আটক বাঙালিদের উদ্ধারে বিশ্ববাসীর প্রতি চাপ সৃষ্টির আহ্বান বঙ্গবন্ধুর

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৯ আগস্টের ঘটনা।)

পাকিস্তানে আটক তিন লাখ বাঙালির মুক্তির জন্য পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য বিশ্বের সকল দেশের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এদিন অটোয়ার স্টার পত্রিকার প্রতিনিধিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু এ আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব চায়। উপমহাদেশের মানবিক সমস্যাগুলোর সমাধানে ভারত-বাংলাদেশ যুক্ত ঘোষণার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, আমরা মানবিক বিবেচনায় বিশ্বাসী। ভারত-বাংলাদেশ যুক্ত ঘোষণায় পাকিস্তানে আটক বাঙালি, বাংলাদেশে অবস্থানকারী পাকিস্তানি এবং ১৯৫ যুদ্ধবন্দিকে বাদ দিয়ে বাদবাকিদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। ১৯৫ জনকে বাংলাদেশে গণহত্যা পরিচালনার জন্য দায়ী করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, পতাকা সমুন্নত রাখার জন্য এই যুদ্ধাপরাধের বিচার অবশ্যই করতে হবে। এদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আন্তর্জাতিক আইনজীবী নিয়োগের অধিকার দেওয়া হবে। তবে তারা পাকিস্তানি আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবে না।

বঙ্গবন্ধু বলেন, আমি মানবিক বিচার-বিবেচনা, মূল্যবোধ এবং গণতান্ত্রিক রীতিনীতিতে বিশ্বাসী। এর ওপর ভিত্তি করে মুক্তি সংগ্রামের জন্য জনগণকে সংঘবদ্ধ করেছি।

পাকিস্তানি শর্ত অগ্রহণযোগ্য

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুই সরকারের মধ্যকার প্রধান বিরোধগুলো নিষ্পত্তির জন্য পাকিস্তানের সামরিক সরকারের দেওয়া শর্তাবলী পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন না। কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগদানকারী এশীয় কূটনীতিকরা এ কথা বলেন। তারা বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান তাদের যে ধারণা দিয়েছেন তাতে পাকিস্তানি শর্ত হচ্ছে- ভারতের আর পাকিস্তানের নব্বই হাজার যুদ্ধবন্দিকে পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন।

সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ভূমিকার প্রশংসা পেয়েছে বাংলাদেশ

বার্লিন যুব উৎসবে বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি সঠিক আলোকে তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে বিরুদ্ধশক্তির সমস্ত অপপ্রচার ও ভ্রান্ত ধারণাকে ব্যর্থ করা হয়েছে। যুব উৎসব থেকে ফিরে এসে এ কথা জানান যুব উৎসবের যোগদানকারী বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতা আওয়ামী যুবলীগ প্রধান শেখ ফজলুল হক মণি। এদিন জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের কাছে যুব উৎসবে তার ও প্রতিনিধিদলের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন তিনি।

শেখ মণি বলেন, উৎসবে আমরা আমাদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে সকলকে যথাযথ ধারণা দিতে পেরেছি। বিভিন্ন প্রশ্নে সমর্থন সংগ্রহে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশের জন্য সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর আন্তরিকতা, আবেগ ও আগ্রহের উচ্ছ্বসিত প্রশংসাও করেন শেখ মণি।

তিনি আরও বলেন, উৎসবে ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশের মুক্তি সংগ্রামের সঙ্গে সংহতি ঘোষণা করা হয়। ভারত মহাসাগরকে শান্তির সাগর ঘোষণার পক্ষে বাংলাদেশ ও ভারতের পক্ষ থেকে এই উৎসবের বিস্তারিত মন্তব্য উত্থাপন করা হয়। তিনি বলেন, আমরা সুস্পষ্টভাবে এ বক্তব্য রেখেছি যে, টিকে থাকার জন্য আমাদের যেন সাম্রাজ্যবাদী সাহায্যের মুখাপেক্ষী না হতে হয়, তাদের কাছে হাত পাততে না হয়। আমরা যাতে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারি তার জন্য প্রগতিশীল বিশ্বের সমর্থন প্রয়োজন।