(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৮ আগস্টের ঘটনা।)
কমনওয়েলথের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কমনওয়েলথ প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে তিনি বলেন, ইউরোপীয় ধনী দেশগুলোর সাধারণ বাজার অনুসরণে উন্নয়নশীল দেশগুলোরও সহযোগিতার সুবিধা গ্রহণ করা উচিত।
বঙ্গবন্ধু বলেন, বাণিজ্য সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পারস্পরিক উদার বাণিজ্যনীতির প্রবর্তন করা উচিত।
প্রকৃতপক্ষে ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে বিতর্ক হয় কমনওয়েলথ সম্মেলনে। আফ্রো-এশীয় দেশগুলো অর্থনৈতিক সাহায্যের জন্য উন্নত দেশগুলোর ওপর চাপ দিতে চায়। কিন্তু ব্যাপক শলাপরামর্শ এবং আলোচনার প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সমাপ্তি হয় বিতর্কের।
সাধারণ বাজারে কমনওয়েলথের স্বার্থ সংরক্ষণে ব্রিটেনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু আলোচনার সূত্রপাত করেন। তিনদফা প্রস্তাব রেখে তিনি বলেন, কমনওয়েলথ দেশগুলোতে বাণিজ্যিক সুবিধা বহাল রাখতে হবে। কমনওয়েলথ-এর জন্য সাধারণ বাজার থেকে সর্বাধিক সুবিধা আদায় এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উদারনীতি নিতে হবে।
বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যে সমর্থন জানায় সিঙ্গাপুর, সিয়েরা লিওন, তানজানিয়া। নাইজেরিয়ার জেনারেল ইয়াকুব এবং জুলিয়াস নায়ায়ও সমর্থন জানান। জবাবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ কোনও প্রতিশ্রুতি দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। তিনি শুধু বলেন, সাধারণ বাজারের কাঠামোর মধ্যে ব্রিটেন বিস্তৃত হবে না।
ব্রিটিশ বাজার থেকে বঞ্চিত না করার আহ্বান
বঙ্গবন্ধু বলেন, বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। তাই বাংলাদেশকে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দানের আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, ব্রিটিশ বাজার থেকে বঞ্চিত হলে বাংলাদেশের সমস্যা আরও বাড়বে।
বাংলাদেশের মতো যেসব দেশ বৈদেশিক মুদ্রার জন্য একটি বা দুটি পণ্যের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল সেসব দেশের সমস্যার ওপর আলোকপাত করেন। তিনি উল্লেখ করেন, কৃত্রিম তন্তু বাংলাদেশের পাট শিল্পের জন্য হুমকি। কৃত্রিম তন্তুর প্রতিযোগিতা থেকে পাটকে বাঁচাতে উন্নত দেশগুলোর প্রতি আবেদন জানান তিনি।
সম্মেলনে উগান্ডার এশীয় বিতরণ নীতির তীব্র সমালোচনা করেন সরদার শরণ সিং। সমাগত কমনওয়েলথ নেতৃবৃন্দ তাদের আলাপ-আলোচনা ও কথাবার্তায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
কমনওয়েলথ-এর মহাসচিব স্মিথ বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
যমুনা নদীর প্লাবন ও তীব্র স্রোতের মুখে প্রতিরক্ষা বাঁধের স্থানে স্থানে ফাটল দেখা দেওয়ায় সিরাজগঞ্জ আবার বিপন্ন হয়ে পড়েছে। যে কোনও মুহূর্তে প্রতিরক্ষা বাঁধে বড় ভাঙন দেখা দিয়ে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কা জানানো হয়। এদিন সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানির উপরে উঠে আসে।
ইতোমধ্যে পৌর এলাকার দুটি ইউনিয়ন পুরোপুরি তলিয়ে গেছে। সহস্রাধিক মানুষ প্রাণভয়ে রেললাইন ও সড়কে অবস্থান করছে। দৈনিক বাংলার নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, যমুনা ও তার শাখানদীগুলোর প্লাবনে মহাকুমার নয়টি থানার বন্যা পরিস্থিতির গুরুত্ব অবনতি ঘটেছে।
বিশ্ব আদালতের কাছে অস্ট্রেলিয়ার দুঃখপ্রকাশ
ফরাসি পারমাণবিক বিস্ফোরণের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় ফাঁস হয়ে যাওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার সরকার আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে দুঃখপ্রকাশ করে। এদিন সরকারিভাবে এ তথ্য প্রকাশ হয়। সেবছর জুনে আন্তর্জাতিক আদালত অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় বিস্ফোরণের বিষয়ে কড়া নির্দেশ দেয়। কিন্তু ফরাসি সরকার এ ব্যাপারে আদালতের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং বিস্ফোরণ ঘটায়।