বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তিন দল একযোগে কাজ করার সিদ্ধান্ত

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বরের ঘটনা।)

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, মোজাফফর ন্যাপ এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি রাষ্ট্রীয় মূলনীতির ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এদিন (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে গণভবনে অনুষ্ঠিত তিনদলীয় নেতাদের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে জাতির সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতির স্বার্থে দেশ থেকে রাষ্ট্রবিরোধী সামরিক শক্তি, মুনাফাখোর মজুতদার, দুর্নীতি এবং সকল প্রকার সমাজবিরোধী শক্তিকে উৎখাত করার জন্য এই তিনটি দল ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে একযোগে করবে। বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তিনটি রাজনৈতিক দলকে থানা পর্যায়ে সম্প্রসারিত করা হবে।

আলোচনার পর দলগুলোর কার্যকরী পরিষদ কর্তৃক চূড়ান্তভাবে এই সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করা হবে। এরপর তৃতীয় বৈঠক পুনরায় অনুষ্ঠিত হবে এবং ঐক্যবদ্ধ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রায় দুই ঘণ্টাকাল স্থায়ী বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের কাছে সিদ্ধান্তগুলো ব্যাখ্যা করেন। এটাকে তিনি বিপ্লবাত্মক পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি জানান যে, পহেলা সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত তিন দলের নেতাদের বৈঠকে একযোগে কাজ করার উদ্দেশ্যে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো স্মারকলিপি আকারে বঙ্গবন্ধুর সামনে পেশ করা হয়।

দৈনিক বাংলা, ৪ সেপ্টিম্বর ১৯৭৩জিল্লুর রহমান আরও জানান, তিনদলীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে এই তিনটি দলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা এবং সাফল্য কামনা করেন তিনি। শিগগিরই তিনটি রাজনৈতিক দলের কার্যকরী পরিষদের সভায় এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। সংশ্লিষ্ট দলগুলোর কার্যকরী পরিষদের সভায়  সিদ্ধান্তগুলো অনুমোদনের পর সঠিক কর্মপদ্ধতি নির্ধারণের জন্য পুনরায় দলীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে থানা পর্যায়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এবং কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

বর্তমান বিশ্বে জোটনিরপেক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে

চতুর্থ জোটনিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলন কোন খাতে প্রবাহিত হবে আলজেরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল আজিজ এদিন তার আভাস দেন। জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে তিনি অন্যান্য দেশ থেকে আগত তার সহকর্মীদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, ‘প্রাচ্য-পাশ্চাত্য সমঝোতা অনিশ্চিত।’ তিনি বলেন, ‘শোষণের বিরুদ্ধে জোটনিরপেক্ষ দেশগুলোর তৎপরতা শিথিল করা চলবে না।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম ভাষণে বলেন, ‘শক্তির কেন্দ্রগুলোর মনোভাব এখনও অনিশ্চিত এবং তাদের ভেতরে গভীর অবিশ্বাস বিরাজমান,  যা কিনা অদৃশ্য উত্তেজনা এমনকি আরও বড় সংঘাতের বীজ বপন করতে পারে।’

দৈনিক বাংলা, ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩আলজিয়ার্সে মুজিব-ইন্দিরা আলোচনা হবে

আলজিয়ার্সে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে আলাপ-আলোচনা হবে। দুই প্রধানমন্ত্রী চতুর্থ জোটনিরপেক্ষ বৈঠকে যোগদান করতে যাবেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রধান সচিব পিএন হাকসারও ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আলজিয়ার্সে যাচ্ছেন। হাকসার প্রয়োজন হলে দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার সময় পাকিস্তান সম্পর্কে ভবিষ্যৎ পদক্ষেপের ব্যাপারে পরামর্শ দেবেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী একদিন পরেই আলজিয়ার্সের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা।

ডেইলি অবজারভার, ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের কোনও আগ্রহ নেই ভুট্টোর

নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের কোনও আগ্রহ নেই ভুট্টোর। ত্রিমুখী লোক বিনিময়ের পর তিনি প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আরেকটি শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হবেন। লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকার রাওয়ালপিন্ডি প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন ভুট্টো। এ সময় তিনি সম্প্রতি সই করা দিল্লি চুক্তি সম্পর্কে মন্তব্য করছিলেন। এই চুক্তি সম্পর্কে তার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ভুট্টো বলেন, ‘বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের কোনও আশা নেই। বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের বিষয়ে পাকিস্তানের একটি মাত্র বাধা অপসারিত হয়েছে। বন্দি পাকিস্তানিদের বিচারের হুমকি আমাদের এ ব্যাপারে বিরত রাখছে। ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী যাদের ভারতে আটকে রাখা হবে, তাদের ছাড়া আরও কতগুলো ইস্যু আছে, বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের আগে সেগুলোর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রয়োজন।’