(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১০ আগস্টের ঘটনা।)
উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে আফ্রিকার মুক্তিকামী জনতার সংগ্রামে সর্বাত্মক সমর্থন জ্ঞাপন করেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সম্মেলনে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবরোধ সৃষ্টির প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন এবং বলেন আলোচনা অনুষ্ঠানের নামে আপনারা জনগণকে আত্মহত্যা করার কথা বলতে পারেন না।
বঙ্গবন্ধু অ্যাঙ্গোলা, মোজাম্বিকসহ অন্যান্য অঞ্চলের মুক্তিকামী জনগণের প্রতি বাংলাদেশের নৈতিক সমর্থনের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জাতির স্বাধীনতাকে যেমন অস্বীকার করা যায় না, তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়কেও অস্বীকার করার উপায় নেই। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘স্বাধীনতা অর্জনের জন্য তিনি নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় বিশ্বাসী। কিন্তু যখন নিয়ম ব্যর্থ হয় তখন আমরা অসহযোগ আন্দোলন শুরু করি। আমাদের বিরুদ্ধে যখন সামরিক বাহিনী লেলিয়ে দেওয়া হয়, তখন আমরা শক্তির বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের আশ্রয় নিই।’
বিশ্বের যেকোনও স্থানের সংগ্রামী জনগণের প্রতি বাংলাদেশের সর্বাত্মক সমর্থনের কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, যদি বিশ্বের কাছ থেকে কার্যকর সাড়া পাওয়া যায়, তা হলে আফ্রিকায় আমাদের ভাইদের বাঁচানো যেতে পারে।
বঙ্গবন্ধু রোডেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য নিষিদ্ধ করার কথা উল্লেখ করে আফ্রিকার জনগণের মুক্তির সঙ্গে অন্যান্য দেশের কাছে চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানান। আফ্রিকার নেতারাও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবরোধের পক্ষে জোরালো যুক্তি পেশ করেন এবং একইসঙ্গে রাজনৈতিক কর্মীদের মুক্তির ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
জেনেভার পথে বঙ্গবন্ধু
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফেরার পথে এদিন রাতে অটোয়া থেকে জেনেভা যাত্রা করেন। এখানে তিনি কর্মব্যস্ত দিন কাটান। এ সময় বঙ্গবন্ধু বিশ্বের বহু নেতার সঙ্গে কমনওয়েলথ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের সঙ্গে স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় আলোচনা করেন।
এ সময় তিনি বেশ কিছু বেতার, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রকে সাক্ষাৎকার দেন। কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে এখানে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের বিষয়ে যথাযথভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব, তার নেতৃত্ব এবং সর্বোপরি তাঁর অসামান্য মুক্তিসংগ্রামের কারণে সবার দৃষ্টি তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। সম্মেলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে
দেশে ফেরার পর শুক্রবার বিকালে বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। ঢাকা নগর আওয়ামী লীগের অন্তর্গত সকল ইউনিয়নের সভাপতি-সম্পাদক, স্বেচ্ছাসেবক প্রধান ও উপাদানের এক সভা হয়। নগর আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রবীণ নেতা আব্দুল মালেক সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় গৃহীত প্রস্তাবে বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসার পর সংবর্ধনার ব্যাপারে সকলে সম্মত হন।
বন্যা নিয়ন্ত্রণের সাহায্য দিতে আগ্রহী বিশ্বব্যাংক
বাংলাদেশ ও ভারতের পক্ষে কল্যাণকর হবে এ ধরনের একটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক সাহায্য দিতে আগ্রহী বলে অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ আভাস দেন। প্রকল্পটি হবে ভারত ও পাকিস্তানের সিন্ধু অববাহিকা প্রকল্পের মতো। সপ্তাহব্যাপী বিদেশ সফর শেষে ঢাকায় ফিরে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের একথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
দেশে খাদ্য ঘাটতি পূরণের জন্য তিন লাখ টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। অর্থমন্ত্রী ওয়াশিংটনে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের জাতীয় কমিটির বৈঠকে যোগদান করেন। বাংলাদেশের প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনায় বিদেশ থেকে কী পরিমাণ সাহায্য পাওয়া যাবে বলে অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখা হলে তিনি বলেন, আমি আশাবাদী। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা চাওয়া হলে তিনি বলেন, টাকার জন্য কোনও কর্মসূচি আটকে থাকবে না। শুধু উদ্যোগের দরকার। কর্মসূচির অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সাহায্যকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও সাহায্যের পরিমাণ ঠিক করা হবে বলেও তিনি জানান।