক বাঙালিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে হবে। আটক বলতে আমি স্বদেশ ফিরতে উদগ্রীব পাকিস্তানে আটক বাঙালি ও বাংলাদেশে অবস্থিত পাকিস্তানিদের কথা বলছি।’
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে সাড়া
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে তার সাম্প্রতিক সফর অত্যন্ত সফল এবং এ দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। দুই সপ্তাহব্যাপী সরকারিভাবে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, বার্মা (বর্তমান মিয়ানমার) ও ভিয়েতনাম সফর করে দেশে ফিরেছেন তিনি।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে দেশি ও বিদেশি সাংবাদিকদের কাছে সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ দেশগুলোতে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে সহযোগিতার মনোভাব লক্ষ্য করেছেন এবং উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বক্তব্য ও ভূমিকা তারা উপলব্ধি করতে পেরেছেন।
সফরকালে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়কদের কাছে বাংলাদেশের ভূমিকার কথাও ব্যাখ্যা করেন বলে জানান ড. কামাল।
কঠোর আঘাত হানা হবে
শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম সমাজবিরোধী ব্যক্তিদের হুঁশিয়ার করে বলেন, সমাজজীবন থেকে দুষ্কৃতিকারীদের নির্মূল করার জন্য সরকার কঠোর আঘাত হানবে। এদিন সকালে সাভারে রক্ষীবাহিনীর তৃতীয় দলের সমাপনী কুচকাওয়াজে দেশের অগ্রগতি ও পুনর্গঠনের জন্য শান্তি অক্ষুন্ন রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন শিল্পমন্ত্রী। কুচকাওয়াজে সামরিক অভিবাদন গ্রহণ করেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, কিছুসংখ্যক সমাজবিরোধী মানুষ চুরি-ডাকাতি ও অন্যান্য দুষ্কর্মের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। তারা সমাজজীবনে অশান্তি ও নিরাপত্তাহীনতার বোধ তৈরি করছে। তাই এদেশের মাটিতে তাদের স্থান হতে পারে না।
কারফিউ দিয়ে তল্লাশির প্রথম দিন
এদিন ঢাকার মোহাম্মদপুর থানা এলাকার একটি অংশে কারফিউ জারি করে ভোর ৫টা থেকে ছয়টা পর্যন্ত অস্ত্র উদ্ধারে সেনাবাহিনী অভিযান চালায়। এই অভিযানে রেশন কার্ড উদ্ধারে বেশি জোর দেওয়া হয় এবং সরকারি কর্মচারীরা সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে ২৫ হাজার রেশন কার্ড বিলি করেন।