সচিবালয়ে সুনসান নীরবতা

ঈদুল আজহার তিন দিনের সঙ্গে সাপ্তাহিক দুদিনসহ মোট পাঁচ দিনের ছুটি শেষ হয়েছে শনিবার। সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার (২৫ জুলাই) সরকারের প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে বিরাজ করছে ভুতুড়ে পরিবেশ। যদিও করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের জারি করা ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধের কারণে সরকারি বেসরকারি সব অফিস আদালত বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যেও জরুরি কিছু নির্দেশনা বাস্তবায়নে সচিবালয়ের কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি সেল খোলা রয়েছে। সেখানে কাজ করছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। তবে বেশিরভাগ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বিরাজ করছে ভুতুড়ে পরিবেশ। রবিবার (২৫ জুলাই) সচিবালয়ে গিয়ে এমন দৃশ্য নজরে এসেছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, অধিকাংশ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের লাইট বন্ধ, কলাপসিবল গেটে তালা। করোনা সংক্রমণের কারণে বিধিনিষেধের মধ্যে জরুরি সেবা দেওয়া সুনির্দিষ্ট কয়েকটি দফতর ছাড়া সরকারি অন্যান্য অফিস বন্ধ রয়েছে। সরকারি আদেশ অনুযায়ী বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস বা দফতরও বন্ধ রয়েছে। এ কারণেই সচিবালয়ের অধিকাংশ মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বন্ধ রয়েছে। তবে নির্দিষ্ট কয়েকটি উইং খুবই সীমিত পরিসরে খোলা। সেগুলোয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্দিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথানিয়মের কিছুটা ব্যত্যয় ঘটিয়ে সকাল ১০টার পর নিজ নিজ কর্মস্থলে উপস্থিত হয়েছেন।

জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে এ বিভাগের অধিকাংশ দফতর বন্ধ রয়েছে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত মাঠ প্রশাসন অধিশাখায় কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৫০ শতাংশ জনবল দিয়ে এ দফতরে কাজ চলছে। বিধিনিষেধ চলাকালীন বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিব, উপ-সচিবসহ অপরাপর কর্মকর্তারা কাজ করছেন নিজ নিজ দফতরে। এদের মধ্যে অনেকেই ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় পর্বটি সেরেছেন টেলিফোনে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দেখা গেছে, প্রতিমন্ত্রীর দফতর, সচিবের দফতর খোলা রয়েছে। তবে তারা কেউই দফতরে আসেননি। প্রয়োজনীয় কাজ সারছেন টেলিফোনে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের দফতর খোলা থাকলেও জরুরি প্রয়োজনে সীমিত জনবল রাখা হয়েছে এখানে।

সরকারের প্রচারযন্ত্র হিসবে তথ্য অধিদফতর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে কার্যক্রম চালু রেখেছে। তথ্য অধিদফতরের নিউজরুম সারা বছরই খোলা থাকে। তাই কঠোর বিধিনিষেধে এখানে কোনও এ প্রভাব পড়েনি। কারণ, ঈদের দিনও পিআইডির নিউজ রুমে রোস্টার অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করেন। এখনও করছেন সেভাবে।

দেখা গেছে, সচিবালয় ক্লিনিক খোলা রয়েছে। সেখানে কাজ করছেন চিকিৎসক, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা। কোভিডের টিকা দেওয়ার কেন্দ্র হিসেবেও সচিবালয় ক্লিনিক কাজ করছে। এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষও খোলা রয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোল রুমও খোলা।

কোভিড নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের পুরোটাই খোলা রাখা হয়েছে। শিক্ষা বিভাগের আংশিক খোলা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, করোনার কারণে সরকারি বেসরকারি স্বায়ত্তশাসিত সব অফিস আদালত বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া শিডিউল অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যক্রম চলছে। এ সময় সচিবালয়ে সুনসান নীরবতা বিরাজ করার ঘটনাই স্বাভাবিক। আশা করছি, সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন আমরা করোনামুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবো। কারণ, করোনা মহামারি তো আর সারা জীবন থাকবে না।

প্রসঙ্গত, কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে গত ২৩ জুলাই ভোর ৬টা থেকে শুরু হয়ে ১৪ দিনের আরোপিত কঠোর বিধিনিষেধ চলবে আগামী ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত। এই সময়ে জরুরি সেবা ছাড়া প্রায় সব মন্ত্রণালয় বন্ধ রয়েছে। তবে চলমান কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের বিভাগ/শাখার কার্যক্রম চলছে সীমিত জনবল নিয়ে।