দাবি নিয়ে তুলা চাষিরা গণভবনে

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১৮ আগস্টের ঘটনা।)

পাকিস্তান থেকে ফেরত আসা তুলা চাষিদের পুনর্বাসন করা হবে বলে এদিন আশ্বাস দেওয়া হয়। প্রত্যাগত তুলো চাষিদের একটি প্রতিনিধিদল এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করেন। বাসস পরিবেশিত খবরে বলা হয়, বাংলাদেশ কৃষক লীগের নেতারা প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, তাঁর সরকার দিনাজপুরের ১২ একর জমিতে তুলা চাষের ব্যবস্থা করে এদের পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

জিল্লুর রহমানের শয্যাপাশে বঙ্গবন্ধু

এদিন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের অসুস্থ সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমানের ধানমন্ডির বাসভবনে তাকে দেখতে যান। দৈনিক বাংলা পরিবেশিত খবরে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু  জিল্লুর রহমানের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন এবং তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন।

আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে বললেন হাকসার

এদিন ভারত-পাকিস্তান কর্মকর্তা পর্যায়ে দ্বিতীয় দফা বৈঠক শুরু হয়। সকাল ও বিকালে দু’বার বৈঠক বসে। বৈঠক মোট সাড়ে চার ঘণ্টা স্থায়ী হয়। সরকারি মহল থেকে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে। বিকালের অধিবেশনের পর ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতা পি এন হাকসার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে।’ উভয় পক্ষ তাদের অবস্থান নতুন করে বর্ণনা করেছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন, ‘রাওয়ালপিন্ডিতে গতবারের আলোচনার চেয়ে এবার আরও অনেক কিছু আলোচনা হয়েছে।’ তবে কোনও পক্ষই আলোচনার বিস্তারিত নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।

দৈনিক বাংলা, ১৯ আগস্ট ১৯৭৩

উল্লেখ্য, ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ-ভারত যুক্ত ঘোষণায় বিচারের জন্য ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে রেখে একই সময়ে বাকি যুদ্ধবন্দিদের ফেরত পাঠানো, পাকিস্তানে আটক বাঙালিদের বাংলাদেশে ও বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানিদের সে দেশে ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। এদিন বৈঠকে যুদ্ধাপরাধের বিচার ও বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানিদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে আভাস পাওয়া যায়। তবে এর সমর্থনে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। পরের দিন কোনও বৈঠক হবে না বলেও জানানো হয়। পুনরায় বৈঠক বসবে তার পরের দিন অর্থাৎ ২০ আগস্ট। পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলকে আগ্রা সফরের সুযোগ দেওয়ার জন্য এই বিরতি।

প্রথম দিনের আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্কে ইসলামাবাদকে জানানোর সুযোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যেও এটি করা হয়েছে। পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলের নেতা আজিজ আহমেদ এদিন আগ্রা যাবেন বলে জানান। এদিকে আলোচনা সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারকে নিয়মিত অবহিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কারণ, এতে বাংলাদেশের স্বার্থ বিশেষভাবে জড়িত। পূর্ববর্তী খবরে প্রকাশ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা এখানে হওয়ার পর রাষ্ট্র দফতরে সকাল সাড়ে ১০টায় পুনরায় শুরু হবে। পাকিস্তানি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব করছেন পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী আজিজ আহমেদ এবং ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ দূত হাকসার। পাকিস্তান মানবিক বিষয়ে কঠোর মনোভাব বজায় রাখার ভাব দেখাচ্ছে বলেও গণমাধ্যমকে জানানো হয়।

সকালে আড়াই ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা শেষে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতা হাকসার সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত মাসে রাওয়ালপিন্ডি আলোচনায় পাকিস্তানের মনোভাব ছিল নেতিবাচক, কিংবা অন্তত পাকিস্তান যা করতে পারতো তা করেনি।’ এই মর্মে দেওয়া হাকসারের আগের দিনের মন্তব্য নিয়ে পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের নেতা আজিজ আহমেদ তার সমালোচনা করেন। আজিজ আহমেদের উপস্থিতিতেই তার বিবৃতি ব্যাখ্যা করে হাকসার বলেন, ‘পাকিস্তানে আমরা যা করেছি তা ফলপ্রসূ হয়নি— এটা বলার উদ্দেশ্য ছিল না।’ বলেন, তিনি শুধু এটাই বলতে চেয়েছেন যে দু'দেশের মধ্যকার মতপার্থক্য যতখানি কমে আসবে বলে তিনি আশা করেছিলেন, ততখানি হয়নি। সকালের আলোচনা সম্পর্কে একজন পাকিস্তানি কর্মকর্তা বলেন যে উভয় পক্ষ পরস্পরের মন্তব্য পর্যালোচনা করেছেন।

দৈনিক বাংলা, ১৯ আগস্ট ১৯৭৩আজিজ ও শেখ আব্দুল্লাহর সাক্ষাৎ

পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলের নেতা আজিজ আহমেদ ও কাশ্মিরি নেতা শেখ আব্দুল্লাহর মধ্যে আকস্মিকভাবে সাক্ষাৎ ঘটে। আজিজ  আহমেদ  আলোচনা শেষে বেরিয়ে আসার পর বাইরে তার সঙ্গে দেখা হয়। শেখ আব্দুল্লাহ এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। তিনি আজিজ আহমেদকে আলিঙ্গন এবং আলোচনার সাফল্য কামনা করেন।

সাহসিকতার পুরস্কার সম্পর্কে

যেসব পুলিশ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের সময় নিহত অথবা আহত হয়েছেন, তাদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহসিকতার পুরস্কার ঘোষণা করেন। দুষ্কৃতকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে যেসব পুলিশ নিহত হয়েছেন, তাদের প্রত্যেক পরিবারের জন্য বঙ্গবন্ধু ৫ হাজার টাকা করে এবং যারা আহত হয়েছেন তাদের জন্য ২ হাজার টাকা করে সাহায্য ঘোষণা করেন। এছাড়া দুষ্কৃতকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টরদের প্রত্যেক পরিবারকে ৫ হাজার টাকা করে এবং নিহত হেড কনস্টেবলদের প্রত্যেক পরিবারকে ২ হাজার টাকা করে প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হয়।