কলকাতায় শহীদ শেখ কামালের ৭২তম জন্মবার্ষিকী পালিত

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের ‘বাংলাদেশ গ্যালারিতে’তে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) সেখানে এ উপলক্ষে এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের সব কর্মকর্তা শহীদ শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর তার জীবনের ওপর আলোচনায় অংশ নেন– বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননাপ্রাপ্ত ও আনন্দবাজার পত্রিকার মুক্তিযুদ্ধকালীন সাংবাদিক সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে শেখ কামালের ক্রীড়া ও রাজনৈতিক সহকর্মী সুবীর হোম রায়। এ ছাড়া কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের কাউন্সেলর (শিক্ষা ও ক্রীড়া) রিয়াজুল ইসলাম, কাউন্সেলর (কন্স্যুলার) মো. বশির উদ্দিন এবং দ্বিতীয় সচিব (কন্সুলার) রাসেল জমাদারও বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসান।

এ সময় উপ-হাইকমিশনার শেখ কামাল প্রসঙ্গে বলেন, ‘বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারীর তারুণ্যের প্রতীক ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হলেও তার মধ্যে কোনও অহংবোধ ছিল না। তিনি ছিলেন মার্জিত, বিনয়ী, বন্ধুবৎসল ও পরোপকারী। নবসৃষ্ট বাংলাদেশের তরুণ সমাজের বিকাশে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চায় উদ্বুদ্ধকরণে তার ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জীবন ও আদর্শ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অন্তহীন অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।’

প্রখ্যাত সাংবাদিক সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত বলেন, ‘শেখ কামাল একজন সৌম্য ও সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন। সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় তার ছিল অবাধ বিচরণ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানীর এডিসি ছিলেন তিনি। বসতেন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের অস্থায়ী কার্যালয় কলকাতার ৮, থিয়েটার রোডে, বর্তমানে যা শেক্সপিয়র সরণি। বাংলাদেশের চলমান মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করার জন্য শেখ কামালের কাছে গেলে আলোচনার এক পর্যায়ে উঠে আসতো সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সঙ্গে তার সখ্যতার কথা।’

সুবীর হোম রায় স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালের মার্জিত ও শুদ্ধ সংস্কৃতির উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র। সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র শেখ কামাল ছিলেন ভালো ক্রিকেটার, উৎসাহী নাট্যকর্মী, সংগীত অনুরাগী ও উজ্জ্বল ছাত্রনেতা। তবে তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি ছিলেন একজন মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ।’

রিয়াজুল ইসলাম তার আলোচনায় বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর অন্যতম সংগঠক। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ার কোর্সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে মুক্তিবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন এবং তৎকালীন সেনাপ্রধানের এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বলিষ্ঠ কর্মী এবং নিবেদিতপ্রাণ। সংগ্রামী ও আদর্শবাদী সংগঠক হিসেবে ’৬৬-এর স্বাধিকার আন্দোলন ও ’৬৯-এর গণ আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ১৯৭২ সালে তিনি আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠা করেন।’

মো. বশির উদ্দিন বলেন, ‘শেখ কামাল ছিলেন মুক্তমনা। বঙ্গবন্ধুর সন্তান হওয়ায় স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের নির্মমতা ও মিথ্যাচারের শিকার হন তিনি।  তিনি বেঁচে থাকলে বাংলাদেশের রাজনীতি, ক্রীড়া ও সঙ্গীতাঙ্গনে অনেক আগেই নবযুগের সূচনা হতো। এখনও প্রগতিশীল তরুণ সমাজের কাছে শেখ কামাল আদর্শের প্রতীক হয়ে আছেন।’

রাসেল জমাদার বলেন, ‘শেখ কামালের জন্ম ও কর্মময় জীবন আমাদের কাছে অতুলনীয়। কারণ সততার কষ্টিপাথরে তিনি ছিলেন অনন্য। শেখ কামাল ছিলেন উদ্দীপ্ত যৌবনের দূত ও পরোপকারী ব্যক্তিত্বের পুরোধা। শেখ কামালের জন্ম আগস্ট মাসে, আর এই আগস্টেই তিনি পরিবারের সদস্যের সঙ্গে শহীদ হন।’