বঙ্গবন্ধু আলজিয়ার্স যাচ্ছেন

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বরের ঘটনা।)

জোটনিরপেক্ষ দেশগুলোর সরকার প্রধানদের সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা ত্যাগ করবেন বলে জানানো হয়েছে। আলজিয়ার্সের প্রেসিডেন্ট বুমেদিনের আমন্ত্রণে বঙ্গবন্ধু জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছেন। এই আমন্ত্রণ আগের দিন এসে পৌঁছায়। ৫ সেপ্টেম্বর সরকার প্রধানদের সম্মেলনে যোগ দেবেন তিনি। তাঁর সঙ্গে যাবেন পররাষ্ট্র সচিব এনায়েত করিম, বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত চিকিৎসক নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ অবজারভারের সম্পাদক ওবায়দুল হক এবং জনপদের সম্পাদক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী।

এছাড়া একটি সাংবাদিক প্রতিনিধি দল সংবাদ সংগ্রহের জন্য আলজিয়ার্স যাচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্য শামসুল হক এমপি বর্তমানে আলজিয়ার্সে অবস্থান করছেন। তাদের সঙ্গে রয়েছেন মিসরে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আব্দুর রহমান ও সেনেগালে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল হক।

বঙ্গবন্ধু তাঁর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে গণতান্ত্রিক আদর্শের ভিত্তিতে শোষণমুক্ত সমাজবাদী সমাজ গড়ে তোলার নিরলস প্রচেষ্টায় দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করবেন। শীর্ষ সম্মেলনে অন্যান্য বিশেষ বিষয়ের সঙ্গে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে বিরাজমান বৈষম্য এবং ভারত মহাসাগরকে যুক্ত এলাকায় পরিণত করার প্রস্তাব সম্পর্কে আলোচনা হবে। এই দুটি বিষয়ে বঙ্গবন্ধু কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনের মতোই বলিষ্ঠ অভিমত প্রকাশ করবেন।

ব্রাজিলে সফররত পরিকল্পনা কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম আলজিয়ার্সে যাবেন বলেও জানানো হয়। প্রসঙ্গত, ১৯৫৫ সালের ১৮ এপ্রিল জোটনিরপেক্ষ দেশগুলোর প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনের প্রস্তুতি কমিটির প্রথম বৈঠক হয় ১৯৫৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ইন্দোনেশিয়ায়।

দৈনিক বাংলা, ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩জোটনিরপেক্ষ গোষ্ঠীতে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিতে অভিনন্দন

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান বাংলাদেশকে জোটনিরপেক্ষ জাতিগোষ্ঠীর সদস্যভুক্ত করার সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী ও শান্তিপ্রিয় জনগণ এতে অত্যন্ত আনন্দিত।’ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ জোটনিরপেক্ষ নীতির একনিষ্ঠ অনুসারী এবং বাংলাদেশ পৃথিবীর দেশগুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতিতে বিশ্বাসী।’

তিনি বলেন, ‘জোটনিরপেক্ষতা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি আমাদের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য এবং এ নীতি বিশ্বশান্তি আন্দোলনকে জোরদার করবে।’

জোটনিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলন শুরু

১২ বছর আগে যে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা আর গতিশীল ও দক্ষ প্রতিষ্ঠানে রূপ নেবে, এই আশা নিয়ে ৫ সেপ্টেম্বর ঐতিহাসিক আলজিয়ার্স নগরীতে চতুর্থ জোটনিরপেক্ষ সম্মেলন শুরু হচ্ছে। ১৯৬৫ সালে আফ্রো-এশীয় শীর্ষ সম্মেলনের জন্য যে ভবন নির্মিত হয়েছিল, সেখানে পৃথিবীর ৬০টি দেশের রাজা, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী মিলিত হবেন কখনও গোপনে, কখনও প্রকাশ্যে কথাবার্তা বলবেন।

উল্লেখ্য, ১৯৬৫ সালের আফ্রো-এশীয় সম্মেলন শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। এবারের সম্মেলন দুই বছর আগে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জন্মলাভকারী নবীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাগত জানাবে। সম্মেলনে কর্নেল গাদ্দাফির মতো বিতর্কিত নেতার উপস্থিতি বৈচিত্র্য আনবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

ডেইলি অবজারভার, ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩আলজিয়ার্স সম্মেলনে নতুন পর্যালোচনা

আলজিয়ার্সে চলতি জোটনিরপেক্ষ  সম্মেলন বিদেশি সম্পত্তি ও বিদেশি পুঁজি রাষ্ট্রায়ত্ত করার সার্বভৌম ক্ষমতা চেয়ে আলজিয়ার্স প্রস্তাব পেশ করছে। তার ফলে সম্মেলনের রাজনৈতিক গুরুত্ব ছাড়া একটি অর্থনৈতিক গুরুত্বের পথ খুলে যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্মেলনে বাংলাদেশের ভূমিকার নতুন পর্যালোচনা কূটনৈতিক মহল অনুভব করছে। বস্তুত আলজিয়ার্সের অর্থনৈতিক  প্রস্তাব গত বছর অনুষ্ঠিত নিরপেক্ষ রাষ্ট্র সম্মেলনের চেহারা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক চেহারা দিলো।

জোটনিরপেক্ষ গ্রুপে বাংলাদেশসহ আট দেশ

জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে যোগদানকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এদিন (৪ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ, ভুটান, আর্জেন্টিনা, মালটা, ওমান, কাতার, পেরু ও মেক্সিকোকে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে যুক্ত করে। সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একঘণ্টা বিতর্কের পর শীর্ষ সম্মেলনের আলোচ্যসূচি গ্রহণ করেন। শীর্ষ সম্মেলন ৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা। সকালের অধিবেশনের আগে আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মধ্যপ্রাচ্য প্রশ্নে যৌথ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে একটি পৃথক বৈঠকে মিলিত হন।