সমাজবিরোধীদের দমনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১৪  সেপ্টেম্বরের ঘটনা।)

এদিন বিকালে গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দলের নেতা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে আলোচনা করা হয়। সভায় জনগণের জানমালের নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতি এবং অগ্রগতির স্বার্থে চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই, রাজনৈতিক গুপ্তহত্যাসহ নানাবিধ সমাজবিরোধী কার্যকলাপ ও দুষ্কৃতকারীদের কঠোর হস্তে দমন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

সংসদীয় দলের বৈঠক শেষে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের জানান, বঙ্গবন্ধু সম্প্রতি আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলোর শীর্ষ সম্মেলনে তাঁর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের বলিষ্ঠ ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বৈঠকে অবহিত করেন। মন্ত্রিসভার সদস্যসহ সংসদীয় দলের প্রায় সব সদস্যই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন সদস্য সম্মেলনে স্থায়ী শান্তি স্থাপনের ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের বলিষ্ঠ ভূমিকা এবং সাফল্যের জন্য প্রতিনিধি দলের নেতা বঙ্গবন্ধু এবং প্রতিনিধি দলকে ধন্যবাদ জানান। জোটনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে সদস্যভুক্ত এবং সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে জাতিসংঘে বাংলাদেশকে সদস্য করার জন্য সুপারিশ করায় সংসদ সদস্যরা সন্তোষ প্রকাশ করেন।

দৈনিক ইত্তেফাক, ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩বঙ্গবন্ধুর অভিনন্দন

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য যেকোনও পদক্ষেপকে স্বাগত জানায়। বাসসের খবরে উল্লেখ করা হয়, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লাওস শান্তি চুক্তিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। লাওসের প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি বার্তা পাঠিয়েছেন তিনি। তারবার্তায় লাওসের সরকার ও জনগণকে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পক্ষে অভিনন্দন জানান। বঙ্গবন্ধু আশা প্রকাশ করেন, শান্তিচুক্তি শান্তির শক্তিগুলোকে শক্তিশালী করবে। তিনি বলেন, ‘শান্তিচুক্তি সমগ্র দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শান্তির শক্তিকে জোরদার করবে।’

ঢাকায় বাসস্থানের সংকট চরমে পৌঁছেছে

রাজধানী ঢাকায় বাসস্থান সমস্যা তীব্র হয়ে উঠেছে বলে পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়। কারণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু বাড়ির সংখ্যা বাড়েনি। তাই বাড়ি নিয়ে বাড়াবাড়ি, কাড়াকাড়ি ও বাড়িওয়ালাদের দৌরাত্ম্য চলছে। স্বাধীনতার পর রাজধানী হিসেবে ঢাকা শহরের গুরুত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই শহরের কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আরও বৃদ্ধি পেয়েছে জনসংখ্যা। অথচ সেই তুলনায় আবাসিক বাড়ি বাড়েনি। ইতস্তত কিছু বাড়িঘর এখানে-সেখানে নির্মিত হয়েছে, সেটা হিসাবে ধরার মতো না। বেসরকারিভাবে দূরের কথা সরকারিভাবে এ বছর রাজধানীতে বাড়িঘর তৈরি হয়নি। শুধু পাকিস্তানি আমলে শুরু করা কিছু অসম্পূর্ণ পরিকল্পনা সম্পন্ন করার কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। বেসরকারিভাবে বাড়িঘর তৈরির কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু গৃহনির্মাণ সামগ্রীর অভাব ও দুর্মূল্যের কারণে দুই বছরে নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে তিনগুণ। গৃহনির্মাণ সামগ্রীর দাম এখন আকাশচুম্বী। খোলাবাজারে মেলে না, মেলে কালোবাজারে। তার দাম ব্যবসায়ীরা মর্জিমাফিক রাখে।

ডেইলি অবজারভার, ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩শরৎকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে

জাতীয় সংসদের শরৎকালীন অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে। এই অধিবেশন শুরু হতে চলেছে এমন এক সময়, যখন দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। লুট হচ্ছে জনগণের জানমাল ও নিরাপত্তা। আর যাদের ওপর দায়িত্ব ন্যস্ত, তারা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে। এই শরৎকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে এমন একটা সময়, যখন উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রায় নিশ্চল অবস্থা বিরাজমান। পরিচালনা সংক্রান্ত দোষ-ত্রুটির ফলে অসন্তোষ বেড়ে চলেছে।