বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তিনদলীয় জোটের কর্মসূচি

বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনা।)

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান এদিন সাংবাদিকদের বলেন, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগ তিনদলীয় জোট গঠন করেছে। এ মাসের শেষ নাগাদ তারা কর্মসূচি হাতে নেওয়ার জন্য বৈঠকে বসবেন।

এদিন সংবাদ সংস্থাগুলোর পরিবেশিত খবরে এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে জিল্লুর রহমানের বক্তব্য প্রকাশ হয়। তিনি আরও জানান, এখন কর্মসূচির বিভিন্ন দিক নিয়ে সদস্য পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলীয় জোটকে রাজনৈতিক ফ্রন্ট হিসেবে বিবেচনা করা যায়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সাধারণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুর্নীতি মোকাবিলা করবে এ জোট। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ এবং জোটনিরপেক্ষ নীতির আলোকে এই জোট কর্মসূচি গ্রহণ করবে।

জিল্লুর রহমান বলেন, পুলিশের শক্তি বৃদ্ধি করার কারণে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যে হত্যাকাণ্ড হচ্ছে সেগুলো সমাজবিরোধীদের চক্রান্ত বলে উল্লেখ করেন তিনি। মওলানা ভাসানীকে সতর্ক করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানোর প্রচেষ্টা প্রতিহত করবে।

দৈনিক বাংলা, ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের বৈঠক

এদিন সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে গণভবনে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক পরিস্থিতিসহ সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। পরদিন অনুষ্ঠিতব্য কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সংসদের বৈঠক নিয়ে আলোচনা হয়।

শীর্ষ সম্মেলনের সুপারিশ তাৎপর্যপূর্ণ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে জোটনিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলোর সুপারিশ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে দেখা দেবে এবং জাতিসংঘের সুপারিশকে চীন গুরুত্ব দেবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনের সুপারিশ ৭১টি দেশের মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।

তিনি বলেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিতে এই সুপারিশ তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, জাতিসংঘে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে দিল্লিচুক্তি বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে বলে জাতিসংঘের মহাপরিচালক কুর্ট ওয়ার্ল্ডহেইমও মনে করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ মনে করে শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের কারণে আরব দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা সহজ হলো।

অবজারবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩

বিনিময় কর্মসূচি প্রসঙ্গে ড. কামাল হোসেন

এদিন ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ২৮ আগস্ট দিল্লিচুক্তি অনুযায়ী লোক বিনিময় কর্মসূচি গ্রহণ করছে ভারত-পাকিস্তান। চুক্তি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীরা দ্রুত কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন।

কেবল চার শ্রেণির পাকিস্তানিদের দেশে ফিরিয়ে নেবে বলে দেশটির প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলি ভুট্টো জানিয়েছিলেন। এ বিষয়ে কামাল হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ভুট্টো সম্ভবত অগ্রাধিকারের কথাই উল্লেখ করতে চেয়েছেন।

তিনি বলেন, আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ সম্মেলন স্থলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দিল্লিচুক্তি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, দুজনেই দিল্লিচুক্তি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।