‘ভয়াল ২১ আগস্ট’

গ্রেনেড হামলায় মুখ্য ভূমিকা ছিল তারেকের: প্রধানমন্ত্রী

বিএনপির চেয়ারপারসন ও তার ছেলে তারেক রহমান ২১ আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি-জামায়াত চার দলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী এবং সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের নিয়ে এ ভয়াবহ হামলার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল বলেও তিনি জানান।

‘ভয়াল ২১ আগস্ট’ শীর্ষক এক সাক্ষাৎকারে এ সব কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাক্ষাৎকারটি শনিবার (২১ আগস্ট) রাতে বিটিভিতে প্রচার হয়।  

প্রধানমন্ত্রী ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা তুলে ধরে বলেন, বালাদেশে বিএনপি সরকারের আমলে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য সৃষ্টি হয়েছিল। তখন জঙ্গিবাদ, বাংলাভাইদের সৃষ্টি, সন্ত্রাস, বোমা-হামলা এসব প্রতিনিয়ত চলছিল। এসব ঘটনা তো ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চলতে থাকে। ২০০৪ সালে যখন সিলেটে হযরত শাহজালালের মাজারে গ্রেনেড হামলা হয়, সেখানে ৩-৪ জন লোক মারাও যায়। ব্রিটিশ হাইকমিশনারও আহত হন। গ্রেনেড হামলা করে তাকে আহত করে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার প্রতিবাদে আমরা ২১ আগস্ট মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সরকার অনুমতি দেয়নি। যখন দেয়নি তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আওয়ামী লীগ অফিসের সামনেই করবো। প্রস্তুতিও নিয়েছিলাম। তখন ঠিক আগের দিন রাতে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে করার পারমিশন দেয়। সেখানেই সমাবেশ করি। বক্তব্য রেখে আমি মাইকটাও হাত থেকে রাখতে পারিনি এরইমধ্যে বোমার আওয়াজ। সঙ্গে সঙ্গেই আমার নেতাকর্মীরা আমাকে ধরে বসিয়ে দেয়। হানিফ ভাইয়ের কথা আমি বলবো। সে ছিল। তাছাড়া মামুন ছিল। সে ছুটে আসে। সবাই ওখানে ছিল। সবাই ট্রাকের মধ্যে আমাকে ঘিরে রাখে। একটার পর একটা গ্রেনেড... প্রথমে তিনটা তারপর তিনটা, এভাবে প্রায় এক ডজনের কাছাকাছি গ্রেনেড তারা ছোড়ে। সত্যি কথা বলতে কি, তখন নিজের কথা ভাবার চেয়েও আমার চিন্তা ছিল এতগুলো মানুষ আমরা ট্রাকের ওপরে আর আশেপাশে আমার দলের নেতাকর্মীরা সবাই। সে সময় কার যে কী অবস্থা কিছুই বুঝতে পারছি না। যখন একটা পর্যায়ে গ্রেনেড হামলা থামলো। আমাকে ঘিরে রেখেছিল বিশেষ করে হানিফ ভাই- তখন ঢাকার মেয়র। সব স্প্লিন্টার তার মাথায় লাগে। ওই রক্ত আমার কাপড়ে চলে আসে। সবাই মনে করে আমি আহত। আমি বললাম আমার কিছু হয়নি, কিন্তু আমার চশমাটা হারিয়ে যায়। ওখান থেকে আমাকে গাড়িতে নিয়ে আসা হয়। গাড়িতে উঠতে যাবো, আমার সঙ্গে একজন সেনাকর্মকর্তা মাহবুব, আমার ড্রাইভার, ও গেটটা খুলে দাঁড়ায় ঠিক সে সময় গুলি একটা চলে আসে। মাহবুব গুলিবিদ্ধ হয়ে ওখানেই মারা যায়। সেময় পুলিশ ওখানে লাঠিচার্জ শুরু করে, টিয়ার গ্যাস মারে, সেটা আমি পরে জানতে পেরেছি। নিজের কথা ভাবিনি, আমি জানি মৃত্যু যে কোনও সময় আসতে পারে। সন্ত্রাসবিরোধী সভা, আর সেখানে আমরা সন্ত্রাসের স্বীকার হলাম। সাধারণত মিটিং করতে গেলে ঘেরাও করে রাখে, আসতে বাধা দেয়। সেদিন কোনও প্রস্তুতিও নেই। আমাদের পার্টির ভলান্টিয়ার যারা সব সময় আমাদের মিটিংয়ে তারা ছাদে চলে যায় সেদিন। কিন্তু কাউকে যেতে দেয়নি, পুলিশ বাধা দিয়েছে। অর্থাৎ আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে যে ব্যবস্থাটা নিতে চাইলাম সেটা নিতে দেয়নি। হয়তো আল্লাহ আমার জীবনটা বাঁচিয়ে রেখেছে কারণ এরকম কয়েকবারই তো আমি এ ধরনের হামলার শিকার হয়েছি। হয়তো আমার হাত দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের কিছু কল্যাণ আসবে, সেজন্য বেঁচে গিয়েছি। তাছাড়া আর কী!

আওয়ামী লীগকে কেন নেতৃত্ব শূন্য করার ষড়যন্ত্র? এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনটি গড়ে তুলেছিলেন এবং এই সংগঠনের জন্য তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন, এ দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত বাঙালির মুক্তি নাই। তিনি যখন স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন তাকে তখন গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হলো। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার একটা প্রচেষ্টা তো ছিলই। তার কারণ জাতির পিতার হাতে গড়া এই আওয়ামী লীগকে নিয়েই তিনি বাঙালিকে ঐক্যবব্ধ করেছেন, সুসংগঠিত করেছেন। প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছেন। যারা আমাদের স্বাধীনতা চায়নি, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের দোসর ছিলো, যারা পকিস্তানের সরকারকে সমর্থন করেছে, পদলেহন করেছে তারা এদেশের স্বাধীনতাই চায়নি। আওয়ামী লীগের ওপর তাদের ক্ষোভ এ জন্যই যে আওয়ামী লীগই এদেশের স্বাধীনতা, আন্দোলনে সংগ্রামে ভূমিকা পালন করেছে। পাকিস্তান পরাজিত হয়, সে জন্যই এত ক্ষোভ।

হামলার পর তখনকার বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আচরণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া কিন্তু তার একটি বক্তব্যে একটা ম্যাসেজ দেয়। সে যখন বক্তৃতা দিলো আওয়ামী লীগ এক শ বছরে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আর একবার এক বক্তৃতায় বললো, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধীদলের নেতাও হতে পারবে না। এর মধ্য থেকেই তো বোঝা যায় তার উদ্দেশ্যটা কী ছিল। আর এর সঙ্গে যে ওই সরকারের সবাই জড়িত ছিল এটা স্পষ্ট। তার ক্যাবিনেটের মন্ত্রী সালাম, পিন্টু এর সঙ্গে জড়িত, তখন ডিজিএফআই, এনএসআই-এর কর্মকর্তা, পুলিশের কর্মকর্তারা- তাদের নিয়েই এ চক্রান্ত করা হয়। তারচেয়ে বড় কথা যে, তার ছেলে তারেক রহমান, সে তো দীর্ঘদিন এই ষড়যন্ত্র, এটাকে কার্যকর করা, ষড়যন্ত্র তৈরি করায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। খালেদা জিয়া নিশ্চয়ই তার পেছনে ছিল এবং তাকে সমর্থন দিয়েছে। আর একটা কথা বলে রাখি, এই ঘটনার আগে তারেক জিয়া কিন্তু ৫ নম্বর (ধানমণ্ডি) রোডে তার শ্বশুড়বাড়িতে অবস্থান করেছে অনেক দিন বা কয়েক মাস। আর ঠিক আগস্টের আগে সেই বাড়ি ছেড়ে চলে যায় ক্যান্টনমেন্টের ভেতর। তখন আমার কাছে একটা খবর ছিল যে, ও এই জায়গায় বসে বসে কিছু একটা পাকাচ্ছে। যেমন রমনার বটমূলে বোমা হামলা এবং উদীচীর মিটিংয়ে বোমা হামলা এবং এ রকম আরও অনেকগুলো বোমা হামলা, আওয়ামী লীগের নেতাদের ওপর হামলা- এ হামলাগুলো যে একে একে হচ্ছে ওই সময় কিন্তু তারেক জিয়া ওখানে। হাওয়া ভবন... সেখানে যত ধরনের দুর্নীতির আখড়া আর এ ধরনের যত চক্রান্ত সব সেখানে বসে করা- এটাই ছিল তার কাজ। গ্রেনেড হামলার পর একটা গ্রেনেড অবিস্ফরিত ছিল। একজন সেটা রেখে দিতে চেয়েছিলেন যে পরে মামলার কাজে লাগবে। কিন্তু খালেদা জিয়া শোনার সঙ্গে সঙ্গে ধমক দিয়েছে- না ওটা রাখা যাবে না। মানে যেন ধ্বংস করে দেওয়া হয়। সিটি করপোরেশনের গাড়ির পানি দিয়ে সব আলামত ধুয়ে ফেলা হয়। তারপর একটা তদন্ত কমিশন করলো। কমিশন রিপোর্ট দিলো কি- পাশের দেশ থেকে এসে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

সে সময়কার সংসদে ঘটনা তুলে ধরতে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দলের এতজন এমপি আহত। আইভি রহমান নিহত হয়েছেন। আরও অনেত নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। অনেক এমপি আহতাবস্থায় চিকিৎসাধীন। আমরা যারা ছিলাম কথা বলতে চেয়েছিলাম, কথা বলতে দেবে না পার্লামেন্টে। আলোচনাই করতে দেবে না। খালেদা জিয়াতো বলেই বসলো ওনাকে আবার কে মারতে যাবে। তার এবং তার নেতাদের বক্তব্য হচ্ছে উনিতো নিজেই ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন। আমিতো ব্যাগ ছাড়াই মঞ্চে উঠেছি। তা হলে গ্রেনেডটা নিলাম কীভাবে। আর গ্রেনেড মারতে এতটা পারদর্শীই বা হলাম কীভাবে? আর এটা হলো আর্জেস গ্রেনেড। যেটা যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এটা পাকিস্তান থেকেই আসা, যেটা তদন্তে পরে বের হয়েছে। কাজেই সবকিছুতেই যে তাদের সম্পৃক্ততা ছিল সেটা বোঝাই যায় এবং ওই দিন খালেদা জিয়া কোথায় ছিল? খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়া কিন্তু ঢাকায় ছিল না। একজন লক্ষীপুরে আরেকজন গোপালগঞ্জে। আর এই ধরনের জঘন্য কাজ- দিনের বেলায় একটি রাজনৈতিক দলের জনসভায় প্রকাশ্য হামলা আমার মনে হয় পৃথিবীতে আর হয়নি। রণক্ষেত্রে যা ব্যবহার করে তা তারা ব্যবহার করলো সাধারণ মানুষের ওপর, একটা দলের ওপর।

ওই দিন তাকে হত্যার মিশন সফল হলে বাংলাদেশের অবস্থা কী হতো জানতে চাওয়া হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সবাই এটা বিশ্বাস করে। কারণ ওই সময় খালেদা জিয়ার আমলেই যেভাবে সন্ত্রাসীদের মদদ দেওয়া হয়েছে। রাজশাহীতে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে বাংলাভাই মিছিল করেছে। পুলিশ তাদের পাহাড়া দিচ্ছে। বিএনপি নেতারা মদদ দিচ্ছে। নাটোর, রাজশাহীর বিএনপির বহু নেতা প্রকাশ্যে এদের মদত দানকারী। পরে জঙ্গিবাদ যেভাবে বিস্তার লাভ করে কিবরিয়া সাহেবের জনসভায় গ্রেনেড হামলা করে তাঁকে হত্যা করা হলো; সুরঞ্জিত সেনের মিটিংয়ে বোমা হামলা হলো; সিলেটে কামরানের মিটিংয়ে আরেকবার বোমা, গ্রেনেড হামলা হলো- শুধু তাই নয় এভাবে সারা বাংলাদেশে চলছিল। ১৭ আগস্ট একটা দিনে সারা বাংলাদেশের পাঁচ শ’ জয়গায় বোমা হামলা হলো। আমাদের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৬৩টি জেলায় বোমা হামলা হয়েছে। ঢাকা সিটিতে ৩৫ জায়গায় বোমা হামলা হয়। সে সময় আমি টুঙ্গীপাড়ায়। ঠিক ১১টার দিকে আমি একটা ফোন পেলাম দিনাজপুর থেকে আমাদের এক কর্মী ফোন করেছে- আপা আমাদের এখানে বোমা হামলা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে আরও কয়েকটা জেলা থেকে ফোন আসছিল। এমনকি গোপালগঞ্জ থেকেও ফোন আসছিল। সেখানেও বোমা হামলা হয়েছে। একথা শোনার পর সঙ্গে সঙ্গেই রওয়ানা হয়ে গেলাম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের একটা জিনিস আমি লক্ষ্য করতে বলি। একমাত্র মুন্সীগঞ্জে তখনও কিন্তু বোমা হামলাটা হয় নাই। আমার কিন্তু মুন্সীগঞ্জ থেকেই আসার কথা ছিল। আমি এসেছিলামও মুন্সীগঞ্জ দিয়ে। কিন্তু ওরা সময়টা হিসাব করতে পারে নাই। কারণ, আমার রওনা হওয়ার কথা টুঙ্গিপাড়া থেকে বিকাল ৩টার থেকে ৪টার দিকে এবং সেই হিসাবে আমার মুন্সীগঞ্জ পৌঁছাতে বিকেল ৫টা বা ৬টা বাজার কথা। কিন্তু আমি রওনা হয়ে গিয়েছি ১১টায়। ওই খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি সাড়ে ১১টার মধ্যে রওনা হয়ে গিয়েছি। আমাকে অনেকে ফোনে মানা করেছে যে ঢাকার সব জায়গায় বোমা। কোথায় যে বোমা পড়বে ঠিক নাই। আপনি এই সময় মুভ করবেন না, আপনি থাকেন। আমি বলি এই সময় আমাকে ঢাকায় যেতেই হবে। আমাকে থাকতেই হবে ঢাকায়। কারণ, এতগুলো জেলা থেকে খবর আসছে একটার পর একটা ফোন আসছে। ঢাকায় না থাকলে তো আমি কিছু করতে পারবো না। আমি সরাসরি রওনা হয়ে চলে আসি। ওটাও যদি কেউ একটু চিন্তা করে যে সব জেলায় হলো ওখানে হলো না। কারণ, নিশ্চয়ই তাদের ওটা একটা প্ল্যান ছিল যে আমি যখন আসবো, তখন হবে, মারবে বা কিছু করবে। কারণ, আমার যে সময় ফেরি ধরার কথা ওটার একটা হিসাব তাদের ছিল। কিন্তু, আমি তার আগেই চলে এসেছি। নরমাল যেই রাস্তা দিয়ে আসি সেভাবে না এসে আমি সোজা বিডিআরের ভেতর দিয়ে ঢুকে সুধা সদনে ঢুকি।

শেখ হাসনা বলেন, বিএনপি আমলে তো তারা একটা সন্ত্রাসী দেশ করেই ফেলেছিল এবং এতে বহু লোক তালেবানের ট্রেনিং নিয়ে চলে যায় আফগানিস্তানে। সেই মুফতি হান্নান নিজেইতো ট্রেনিং নিয়ে এসেছে। তারপর এই তাজউদ্দিন, আরেকজন যে সেও তো ট্রেনিং নেওয়া। এরা তো সব বিএনপির লোক। তাজউদ্দিন তো বিএনপির খাস এবং গ্রেনেড হামলার পর ওই দিন রাত ১১টার সময় চার জনকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে তুলে দেয়। বিশেষ ব্যবস্থায় তারা চলে যায় এবং সেখানে কিন্তু ডালিম আর রশীদও ছিল।জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যার সঙ্গে যে জিয়াউর রহমান জড়িত এবং তার স্ত্রী যে তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছে এবং ছেলেকেও সেই একই পথে নামিয়েছে এটা তো স্পষ্ট।শুধু ২১ আগস্ট নয়, আপনাকে হত্যার জন্য ২০ থেকে ২২ বার হামলা করা হয়েছে। এই যে এতবার হামলা, এত আক্রোশ কেন আপনার ওপর? এরা কারা? জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেখানেই গেছি সেখানে আমাকে বাধা দেওয়া হয়েছে। আমি যখন খুলনার থেকে রাজশাহী রওনা হলাম এত মানুষ! মানুষের ঢল সব জায়গায়। কারণ ১৫ আগস্টের পর মানুষ কিছু বলতে পারেনি। কিন্তু আমি আসার পরে মনে হলো মানুষের একটা জোয়ার চলে আসলো। আমাদের পথে পথে মিটিং করতে করতে এত সময় লাগলো যে রাত ১১টার দিকে আমি ঈশ্বরদীতে গিয়ে মিটিং করি। যে মিটিং আমার বিকালে করার কথা। নাটোরে ঢুকবো, নাটোরে আমার মিটিংয়ের মঞ্চ ভেঙে দিলো, আগুন দিয়ে পোড়ালো। আমাদের নেতাকর্মীদের ধান ক্ষেতে, এখানে সেখানে মেরে ফেলে রেখে দিলো। এটাতো আমি যখন আসছি ওই সময়েই। আমি মে মাসে এসেছি, এটা বোধ হয় জুন বা জুলাইয়ের ঘটনা। এইভাবে কিন্তু সব সময় তারা আমাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

তিনি বলেন, ১৫ আগস্টের পর আমাদের দেশে আসতে দেওয়া হয়নি। জিয়াউর রহমান রেহানার পাসপোর্টটা রিনিউ করতে দেয়নি। যেহেতু আমি দিল্লিতে ছিলাম সেখানে বাংলাদেশের হাইকমিশনার ছিলেন শামসুর রহমান সাহেব, সিএসপি অফিসার। আমাদের পাসপোর্টটা তিনি রিনিউ করে দিয়েছিলেন। আমরা যাতে দেশে আসতে না পারি সেই বাধা ছিল। তারপরে যখন আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে তখন তো আমি সিদ্ধান্ত নেই চলে আসবোই। তারপর স্বাভাবিকভাবে ওই স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী যে গোষ্ঠীটা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে, বুদ্ধিজীবী হত্যা করেছে, গণহত্যা করেছে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে গেছে, মেয়েদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করিয়েছে; এই শক্তিটাই তো জিয়ার আমলে মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে যেমন জাতির পিতা যেটা উপহার দিলেন মাত্র ৯ মাসের মধ্যে। সেখানে আমাদের গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা-এগুলোতো আমাদের উল্লেখ করা ছিল। কারণ, তখন এসে গেছে মার্শাল ল। মার্শাল ল তো আর গণতন্ত্র না। কাজেই গণতন্ত্রও চলে গেলো, ধর্মনিরপেক্ষেতা, সমাজতন্ত্র সবই গেলে। অর্থনৈতিক মুক্তিটুক্তি সবই বাদ। এই যে পরিবর্তনটা এটা কাদের খাতিরে করা? ওই পরাজিত পাকিস্তানি শক্তি, তাদেরই তোষামোদি খোশামোদি, তাদেরই পদলেহনকারী; যারা আমাদের সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করে বাংলাদেশের যে মূল আদর্শ, যে লক্ষ্য, যে গরিবের জন্য কাজ করা, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো সেটাই তারা করতে চায়নি। বরং ক্ষমতায় গিয়ে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে একটা এলিট শ্রেণি তৈরি করে তাদের দিয়ে দেশ চালানো বা তাদের নিয়ে ক্ষমতায় থাকা এবং আবার বাংলাদেশ ওই পাকিস্তানি একটা প্রদেশ হয়ে যাক সেটাই ছিল তাদের মানসিকতা।

তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান তো পাকিস্তানি আর্মিতে যোগদান করেছিল এবং তার বাপ মা’র কবরও কিন্তু পাকিস্তানে। তারা কিন্তু ইন্ডিয়া থেকে পাকিস্তানেই চলে এসেছিল। তারা কিন্তু বাংলাদেশে বিশ্বাস করতো না। জিয়াউর রহমান কোনোদিন তা বিশ্বাস করেনি, সেটা হলো বাস্তবতা। তার সঙ্গে যারা আমাদের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এবং যাদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আমরা শাস্তি দিলাম। যাদের শাস্তি শুরু হয়েছিল জিয়াউর রহমান এসে বিচার বন্ধ করে দেয়। বিচার বন্ধ করে দিয়ে তাদের ক্ষমতায় বসায়। মন্ত্রী, উপদেষ্টা বানায়। সেই যুদ্ধাপরাধীরা, তাদেরই রাজত্ব হয়ে যায়, তারাই দেশ চালায়। যেই আদর্শ নিয়ে লাখো শহীদ রক্ত দিলো যে লক্ষ্য নিয়ে, সেটা তো সম্পূর্ণ অস্বীকার করলো।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পুরো ইতিহাসইতো বিকৃত করা হয়ে গিয়েছিল। আমি আসার পরে স্বাভাবিকভাবে সেই বাস্তবতাটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সেই আদর্শটাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছি। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করে দেশ যেন মর্যাদাপূর্ণ একটা দেশ হয় সেই চেষ্টা করেছি। আর এদের প্রচেষ্টা কী ছিল, তারা মনে করতো বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এটা যেন কোনোদিন আর মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে না পারে। বাংলাদেশ কোনোদিন যেন আর বিশ্ব দরবারে মর্যাদা না পায় বা স্বাধীনতা যেন অর্থবহ না হয়। এটাইতো আসল উদ্দেশ্য ছিল তাদের। এটাই তো তাদের মূল। সে জন্যই তাদের এই প্রচেষ্টা ছিল।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে তো বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে গেছে। আমরা যদি মাত্র ১২ বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে একটা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে পারি তাহলে জাতির পিতা বেঁচে থাকতেন তো ৪০ বছর আগেই আমরা সেটা অর্জন করতে পারতাম। আমি এসে সেই আদর্শ নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু তারাতো সেটা চায়নি। তারা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস করে সেই তালেবান এবং সেই সময় কিন্তু একটা স্লোগান চলতো বাংলাদেশে আমি কোট করছি, ‘আমরা সবাই তালেবান বাংলা হবে আফগান’ আজকে আফগানিস্তানের অবস্থাটা দেখেই তারা দেখুক যে সেখানকার অবস্থাটা কী। সেটাই বাংলাদেশে করতে চেয়েছিল। যেটা হয়তো আমরা আছি বলে পারেনি। এটা আমাদের দেশের মানুষকেও আরও বুঝতে হবে। বিশেষ করে আমি বলবো, আমাদের তরুণ সমাজকে ইতিহাস এবং শিকড়ের সন্ধান করে তাদের সেই আদর্শ নিয়েই চলতে হবে, যেন এই লাখো শহীদের রক্ত বৃথা না যায়। আর এ দেশের মানুষের জন্য তো আমার মা-বাবা সবাই জীবন দিয়ে গেছেন। আমার বাবার তো জীবনে কোনও চাওয়া পাওয়া নেই। তিনি তো যা কিছু করেছেন এ দেশের মানুষের জন্যই করে গেছেন।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, হ্যাঁ, বারবার আঘাত এসেছে। সেই ৮১ সালে আমি বাংলাদেশে নামার পর থেকেই আমার ওপর হামলা হচ্ছে। আর আল্লাহ আমাকে কীভাবে যেন বাঁচিয়ে দিচ্ছেন। হয়তো আল্লাহ সবার জন্য কিছু কাজ লিখে দেয়। হয়তো আমার ওপরে এই দায়িত্বটা আছে যে এই বাংলাদেশটাকে যেই মর্যাদাটা হারিয়ে গেছে সেই মর্যাদাটা ফিরিয়ে দেওয়া। আর এই গরিব দুঃখী মানুষের জন্য আমার আব্বা যে কাজ করতে চেয়েছিলেন সেটা যেন হয়। এটাই বোধ হয় আল্লাহর ইচ্ছা। আর সেটা যেন আমার হাত দিয়ে হয়। আল্লাহ সেটা চাচ্ছিলেন বলেই বারবার আমাকে হামলা থেকে বাঁচিয়েছেন এবং এই যে আমি যতটুকু সফলতা অর্জন করছি বা যতটুকু বাংলাদেশের জন্য করতে পারছি বা বাংলাদেশের গরিবের জন্য করতে পারছি এটাও আমি মনে করবো যে, একদিকে আমার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, অপরদিকে বাংলাদেশের জনগণ এবং ওপরে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ইচ্ছায়। এটাই হলো বাস্তবতা। তা না হলে আমার তো এ দেশে থাকার কথা না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখানে খুনিরা অবাধে চলছে। জিয়াউর রহমান তাদের পুরষ্কৃত করেছে। তাদের সংসদ সদস্য করা হয়েছে। তাদের সব রকমের বিদেশি দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরষ্কৃত করা হয়েছে। সেই খুনিদের একজনকে প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যান্ডিডেট করা হয়েছে। যেখানে এই রকম অবস্থা, রশীদকে খালেদা জিয়া এমপি বানালো। রশীদ এবং হুদাকে সংসদ সদস্য বানিয়ে নিয়ে আসলো। ফারুককে এরশাদ প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যান্ডিডেট করলো। জিয়াউর রহমান তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে, কূটনৈতিক মিশনে চাকরি দিয়ে পুরষ্কৃত করলো। সেই দেশে কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকে? এরা তো বাংলাদেশটাকেই জঙ্গি রাষ্ট্র করতে চেয়েছিল।

তিনি বলেন, যাই হোক আমি দেশবাসীকে এটা বলবো যে তাদের সচেতন থাকতে হবে। আমরা ওই আফগান হতে চাই না। বাংলাদেশ বাংলাদেশই হবে। বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। হ্যা, আল্লাহ যতদিন হায়াত দিয়েছে ততদিন বেঁচে থাকবো। মৃত্যু তো অবধারিত। ‘জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে? চিরস্থির কবে নীড় হায়রে জীবন নদে’। এটা তো কবি বলে গেছেন। আর সেটাই আমি মনে করি। একবার যখন জন্মেছি মরতে হবেই। আজকে মরি, কালকে মরি সবই আল্লাহর ইচ্ছা। আল্লাহ একদিন জীবন দিয়েছেন তিনি যেদিন ইচ্ছা জীবন তুলে নেবেন। কাজেই, এ নিয়ে আমার কোনও চিন্তা, দুশ্চিন্তা নাই। আমি একটাই চিন্তা করি, সকালে উঠে ভাবি, একটা দিন পেলাম। অন্তত দেশের মানুষের জন্য একটু কাজ করতে পারবো। ব্যাস, এইটুকুই।

তার ওপর বার বার হামলার পরও তিনি লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি এ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা আমার আব্বার কাছ থেকে শিখেছি। মার কাছ থেকে শিখেছি। এই দেশের মানুষ ক্ষুধার্ত, তাদের ছিন্ন কাপড়, ঘর নাই, চিকিৎসা নাই, শিক্ষা নাই। আমি ৮১ সালে এসে সারা বাংলাদেশ যখন ঘুরেছি ওই একই দৃশ্য। ঠিক যেই দৃশ্য দেখে আমার বাবা এই দেশ স্বাধীন করেছিলেন। কিন্তু তাকে তো করতে দেওয়া হলো না। একটা যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ গড়ে তুলে তিনি যখন দেশটাকে কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেই সময় কিন্তু ঘাতকের দল হত্যাটা করলো। কারণ, তারা দেখলো যে এই বাংলাদেশকে আর থামানো যাবে না। তাকে শেষ করে দিলো অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে শেষ করতে পারলেই আটকানো যাবে। ঠিক সেটাই হলো। ২১টা বছর বাংলাদেশের মানুষের কী অবস্থাটা ছিল। কোনও পরিবর্তন তো হয়নি। তারপরে আমরা সরকারে আসার পর থেকে যখন কাজ করেছি আস্তে আস্তে সেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার জনগণের সেবক, আমরা ঠিক সেই সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। দ্বিতীয় পর্যায়ে (ক্ষমতায়) এসে বাংলাদেশকে আমরা অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নশীল করতে পেরেছি এবং আজকে আমাদের লক্ষ্য দারিদ্র বিমোচন। মুজিববর্ষ আমরা উদযাপন করছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি। আমার তো একটাই কথা যে একটা মানুষও গৃহহারা থাকবে না। এটা আমার মনের শক্তি, যেটা ছোটবেলার থেকে বাবা মায়ের কাছে শেক্ষা। আর আল্লাহর ওপর ভরসা রেখেছি সব সময়। বাংলাদেশের জনগণের কাছ থেকে যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি বা তাদের যেই সমর্থনটা পেয়েছি। কারণ বাবা-মা, ভাই-বোন সব হারিয়ে যখন একা আসলাম, (৮১ সালে বাংলাদেশে ফেরার সময়) আমার ছোট দুটো বাচ্চাকে রেহানার কাছে দিয়ে আসলাম। একজন ১০ বছরের, একজন ৮ বছরের। তাদের তো মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত করেছি। আমি আসলাম বাংলাদেশের জনগণের জন্য।

তিনি বলেন, আমি বলবো যে, আমার শক্তি বাংলাদেশের জনগণ। আমার সাহস আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। আর শিক্ষা আমার বাবা মা’য়ের।

২১ আগস্ট যারা নিহত হয়েছিলেন তাদের পরিবারবর্গ বা যারা আহত হয়েছিলেন তাদের জন্য কী কী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে জানতে চাওয়া হলে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, যারা মারা গিয়েছে সেই পরিবারকে সাহায্য করা হয়েছে। ধন্যবাদ সেই সময় যারা এগিয়ে আসছেন, আমাদের ফান্ডে টাকা দিয়েছেন। আমরা আলাদা একটা অ্যাকাউন্ট করে সবাইকে সাহায্য করেছি। তাছাড়া সব চিকিৎসার জন্য দেশে বিদেশে পাঠিয়ে আমরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে আমি তাদের এখন পর্যন্ত চিকিৎসার জন্য টাকা দিয়ে যাচ্ছি। অনেক পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছি। যারা মারা গেছে ঢাকা শহরে তাদের সবাইকে ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছি। তাছাড়া, যারা নিজের দেশে আছে সে দেশে ঘরবাড়ি তৈরি করে দেওয়া, তাদের জীবন জীবিকার জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া, ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করাসহ সব রকম সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। এর মধ্যে পরবর্তীতে যারা আহত ছিল অনেকেই মারা গেছেন। কিন্তু, তারপরও তাদের ছেলে মেয়েদের জন্য যা যা সহযোগিতা করার আমরা করে যাচ্ছি।

২১ অগস্টের বিয়োগান্তক দিনে দেশবাসীর উদ্দেশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশবাসীকে এটাই বলবো, আমি যতক্ষণ বেঁচে আছি দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাব। কারণ, আমি তো দেশের মানুষের কাছে ওয়াদা দিয়েছি, এই বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য যেভাবে আমার বাবা মা জীবন দিয়ে গেছেন। এ দেশের মানুষের জন্য আমি সেভাবে আমার জীবন দিতেও সব সময় প্রস্তুত। আমি মৃত্যুকে ভয় করি না। উপরে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, তাকেই ভয় করি এবং তারই দোয়া আর জনগণের সমর্থন। জনগণের দোয়া নিয়েই আমি চলি। কাজেই আমার এই পথ চলায় আমার একটাই লক্ষ্য যে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে এই বাংলাদেশকে একটা উন্নত, সমৃদ্ধ, সুখী বাংলাদেশ করবো। কাজেই, এ ক্ষেত্রে দেশবাসীর সহযোগিতা চাই, দোয়া চাই এবং সবাই ভালো থাকেন, সুস্থ থাকেন সেটাই আমি চাই।