দেশের প্রথম আর্চওয়ে ব্রিজ ‌‌নির্মাণের অনুমোদন একনেকে

ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর দেশের ইতিহাসে প্রথম এক হাজার ১০০ মিটার আর্চওয়ে ব্রিজ (ধনুকের মতো ব্রিজ) নির্মাণে প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক। প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী এ ব্রিজটি নির্মাণে নদীর মধ্যে কোনও পিলার থাকবে না। মূল অংশের দৈর্ঘ্য হবে ৩২০ মিটার। এটাকে দেশের প্রথম মডেল ব্রিজ হিসেবে নেওয়া হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী এবং একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শেরে বাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

ময়মনসিংহে ‘কেওয়াটখালি সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৬৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে চীনের নেতৃত্বাধীন এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ঋণ হিসেবে দেবে এক হাজার ৯৩০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আর সরকারি অর্থায়ন এক হাজার ৩৫৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এ বছরের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ।

প্রকল্পের আওতায় ৩৩ দশমিক ২ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ৪৫৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা এবং পুনর্বাসনের জন্য ৯০ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ১০ দশমিক ৬৪ লাখ ঘনমিটার মাটির কাজের জন্য ৭৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে—ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর একটি ব্রিজ, ওভারপাস ও ৬.২ কিলোমিটার সড়ক পৃথক এসএমভিটি লেনসহ চার লেন নির্মাণের মাধ্যমে ময়মনসিংহ বিভাগের আওতাধীন উত্তরাঞ্চলের জেলাসহ এ অঞ্চলের স্থলবন্দর, ইপিজেড এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর সঙ্গে রাজধানী ঢাকার নিরাপদ, উন্নত ও ব্যয়সাশ্রয়ী যোগাযোগ স্থাপন করা।

প্রকল্পের আওতায় দুই হাজার ৯৩ মিটার ব্রিজ ফাউন্ডেশন এবং সাবস্ট্রাকচার, ৩২০ মিটার স্টিল আর্চ ব্রিজ সুপারস্ট্রাকচার, এক ৭৭৩ মিটার কংক্রিট ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ, সড়ক বাঁধে ১৪ দশিমক ৬৫ লাখ ঘনমিটার মাটির কাজ, ৬ দশমিক ২০ কিলোমিটার পেভমেন্ট নির্মাণ, একটি টোল প্লাজা নির্মাণ, ৩৩ দশিমক ০২ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন, ইউটিলিটি স্থানান্তর, ড্রেইনেজ, রোড মার্কিং, সাইন-সিগনাল, বেরিয়ার, গার্ড রেল, রেস্ট এরিয়া নির্মাণসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ।

প্রকল্পে ব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ার প্রশ্নে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রাথমিকভাবে আমার কাছে সেটা মনে হয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্পে সাড়ে ৬ কি. মি. চারলেন সড়কসহ একাধিক ওভারপাস আন্ডারপাস রয়েছে। এছাড়া আরও কিছু ব্যয় রয়েছে। ফলে সার্বিকভাবে খরচ বেশি নয়।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশিদ বলেন, যদি ব্রিজের দৈর্ঘ্য ৩২০ মিটার মনে করেন তাহলে বেশি মনে হতে পারে। কিন্তু ৩২০ মিটার স্টিল আর্চ ছাড়াও দুই পাশে গার্ডার থাকবে যেটা ব্রিজের অংশ। আমরা অন্যান্য ব্রিজের ব্যয়ের সঙ্গে এটা তুলনা করেছি। খরচ তুলনামূলক বেশি নয়।

ব্রিজটি বিশ্বের বিখ্যাত কোনও ব্রিজের আদলে হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব জানান, এটা বিশ্বের কোনও ব্রিজের আদলে করা হচ্ছে কিনা সেটা জানা নেই। তবে এটি নতুন প্রযুক্তির স্টিল আর্চ ব্রিজ। এ সেতুর নদীর ৩২০ মিটারে কোনও আরসিসি পিলার থাকবে না। এতে করে নদীর পানিপ্রবাহ ঠিক থাকবে। নেভিগেশনে কোনও সমস্যা হবে না।

৫০ কোটি টাকার বেশি পরামর্শক ব্যয় প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, এটি একটি নতুন প্রযুক্তির সেতু। এ বিষয়ে আমাদের দক্ষ জনবল নেই। যার কারণে বিদেশ থেকে পরামর্শ সুবিধা নিতে হবে।