ইন্দিরার সাথে বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে : আজিজ

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২১ আগস্টের ঘটনা।)

ভারত-পাকিস্তান দূত পর্যায়ের বৈঠকে পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের নেতা আজিজ আহমেদ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠক চলে ৮০ মিনিট। বৈঠকের পর আজিজ আহমেদ অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে এবং অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে’। বৈঠকে আলোচনার বিষয়গুলো উভয়পক্ষই সতর্কতার সাথে গোপন রাখে। পরবর্তী দিনের প্রস্তাবিত বৈঠকের অগ্রগতি সম্পর্কে ‘এই মুহূর্তে কোনও কিছু বলা যাচ্ছে না’ বলেও জানানো হয়। ইন্দিরা গান্ধীর সাথে বৈঠকের সময় আজিজ আহমেদকে সাহায্য করেন তার পররাষ্ট্র সচিব ও পররাষ্ট্র দফতরের পরিচালক। ভারতের পক্ষে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতা পি এন হাকসার ও প্রধানমন্ত্রীর সচিব পি এন ধর।

এদিন দুপক্ষের মধ্যে কোনও আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি, যদিও এদিন বৈঠক হবে বলে আগের দিনই ঘোষণা করা হয়েছিল। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, বাংলাদেশ কর্তৃক ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীর বিচার করলে পাকিস্তান পাল্টা ২০৩ জন বাঙালির বিচারের যে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে, সে বিষয়ে এবং বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানিদের দেশে পাঠানোর মতো বিষয়ে ইসলামাবাদ থেকে নির্দেশনা পেতে পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলকে সুযোগদানের জন্য বৈঠক স্থগিত রাখা হয়। 

1

এ দুটি প্রধান বিষয়ে মতবিরোধে রাওয়ালপিন্ডির প্রথম দফার বৈঠকও মুলতবি রাখা হয়েছিল। আর সেই মতবিরোধে বর্তমান বৈঠকের প্রতিনিধিদলকে মতৈক্যের একটা ভিত্তিতে পৌঁছাতে বাধা দিচ্ছে। উল্লেখিত দুটি প্রশ্নে পাকিস্তান প্রতিনিধি দল যদি মানবিক না হয় তাহলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা খুবই কঠিন হবে বলেও খবরে বলা হয়।

ইন্দিরার কাছে ভুট্টোর চিঠি
খবরে প্রকাশ, এই বৈঠকের সময় পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলের নেতা আজিজ আহমেদ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নিকট পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ভুট্টোর একটি চিঠি দেন। খবরে আরও বলা হয়, ভারত পাকিস্তান পর্যায়ের বৈঠকে যোগদানকারী ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতা বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে বারবার সতর্ক আশাবাদ প্রকাশ করে। এ পর্যন্ত তিনটি আনুষ্ঠানিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিকল্পনামন্ত্রীর সঙ্গে সফররত প্রতিনিধিদলের আজিজ আহমেদ এক বৈঠকে মিলিত হন কিন্তু এসবের কোনও ফল হয়নি। পর্যবেক্ষকরা এখন শেষ ভরসা দেখছেন ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আজিজ আহমেদের বৈঠকের ওপর। তারা আশা করেন, এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে হয়তো শেষ পর্যন্ত অগ্রগতি হতে পারে। 

যেসব প্রশ্নের দু'পক্ষ ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে পারেনি সেগুলো হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানিদের ফেরত পাঠানো এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার অনুষ্ঠান, পাকিস্তানে আটক ২০৩ বাঙালির পাল্টা বিচার না করা। ঢাকা যদি প্রস্তাবিত যুদ্ধাপরাধের বিচার করে তাহলে আইনগত প্রতিশোধ হিসেবে তারা ওই ২০৩ জনের বিচার করবে বলে স্থির করে পাকিস্তান। তবে বাংলাদেশ এ কথা একেবারে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে যে, এটা বাংলাদেশের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কেননা, ঢাকা মনে করে এতে পাকিস্তানের যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে নিরীহ বাঙালিদের এক করে দেখা হচ্ছে।

3

বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানিদের ফেরত পাঠানোর উদ্দেশ্য-অসুবিধার কথা জানানো হয়। সফররত প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ থেকে শুধু সেসব পাকিস্তানিকে গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে, যাদের নিলে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভবান হবে এবং ঢাকার পতনের পরে যারা পাকিস্তানে বসবাসকারী নিজেদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। পাকিস্তানি প্রতিনিধিদলকে বলা হয়েছে এটা বাংলাদেশের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তারা ২ লাখ ৬০ হাজার পাকিস্তানিকে পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। ঢাকা বড়জোর কোনও নিরপেক্ষ এজেন্সিকে যাচাই করে দেখার অনুমতি দিতে পারে। 

কিন্তু পাকিস্তানকে অবশ্যই তাদের সবাইকে গ্রহণ করতে হবে। উপমহাদেশে এ ব্যাপারে যারা বিশেষজ্ঞ তাদের মত হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে মাত্র সীমিত সংখ্যক পাকিস্তানিকে গ্রহণ করার সম্মতি দিয়ে পাকিস্তানের প্রতিনিধি দল বস্তুত ভারত-বাংলাদেশের যৌথ ঘোষণাটির একটি বড় রকম সংশোধনী আনতে চাইছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের পদক্ষেপ উপমহাদেশে সমঝোতা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির সমস্ত প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করে দেবে।