ত্রিদলীয় বৈঠকে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১ সেপ্টেম্বরের ঘটনা।)

আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ (মোজাফফর)-এর সভায় আইনশৃঙ্খলা, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। নিরপেক্ষ গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের আদর্শের ভিত্তিতে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যৌথ পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে তিনটি দলের নেতারা একমত হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেখা করে পরবর্তী আলোচনার প্রস্তুতি গ্রহণ সাপেক্ষে কর্মসূচি প্রণয়ন করবে বলে ঐকমত্যে পৌঁছানো হয়। অনুষ্ঠিত সভায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আব্দুর রাজ্জাক চৌধুরী ও গোলাম মোস্তফা, ন্যাপের পক্ষ থেকে পঙ্কজ ভট্টাচার্য এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির আব্দুস সালাম, মোহাম্মদ ফরহাদ ও সাইফ উদ্দিন মানিক উপস্থিত ছিলেন।

আশঙ্কাজনক হারে চোরাচালান ও মূলধন পাচার

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হামিদুল্লাহ আশঙ্কাজনক হারে চোরাচালান ও সীমান্তের বাইরে বিপজ্জনক হারে মূলধন স্থানান্তর দেশের অর্থনীতির বর্তমান সংকটের জন্য দু’টি প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করেন। ইন্টারকন্টিনেন্টালে ক্লাবের মাসিক সভায় প্রধান অতিথির ভাষণদানকালে হামিদুল্লাহ দেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করেন এবং স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন অসুবিধা বর্ণনা করেন।

গভর্নর হামিদুল্লাহ বলেন, ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত শিল্প সেক্টরকে চালু করার জন্য ঋণদানের সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ অত্যাবশ্যক। এ ধরনের পরিস্থিতিতে মুদ্রা সম্প্রসারণ দরকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঋণদান ও মুদ্রার সম্প্রসারণ দেশের চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে করা হচ্ছে।’ বিপর্যয়ের কারণ অন্যত্র অনুসন্ধানের জন্য সমালোচকদের পরামর্শ দেন তিনি। চোরাচালান ও মূলধন পাচার ছাড়া অর্থনীতিতে স্থবিরতা এবং কলকারখানায় উৎপাদন হ্রাস অর্থনৈতিক সংকটের অন্যতম কারণ বলেও জানান তিনি। ‘অর্থনীতিকে উজ্জীবিত করার জন্য এসব প্রতিকূল অবস্থার সুরাহা করতে হবে’, বলেন গভর্নর।

দৈনিক বাংলা, ২ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের সদস্য পদ নিশ্চিত

আলজিয়ার্সে জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের সদস্য পদ নিশ্চিত। আজকের আলোচনার পর এ সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ৫ সেপ্টেম্বরের শীর্ষ বৈঠকে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ করা হতে পারে। আমন্ত্রণ পাবার পর বঙ্গবন্ধুর এই শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করবেন বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশের পতাকা শোভা পাচ্ছে

এক খবরে বলা হয় যে, আলজিয়ার্স নগরীর সম্মেলন স্থান ও জাতীয় ভবন জোটনিরপেক্ষ দেশগুলো পতাকা দিয়ে অতি মনোরমভাবে সাজানো হয়েছে। নবীন দেশ বাংলাদেশের পতাকা অন্যান্য দেশের পতাকার মাঝে সুন্দরভাবে শোভা পাচ্ছে। ৫ সেপ্টেম্বর এই সম্মেলন শুরু হবে এবং ১০ তারিখ শেষ হবে। সম্মেলনে এশিয়া ও আফ্রিকার নতুন ৬টি দেশের সদস্য পদ অনুমোদন করা হবে। পরিষদের প্রস্তুতি কমিটির বৈঠকে এদিন ৬টি দেশের সদস্য পদ লাভের জন্য সুপারিশ করা হয়। ইতোমধ্যে সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ ও অন্যান্য নতুন সদস্যদের প্রতিনিধিদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের যে সম্মেলন হচ্ছে, তাতে বাংলাদেশ, আর্জেন্টিনা, পেরু, ওমান, কাতার ও ভুটানের সদস্য পদ লাভের ব্যাপারে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে।

ডেইলি অবজারভার, ২ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩

 আলজিয়ার্স পৌঁছেছে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল

এনা পরিবেশিত খবরে বলা হয়,  মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সদস্য শামসুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল আগস্ট মাসের শেষের দিকে আলজিয়ার্সে গিয়ে পৌঁছেছে। এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে যোগদানের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন রওনা দেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত এদিন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গণভবনে সাক্ষাৎ করেন। তিনি গণভবনে কিছুক্ষণ কাটান।