(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৩১ আগস্টের ঘটনা।)
১৯৭৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আলজিয়ার্সে চতুর্থ জোটনিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলন শুরুর আগে থেকেই জোটে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি ছিল আলোচনায়। সম্মেলনের প্রস্তুতি পরিষদ এশিয়া ও ল্যাটিন আমেরিকার যেসব দেশকে জোটনিরপেক্ষ জাতি গোষ্ঠীর সদস্য প্রদানের সুপারিশ করে, বাংলাদেশ তার অন্যতম। এই সদস্য পদ চেয়ে যেসব আগ্রহপত্র পেশ করা হয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে অবশ্যই জোটনিরপেক্ষ জাতি গোষ্ঠীর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক হতে হবে।
প্রস্তুতি পরিষদের বৈঠকে নতুন সদস্য ভর্তির ব্যাপারে উদ্ভূত মতপার্থক্য দূর করা গেছে। বৈঠকে জোটনিরপেক্ষ জাতি গোষ্ঠীর সদস্যভুক্তির জন্য ল্যাটিন আমেরিকা ও এশিয়ার দেশ সম্পর্কে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই দেশগুলো হচ্ছে—আর্জেন্টিনা, পেরু, বাংলাদেশ, ওমান ও ভুটান। তবে মালটার আবেদন সম্পর্কে প্রস্তুতি পরিষদ অনুকূল সুপারিশ করেনি। এই শীর্ষ সম্মেলনে তারা পর্যবেক্ষক হিসেবে থাকার জন্য আবেদন করেছে। বিভিন্ন জোটনিরপেক্ষ দেশ ইউরোপের তিনটি দেশকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রিত হিসেবে উপস্থিত থাকতে দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। এরমধ্যে আছে সুইডেন, ফিনল্যান্ড ও অস্ট্রিয়া।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নারী প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ
এদিন সন্ধ্যায় গণভবনে নারীদের একটি প্রতিনিধি দল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদের সঙ্গে পাকিস্তানে আটকে পড়া ব্যক্তিদের আত্মীয়-স্বজনেরা ছিল। পাকিস্তানে আটক বাঙালিদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর নিরলস প্রচেষ্টা ও পদক্ষেপের জন্য তারা তাঁকে অভিনন্দন জানান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এ সময় তারা মাল্যভূষিত করেন।
বঙ্গবন্ধুর বিচক্ষণতার জন্যই চুক্তি সম্ভব হয়েছে
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘দিল্লিতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চুক্তি সম্পাদন সম্ভব হয়েছে প্রধানত বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা ও পারদর্শিতার কারণে।’ ঢাকার সিদ্দিক বাজার কমিউনিটি সেন্টারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ গঠন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বক্তব্য দিচ্ছিলেন। ঢাকা নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী গোলাম মোস্তফা এ সভায় সভাপতিত্ব করেন। তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘উপমহাদেশে মানবিক সমস্যাগুলো সমাধানে বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক বিচক্ষণতা দেখিয়েছেন এবং যে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃত্ব অভিনন্দন জানিয়েছেন।’
অমীমাংসিত সমস্যা সমাধানের পথ খুলে দেবে দিল্লি চুক্তি
নয়াদিল্লিতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিকে জাতিসংঘের মহাসচিবও আন্তরিক অভিনন্দন জানান। মধ্যপ্রাচ্যের সদর দফতর থেকে প্রকাশিত মন্তব্যে কুট ওয়ার্ল্ড হেইম বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে জাতিসংঘের কাছে এ সমস্যাগুলো উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল এবং এ বছরের গোড়ার দিকে উপমহাদেশে আমার সফরের সময় এসব সমস্যা নিয়ে আমি বিস্তারিত আলোচনা করেছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘তখন আমি বারবার বলেছি সবার আগে এবং প্রধানত মানবিক সমস্যাবলির সমাধান করা উচিত। আশা প্রকাশ করি যে এই অভিনন্দনযোগ্য চুক্তিটি উপমহাদেশের অমীমাংসিত সমস্যাগুলো সমাধানের পথ উন্মুক্ত করবে।’
উপমহাদেশের অমীমাংসিত সমস্যা বলতে মহাসচিব ঠিক কোন কোন সমস্যার কথা বলেছেন এবং তাতে বাংলাদেশের জাতিসংঘভুক্তির প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত কিনা, সে সম্পর্কে মহাসচিবের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির প্রশ্ন অমীমাংসিত সমস্যাবলির অন্তর্ভুক্ত হবে।’ তবে এ সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।
মস্কো-পিকিং সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রস্তাব
প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই ১৯৭৩ সালের ২৪ আগস্ট চীনের কমিউনিস্ট পার্টির দশম কংগ্রেসে তার রিপোর্টে চীন-মস্কো সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সীমান্ত প্রশ্নের মীমাংসা হওয়া উচিত। তিনি নেতৃত্বকে তাদের আন্তরিকতা প্রকাশের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি সত্যিই ভীষণ উত্তেজনা প্রশমিত করতে চান, তাহলে চেকোস্লোভাকিয়া অথবা মঙ্গোলিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহার আপনাদের সদিচ্ছা দেখান।’
বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সমঝোতা সই
বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া পরিকল্পনার অধীনে কক্সবাজারের সাগর সৈকত থেকে খনিজ দ্রব্য আহরণের উদ্দেশ্যে একটি পরীক্ষামূলক কারখানা স্থাপনের জন্য এদিন বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে একটি সমঝোতাপত্র সই হয়। এই সমঝোতাপত্রের আওতায় অস্ট্রেলিয়া প্রকল্পটির জন্য এক লাখ ৪৫ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার মূল্যের সাজসরঞ্জাম সরবরাহ করবে এবং বিশেষজ্ঞ সার্ভিস প্রশিক্ষণদান করবে। অপরপক্ষে বাংলাদেশ কক্সবাজার এলাকায় প্রকল্পের জন্য জায়গা দেবে ও স্থান প্রস্তুতি, নকশা তৈরি, ভবন নির্মাণ ও সরঞ্জাম সংস্থাপন প্রভৃতি ব্যয় বহন করবে।