উপমহাদেশ প্রশ্নে ভারত-পাকিস্তান চুক্তিতে আসার আভাস

বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২৭ আগস্টের ঘটনা।)

১০ দিনব্যাপী জটিল আলাপ-আলোচনার পর ভারত এবং পাকিস্তানের প্রতিনিধি দল ১৯৭১ সালের যুদ্ধ থেকে সৃষ্ট মানবিক সমস্যাবলি সম্পর্কিত বেশিরভাগ বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছেছে। এদিন (২৭ আগস্ট) বিকালে অনুষ্ঠিত কয়েক ঘণ্টাব্যাপী দীর্ঘ বৈঠকের পর ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতা পি এন হাকসার বলেন, ‘কিছু কিছু বিষয়ে এখনও বাছাই করতে হবে।’ তার জন্য আবারও বৈঠকে মিলিত হবেন তারা। আগে সকালে দুই প্রতিনিধি দল সমস্যাগুলো সমাধানে না পৌঁছানো পর্যন্ত বৈঠক চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সমঝোতায় আসে।

এদিন সকালের বৈঠকটি একঘণ্টা স্থায়ী হয়েছিল। বৈঠক শেষে হাকসার এরকম আভাস দিয়েছিলেন যে, বৈঠকে সৃষ্ট অচলাবস্থার অবসান ঘটছে। তবে কোন কোন প্রশ্ন বাছাই করা বাকি, তা এখনও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। আলোচনায় প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল—বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তান যেসব পাকিস্তানি নাগরিককে ফেরত নেবে, তাদের সংজ্ঞা নির্ধারণ। সম্ভবত তারা এমন একটি সূত্রে পৌঁছেছেন, যাতে বাংলাদেশ থেকে যুক্তিসঙ্গত সংখ্যক পাকিস্তানি নাগরিক সে দেশে ফেরত যেতে পারে। উল্লেখ্য, পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের নেতা আজিজ আহমেদ প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিংয়ের  সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হওয়ার পরপরই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মাঝে মতৈক্যে পৌঁছানোর জন্য এদিন উপর্যুপরি চেষ্টা চলে। ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকে আজিজ আহমেদ মধ্য পথে সৃষ্ট অন্তরায়গুলো নিরসনের জন্য কিছু নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী মনে হয় কিছু নতুন নির্দেশ করেন। পূর্ববর্তী খবরে প্রকাশ—মীমাংসায় পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন হলে আজিজ আহমেদ নয়া দিল্লিতে তার অবস্থানের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করে দেখবেন। আগের কর্মসূচি অনুযায়ী, আজিজ আহমেদের ২৮ আগস্ট ইসলামাবাদ রওনা হওয়ার কথা।

চুক্তিপত্র তৈরির বিষয়ে এদিন সকালে এক ঘণ্টাব্যাপী অধিবেশনটির পরপরই সুস্পষ্ট আভাস পাওয়া যায়। প্রতিনিধি দল একটি সম্ভাব্য চুক্তির খসড়া তৈরির কাজ শুরু করেছে বলে জানানো হয়। চলতি বৈঠকে এই প্রথমবার ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনগত উপদেষ্টা অধিবেশনে যোগ দেন। বিকালের অধিবেশনটি বেলা তিনটায় শুরু হয়ে রাত ৮টা ১০ মিনিটে শেষ হয়। দুই পক্ষের সব সদস্যই এদিন অধিবেশনে যোগ দেন।

ওয়াকিবহাল সূত্রে প্রকাশ, দুই দেশের মধ্যে কোনও চুক্তি সম্পাদিত হলে তা বাংলাদেশ-ভারত যুক্ত ঘোষণার কাঠামোর মধ্যে থাকবে। চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার দিনকয়েকের মধ্যে আদান-প্রদান শুরু হবে বলেও জানানো হয়। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সেক্রেটারি আগাশাহী আভাস দিয়েছেন যে, এদিন উত্থাপিত পাকিস্তানের কয়েকটি প্রস্তাব সম্পর্কে ভারতকে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তবে ভারতীয় প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের সঙ্গে কোনও আলোচনা করেছে—এমন কোনও সত্যতা সমর্থিত হয়নি।

দৈনিক ইত্তেফাক, ২৮ আগস্ট ১৯৭৩কামাল হোসেনের বিদেশ সফর স্থগিত

ঢাকা থেকে এনা পরিবেশিত খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন তার নির্ধারিত আইভরিকোস্ট সফর পিছিয়ে দেন। আইনজীবীদের সম্মেলনে যোগদানের জন্য তার ঢাকা থেকে রওনা হওয়ার কথা ছিল। ভারত-পাকিস্তান বৈঠকের অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে দেশে থাকা জরুরি বলে তাকে এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এদিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার সুবিমল দত্ত সকালে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে তার দফতরে দেখা করেন এবং তার সঙ্গে কিছু সময় অতিবাহিত করেন। অনুমান করা হয় যে, সুবিমল দত্ত ড. কামাল হোসেনকে দিল্লি বৈঠকের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন।

দৈনিক বাংলা, ২৮ আগস্টবাংলাদেশ-ভারত চুক্তি সই

এদিন বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে আণবিক শক্তি শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য একটি পাঁচশালা চুক্তি সই হয়। বাংলাদেশ সরকারের প্রাকৃতিক সম্পদ, বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি গবেষণা ও আণবিক শক্তি দফতরের সেক্রেটারি কেরামত আলী এবং ভারতীয় হাইকমিশনার দুই দেশের সরকারের পক্ষ থেকে চুক্তিপত্রে সই করেন। চুক্তি সইয়ের পর ভারতীয় হাইকমিশনার সুবিমল দত্ত সাংবাদিকদের বলেন যে, ‘শুধু শান্তির উদ্দেশ্যেই পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের জন্য ভারত ওয়াদাবদ্ধ।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, পারমাণবিক ক্ষেত্রে পরস্পরের জ্ঞান আদান-প্রদানের মাধ্যমে উভয় দেশ উপকৃত হবে।