পাকিস্তান শিগগিরই স্বীকৃতি দিতে পারে

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৩০ আগস্টের ঘটনা।)

পাকিস্তান সম্ভবত খুব তাড়াতাড়ি বাংলাদেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিচ্ছে, এমনটা মনে করেন নয়াদিল্লির রাজনৈতিক মহল ও উপমহাদেশ বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করছেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টো ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সঙ্গে দেখা করে ফিরে এলে এবং পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ও রাষ্ট্র দফতরের প্রতিমন্ত্রী আজিজ আহমেদ তেহরানে গিয়ে ভারত-পাকিস্তান আলোচনা ও চুক্তির বিষয়ে অবহিত করার পর পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে। ভুট্টো অল্পদিনের মধ্যেই ওয়াশিংটনে যাচ্ছেন। উপমহাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে পিকিংও যাওয়ার কথা আজিজ আহমেদের।

দিল্লির রাজনৈতিক মহল মনে করেন, বাংলাদেশকে পাকিস্তানের স্বীকৃতি দেওয়াটা অনেকাংশে নির্ভর করছে প্রেসিডেন্ট নিক্সন ভুট্টোকে কী উপদেশ দেন তার ওপর। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন,ঘরের ও বাইরের চাপের ফলে পাকিস্তান উপমহাদেশের মানবিক সমস্যাগুলোর সমাধানের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির জন্য পাকিস্তানের জনগণের চাপ ছিল। বিশেষ করে ভুট্টোর ওপর চাপ ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর। ওরা চায় তাদের বন্দি সহকর্মীরা ফিরে আসুক।

এসব নানামুখী চাপে পড়েই চুক্তির প্রতি অঙ্গীকার করতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। তবে উপমহাদেশে সত্যিকারের স্থায়ী শান্তি নির্ভর করছে বৃহৎ শক্তিগুলোর নৈতিক অবস্থানের  ওপর। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টো ইদানীং চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। এ ছাড়া তিনি আমেরিকার কাছ থেকেও বিপুল সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়েছেন।

সম্প্রতি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে বন্যা দেখা দেয়। তাতে পাঞ্জাবের অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আন্দাজ করা হচ্ছিল। পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বন্যা যে কেবল পাঞ্জাবের অর্থনীতিকে ধ্বংস করবে তা নয়, বরং পাকিস্তানের জাতীয় অর্থনীতির ওপরও মারাত্মক আঘাত হানবে। আর এই কারণে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এ অবস্থায় পাকিস্তানের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরামর্শ উপেক্ষা করা সম্ভব হবে না।

চীনও স্বীকৃতি দেবে

এদিনে এক খবরে বলা হয়েছে, নয়াদিল্লিতে ভারত ও পাকিস্তানের সম্পাদিত চুক্তির ফলে চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে। দেশটি মনে করে, ভারত থেকে ৯০ হাজার পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দির মুক্তি বাংলাদেশকে পাকিস্তানের স্বীকৃতিদানের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করবে। এর ফলে হারিয়ে ফেলা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কও পুনঃস্থাপিত হবে।

দিল্লিচুক্তি অভিনন্দিত

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর এক বিবৃতিতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিকে স্বাগত জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, এ চুক্তি উপমহাদেশের প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক গড়ে তুলবে ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে। সম্পাদকমণ্ডলী বলেন, পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালিদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের প্রত্যার্পণ এবং বাংলাদেশে অবস্থিত পাকিস্তানিদের পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার প্রশ্নগুলো এই উপমহাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জটিলতা তৈরি করে রেখেছিল। এতে এখানে শান্তি বিঘ্নিত করতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও মাওবাদী নানা চক্রান্ত সুযোগ নিচ্ছিল।

দিল্লি ও পিন্ডি আন্তরিকতার সঙ্গে চুক্তি বাস্তবায়ন করবে

মানবিক সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে ২৮ আগস্ট স্বাক্ষরিত চুক্তি ভারত-পাকিস্তান সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে কার্যকর করবে বলে আশা প্রকাশ করেন পি এন হাকসার। আকাশবাণীর স্পটলাইট কর্মসূচির এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ভারতের পক্ষ থেকে তিনি যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন, তাতে প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশ থেকে কতজন পাকিস্তানিকে প্রেরণ করা হবে তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা না হলেও এই সমীক্ষা পাকিস্তান বাংলাদেশ ও ভারতের জানা। অতিরিক্ত কতজনকে পাকিস্তানে যেতে দেওয়া উচিৎ, তা নির্ধারণের জন্য দুই দেশের মধ্যে বৈঠক হলে পাকিস্তান ১৯৫ যুদ্ধাপরাধীর বিচার বাদ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে কিনা প্রশ্ন করা হলে হাকসার বলেন, ‘এরকম কিছু ঘটলে তা হবে পশ্চাৎগামী পদক্ষেপ। অন্যদিকে সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে যুদ্ধবন্দিদের সম্পৃক্ত করা পাকিস্তানের উচিৎ হবে না, কারণ দুটি সম্পূর্ণ আলাদা প্রসঙ্গ।’