(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বরের ঘটনা।)
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কমিটি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, সাম্রাজ্যবাদী এজেন্ট, গুপ্তঘাতক, মুনাফাখোর, চোরাকারবারি, কালোবাজারি এবং মজুতদারদের সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ কঠোর হস্তে দমন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এসব দুষ্কৃতিকারীর কঠোর শাস্তি বিধানের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় আইন পাস করার জন্য দলীয় সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এদিন (১৩ সেপ্টেম্বর) গণভবনে দলীয় প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সাংগঠনিক কমিটির সভায় গৃহীত প্রস্তাবে এ আহ্বান জানানো হয়। সভায় গৃহীত প্রস্তাবে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা তথা মুজিববাদের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, মোজাফফর ন্যাপ ও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টিকে নিয়ে প্রস্তাবিত তিনদলীয় ঐক্যজোট গঠনের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়। একইসঙ্গে প্রস্তাবের প্রতি নীতিগতভাবে পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ্য, প্রায় তিন ঘণ্টা স্থায়ী এ বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। সভায় সাংগঠনিক কমিটির ৪২ জন সদস্যের মধ্যে ৩৭ জন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিশেষ আমন্ত্রণে কয়েকজন মন্ত্রীসহ দলের বিশিষ্ট সাত জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে দলের দফতর সম্পাদক আনোয়ার চৌধুরী অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের কাছে বৈঠকের কার্যবিবরণী উপস্থাপন করেন। বৈঠকে দেশের স্বাধীনতা ও সাম্রাজ্যবাদী এজেন্ট ও ক্রীড়নকদের রাষ্ট্রীয় মূলনীতিবিরোধী প্রচারণা, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাই, রাজনৈতিক গুপ্তহত্যা এবং সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতি অব্যাহত রাখার স্বার্থে এসব রাষ্ট্র ও সমাজবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত ব্যক্তিদের উৎখাত করার উদ্দেশ্যে কঠোর নীতি গ্রহণ এবং এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বিধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবলম্বনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
সাংগঠনিক কমিটির সভায় এক প্রস্তাবে আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশকে জোটনিরপেক্ষ গোষ্ঠীর সদস্য পদ প্রদান করায় এবং জাতিসংঘ বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য শীর্ষ সম্মেলনে ঘোষণাপত্র সুপারিশ করায় গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়। এছাড়া সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের বলিষ্ঠ ভূমিকা ও সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জানানো হয়।
ট্রাইব্যুনাল গঠন
সভায় নবগঠিত কার্যনির্বাহী সংসদ অনুমোদন করা হয়। তবে যেসব জেলার কার্যনির্বাহী সংসদের ব্যাপারে বিরোধ রয়েছে, তা নিষ্পত্তি করার জন্য পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কেন্দ্রীয় নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এই ট্রাইব্যুনালের সদস্য হচ্ছেন—দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি কোরবান আলী, সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, খন্দকার ওবায়দুর রহমান এবং সালাউদ্দিন ইউসুফ। সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটির বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য এই কমিটিকে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। সূত্রে জানা যায়, রংপুর, নীলফামারী, নারায়ণগঞ্জ, গাইবান্ধা, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ ও গোপালগঞ্জ জেলা কার্যনির্বাহী সংসদে বিরোধ রয়েছে।
খুব শিগগিরই বাংলাদেশের নতুন ধাতব মুদ্রা বাজারে ছাড়া হবে। এ দিন গণভবনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এ এন হামিদুল্লাহ বঙ্গবন্ধুকে এই নতুন মুদ্রার নমুনা উপহার দেন। বাসসের খবরে প্রকাশ, অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, শিল্পমন্ত্রী নূরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ১০, ২৫ ও ৫০ পয়সার ধাতব মুদ্রার একদিকে রয়েছে জাতীয় ফুল শাপলা, অপরদিকে রয়েছে পান, ইলিশ মাছ ও কবুতর। বাসস জানায়, ১৫ ও ১০ পয়সার মুদ্রাগুলো অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি। ২৫ ও ৫০ পয়সার মুদ্রাগুলো স্টেনলেস স্টিলের তৈরি।
সহযোগিতার জন্য আবেদন জানাবে জাতিসংঘ
জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে বলেন যে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নাগরিকদের স্বদেশে প্রত্যর্পণ ও প্রশাসনিক কাজে সহায়তার উদ্দেশ্যে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আবেদনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এই নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায় তার আবেদনে সাড়া প্রদান করবে।