প্রথমবারের মতো কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দিতে অটোয়ায় বঙ্গবন্ধু

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১ আগস্টের ঘটনা।)

প্রথমবারের মতো কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দিন অটোয়া পৌঁছান। ২ আগস্ট থেকে এই সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা। সম্মেলনে ৩৯টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও অন্যান্য প্রতিনিধি যোগদান করেন। নেতৃবৃন্দ আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন এবং কমনওয়েলথ জাতিসমূহের মধ্যে সম্পর্ক শক্তিশালী করার বিভিন্ন পদক্ষেপ সুপারিশ করবেন।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার বিশেষ সংবাদদাতার বরাত দিয়ে এ দিন সংবাদ প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, ৯ দিনব্যাপী এ সম্মেলন চলবে। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো এতে অংশগ্রহণ করছে। সম্মেলনে মহাদেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে। কমনওয়েলথ দেশ যে কয়টি মহাদেশে অবস্থিত, সম্মেলনে তাদের বিশেষ করে বর্ণবিদ্বেষী এবং উন্নত-অনুন্নত দেশগুলোর মধ্যে অসম বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের দিকটি তুলে ধরা হবে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ফলে উপমহাদেশে উদ্ভূত সমস্যাবলী নিয়ে সম্মেলনে কথা হবে। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তাদের আগ্রহের কথা কমনওয়েলথ রাষ্ট্রগুলোকে অবহিত করবেন। একজন মুখপাত্র জানান, বঙ্গবন্ধু বিশ্বের সব সমস্যার একটি সমাধান খুঁজে বের করা বিশেষ করে উপমহাদেশের স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে এক সংক্ষিপ্ত বিবরণ সম্মেলনে পেশ করবেন।

২ আগস্ট, ১৯৭৩ সালের পত্রিকার একাংশবিশ্ব শান্তির একনিষ্ঠ সমর্থক বঙ্গবন্ধু যুদ্ধ ও সমরসজ্জার বিরুদ্ধে বিশ্বকে রক্ষার জন্য মনোভাব পরিবর্তন করে ওতপ্রোতভাবে শান্তির কাজে আত্মনিয়োগ ও মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে শান্তি নিরাপত্তা ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে সব রকম উত্তেজনা নিরসনে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার আহ্বান জানাবেন। সম্মেলনের আলোচ্যসূচির বিষয় তখনও চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়নি; তবে অনুমান করা হচ্ছে, দুই বছর আগে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রধান প্রধান যেসব ঘটনা ঘটে, তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। মহাদেশের প্রধান ঘটনা স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় আলোচনায় থাকবে; যার পরিণতিতে কমনওয়েলথ থেকে পাকিস্তানের সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নেওয়া। পাকিস্তান এই ভেবে কমনওয়েলথ ছেড়ে গিয়েছিল যে, হয়তো দেশটি তার সিদ্ধান্তে দেশগুলোর সমর্থন পাবে, কিন্তু বাস্তবে দেখা গেলো উপমহাদেশে নতুন বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিতে পাকিস্তানের ব্যর্থতায় কমনওয়েলথের অধিকাংশ দেশ পাকিস্তানের মনোভাবকে পছন্দ করলো না।

কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বাংলাদেশ ও ভারত সম্মেলনে যোগদানকারী কমনওয়েলথ রাষ্ট্রপ্রধান ও অন্যান্য প্রতিনিধি দলের কাছে মানবিক সমস্যা সমাধানে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগের বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন।

উল্লেখ্য, ভারত-বাংলাদেশ যুক্ত ঘোষণায় মানবিক সমস্যা সমাধানে ১৯৫ জন বাদে যুদ্ধাপরাধীরা দেশে ফিরে যাবে। পাকিস্তানে আটক বাঙালিরা বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশে বসবাসকারী পাকিস্তানিদের পাকিস্তানে ফেরার প্রস্তাব রয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল পাকিস্তান কর্তৃক জোর করে আটকে রাখা নিরাপদ বাঙালিদের দুরবস্থা এবং পাকিস্তানের যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পাকিস্তান কর্তৃক নিরীহ বাঙালিদের বিচারের হুমকির ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিও সম্মেলনে তুলে ধরা হবে।

২ আগস্ট, ১৯৭৩ সালের পত্রিকার একাংশরাষ্ট্রপ্রধানরা যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের মধ্যে পরিবর্তিত সম্পর্ক গভীরভাবে বিবেচনা করে দেখবেন। তারা বিশ্বের গোলযোগপূর্ণ এলাকার পরিস্থিতি আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে। আফ্রিকা মহাদেশ থেকে বহুসংখ্যক প্রতিনিধিদল সম্মেলনে যোগদান করবেন। তাই বর্ণবৈষম্য প্রশ্ন এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের মুক্তিযুদ্ধও আলোচ্যসূচিতে স্থান পেতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। অপরদিকে, ব্রিটেন আর অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার মতো উন্নত দেশগুলোর প্রধান কাজ হবে কমনওয়েলথ দেশগুলোর মধ্যে কার্যবিধি উন্নয়নের সুপারিশ।

যুব সম্মেলনের অঙ্গীকার

বার্লিনে চলতি দশম বিশ্ব যুব উৎসব অধিবেশনে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্তদের শপথ নেওয়া হয় এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রতিনিধিদলে সব দেশের বিপ্লবীদের প্রতি তাদের সমর্থন জোরদার করার ওয়াদা গ্রহণ করেন। অধিবেশনে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি সংহতি ব্যক্ত করা হয় এবং একটা প্রস্তাবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়েকে স্বাগত জানানো হয়। প্রস্তাবে এশিয়ার দেশসমূহের সহযোগিতা ও নিরাপত্তা সুসংহত করার ব্যাপারে বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপকে অভিনন্দন জানানো হয়। জতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির দাবির প্রতিও প্রস্তাবে সমর্থন জানানো হয়।