বাহরাইন বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বরের ঘটনা।)

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আরব জনগণের স্বার্থে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সংহতি প্রকাশ করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘স্বীকৃতি পেলাম কী পেলাম না পরোয়া নেই। ইসরাইলি হামলার বিরুদ্ধে আরবদের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামে আমরা তাদের পাশে আছি।’

এই দিন (৭ সেপ্টেম্বর) বাহরাইন বিমানবন্দরে সে দেশের সরকারের দু’জন মন্ত্রীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু কথা বলেন। তিনি বাহরাইন বিমানবন্দরে ৭০ মিনিট অবস্থান করেন। বঙ্গবন্ধুর বিমান এখানে অবতরণ করলে দেশটির পক্ষে মন্ত্রী জাভেদ শেখ আব্দুল্লাহ আল খলিফা তাঁকে স্বাগত জানান। এছাড়াও বাহরাইন সরকারের কর্মচারী, ভারতীয় দূতাবাসের লোকজন এবং সেখানে বসবাসকারী বাংলাদেশের নাগরিকরা বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। ঘরোয়া কথাবার্তার সময় বঙ্গবন্ধু বাহরাইনের মন্ত্রীদের মঙ্গল কামনা করেন। তিনি দেশটিতে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের ভালো-মন্দের প্রতি নজর রাখার জন্য মন্ত্রীদের অনুরোধ জানান। সে সময় বাহরাইনে ১১০ জন বাঙালি ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উপমহাদেশের বাস্তবতাকে স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ব বাংলাদেশকে স্বীকার করে নিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বাহরাইন বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য সংগ্রামকে সব সময় সমর্থন করে এসেছে।’ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকারের মন্ত্রীদের তিনি নানা বিষয়ে অবহিত করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি সম্প্রতি স্বাক্ষরিত ভারত-পাকিস্তান চুক্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ এই সমস্যার সমাধান এবং উপমহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে চায়। চুক্তিতে তারই প্রতিফলন ঘটেছে।’

বঙ্গবন্ধু আন্তরিকভাবে শান্তিতে বিশ্বাসী এবং এ জন্য বাংলাদেশ তার সাধ্যমতো কাজ করছে বলেও জানান। বাংলাদেশ সার্বভৌম সমতার ভিত্তিতে সবার বন্ধুত্ব কামনা করে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশের সমস্যা বুঝবে এবং সমাধানে সাহায্য করবে বলে বঙ্গবন্ধু আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘বন্ধুত্বের এই মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশে কোনও জোটভুক্ত না হওয়ার এবং সক্রিয় নিরপেক্ষতা নীতি অনুসরণ করার পথে রয়েছে।’

উল্লেখ্য, এটাই বাহরাইনে বঙ্গবন্ধুর প্রথম সফর। এদিন সন্ধ্যায় তিনি আলজিয়ার্সে পৌঁছালে বিমানবন্দরে ক্ষমতাসীন বিপ্লবী পরিষদের অন্যতম সদস্য কর্নেল মোহাম্মদ সালাহ ইয়াহইয়াওবি বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানান। এখানে পৌঁছে বঙ্গবন্ধু শীর্ষ  সম্মেলনে আসন গ্রহণ করেন।

দৈনিক ইত্তেফাক, ৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩এদিন রাতে ইন্দিরা গান্ধী, ফিদেল কাস্ত্রো, দক্ষিণ ভিয়েতনামের অস্থায়ী সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নৈশভোজ করেন। বঙ্গবন্ধু বিমানে করে আলজিয়ার্সে আসার পথে রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, কুয়েতের আমির, দুবাইয়ের শাসক, ইরাক ও সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের কাছে বাণী পাঠান।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিদেশ সফরকালে শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। এদিন সরকারি তথ্য বিবরণীতে এ কথা জানানো হয়।

আটক বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি

যত শিগগির সম্ভব পাকিস্তান থেকে বাঙালিদের, বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানিদের এবং ভারত থেকে পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দি বিনিময়ের কাজ আরম্ভ করার প্রচেষ্টা শুরু হচ্ছে। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, জাতিসংঘ এ ব্যাপারে খুব আগ্রহ দেখাচ্ছে এবং যাতে বিনিময় শুরু করা যায়, সে জন্য পরিবহন ব্যবস্থা করার দিকে তারা দৃষ্টি দিয়েছে। বলা হয়, খুব তাড়াতাড়ি লোক-বিনিময় শুরু করতে হলে প্লেনের সাহায্য নিতে হতে পারে। চিন্তাটা হলো জাহাজ সংগ্রহের চেষ্টা চলুক, একই সঙ্গে বিমানেও শুরু করা যাক। বিমান ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচিত হচ্ছে। এদিন একজন পাকিস্তানি মুখপাত্র বলেন, বাঙালি সামরিক ব্যক্তিসহ অসুস্থ সামরিক লোকদের বিমানে করে যার যার দেশে পৌঁছানো যেতে পারে।

ডেইলি অবজারভার, ৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩আলজিয়ার্স সম্মেলনে কয়েকটি প্রশ্নে মতৈক্য

আলজিয়ার্স সম্মেলন প্রায় মাঝামাঝি অবস্থায় রয়েছে। এই সম্মেলন থেকে যে ঘোষণা প্রকাশিত হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক কমিটিতে এখনও আলোচনা চলছে। ভারত, কিউবা, মিসর ও অন্যান্য দেশ যেসব দলিল পেশ করেছিল, সেগুলো বাদ পড়েছে। আলজেরিয়ার দলিলটিকে মূল দলিল হিসেবে মেনে নিয়ে মন্ত্রীদের রাজনৈতিক কমিটি তার ওপর আলোচনা করছে। এর প্রতিটি লাইনে মাঝে মাঝে বিতর্ক হচ্ছে এবং বহু সংশোধনী গৃহীত হয়েছে। অর্থনৈতিক কমিটির কাজ স্বাচ্ছন্দ্য গতিতে এগিয়ে চলছে। সেখানে সদস্যরা তাড়াতাড়ি ঐকমত্যে পৌঁছাচ্ছেন বলে আশা করা যায়। এরইমধ্যে অর্থনৈতিক কমিটি জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে এর সমগ্র কাঠামো পরিবর্তনের দাবি করেছে।