লাখো মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে চলছে ‘জরুরি খোঁড়াখুঁড়ি’

রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যত্রতত্র চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। ‘জরুরি কাজের’ জন্য যেন থমকে আছে লাখো মানুষের জীবনযাত্রা। সামান্য বৃষ্টিতেই বেহাল সড়ক। বড়বড় গর্তে পড়ে যায় যানবাহনের চাকা। দেখা দেয় মারাত্মক যানজট। সংশ্লিষ্টরা বললেন, নগরীতে বিভিন্ন সেবা সংস্থার অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ির কারণেই নগরবাসীকে এমন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে এখনও।

সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, বিভিন্ন সেবা সংস্থার ‘অতি জরুরী’ কাজের কারণে সড়ক খোঁড়া হচ্ছে বেশি। বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ অবস্থায় সড়ক না কেটেও উপায় থাকে না।

জানা গেছে, দুই সিটি করপোরেশন এলাকার প্রধান সড়ক ও অলিগলি মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর ৬০০ কিলোমিটারেরই ভগ্নদশা। বছরজুড়ে চলেছে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ। ওয়াসা, তিতাস, ডেসকো, ডিপিডিসি, বিটিআরসি ও সিটি করপোরেশনের খোঁড়াখুঁড়ি তো লেগেই আছে। সংস্থাগুলোর ইউটিলিটির সংস্কার মানেই আগে রাস্তা কাটো। এজন্য আগে সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনের পর সংশ্লিষ্ট বিভাগ মিটিং করে অনুমোদন দেয়। অনেক ক্ষেত্রে অনুমতি পাওয়ার আগেই সংস্থাগুলো সড়ক কেটে তাদের লাইন সংস্কার করে ফেলে।

খোঁড়ার সময় রাস্তার ওপরই রাখা হয় যাবতীয় সামগ্রী

সড়ক খোঁড়ার নীতিমালা আছে

সড়ক খোঁড়ার জন্য দুই সিটি করপোরেশনের একটি নীতিমালা রয়েছে। এজন্য ‘ওয়ান স্টপ সেল’ নামে একটি সমন্বয় কমিটিও আছে। সেটা অনুসরণ করেই সড়ক খননের অনুমোদন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন।

এ ছাড়া সরকারের বিভিন্ন প্রজ্ঞাপন ও নির্দেশনাও রয়েছে। মূলত বেশিরভাগ সংস্থাগুলোর জরুরি প্রয়োজনে বাধ্য হয়েই সড়ক খোঁড়ার অনুমতি দেয় সিটি করপোরেশন। নীতিমালা অনুযায়ী সড়ক খোঁড়ার পর ২৮ দিনের মধ্যে মেরামত করতে হবে। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও করপোরেশনের তদারকি না থাকায় দিনের পর দিন ভোগান্তি সহ্য করতে হয় নগরবাসীকে।

কে বলবে এটা একটি রাস্তা!

খোঁড়ার আবেদন ৫০০

দুই সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে সড়ক খোঁড়ার জন্য সংস্থা দুটোতে পাঁচ শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। গুরুত্ব বুঝে এক-তৃতীয়াংশের মতো অনুমোদন দিচ্ছে সিটি করপোরেশন। আর এতেই নগরী হয়ে উঠছে চলাচলের অযোগ্য। কয়েক মাসের মধ্যেই খোঁড়াখুঁড়ি আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে করপোরেশন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর পলাশি, বকশিবাজার, গুলিস্তান, বঙ্গবাজার, লালবাগ, চকবাজার, কোতয়ালী, সূত্রাপুর, নর্থসাউথ রোড, বাংলাবাজার, পশ্চিম দোলাইরপাড়, আরামবাগ, ফার্মগেট থেকে সাতরাস্তা, মতিঝিল, ডিআইটি রোড ও উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। এটা করছে ঢাকা ওয়াসা। সর্বোচ্চ ২৮ দিনের মধ্যে এসব সড়কের কাজ শেষ করার নির্দেশনা থাকলেও কয়েক মাসও মাটি ফেলে রাখা হয়েছে।

পশ্চিম দোলাইরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে স্থানীয় নির্বাচন অফিস ও দোলাইরপাড় উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের সড়কসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি সড়ক কেটে ড্রেন বানানো হচ্ছে। ড্রেন কাটার মাটি আশপাশেই স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সড়কগুলোর দুই পাশের দোকানপাটগুলোর অবস্থা বেগতিক বলে জানিয়েছেন দোকান মালিকরা।

রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি নিয়েই চলছে নগরবাসীর দুর্ভোগের জীবন

এলাকার বাসিন্দা সারমিন আক্তার বলেন, ‘রাস্তা কেটে রাখার কারণে বাসায় যাতায়াত করতে সমস্যা। একদিন বৃষ্টিতে বাজার করে ফেরার পথে ছিটকে ড্রেনে পড়ে গিয়েছিলাম। আশপাশের মানুষ এসে আমাকে উদ্ধার করে। মাসের পর মাস আমাদের সড়কটি কেটে রাখা হয়েছে।

একইচিত্র বকশিবাজার মোড় থেকে পলাশী মোড় পর্যন্ত। এ সড়কেও ড্রেন বানানোর কাজ চলছে। এতে রোডের একপাশ পুরো বন্ধ। যার কারণে তীব্র যানজট লেগেই আছে। এমনটা আর কতদিন চলবে বলতে পারছে না ডিএসসিসি।

ফার্মগেট থেকে সাতরাস্তা যেতে রেলগেট সংলগ্ন এলাকায় চলছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ। দীর্ঘদিন এ সড়কে চলাচল করা সম্ভব হচ্ছে না। এলাকার বাসিন্দারা বিকল্প সড়ক ব্যবহার করছেন।

রোকেয়া সরণীর জলাবদ্ধতা দূর করতে ড্রেন ও সড়কের উন্নয়ন কাজ করছে ডিএনসিসি। মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়ন কাজের জন্য বেশিরভাগ সড়ক ক্ষতবিক্ষত। খোঁড়াখুঁড়িতে তেজগাঁওয়ের সড়কগুলো দিয়েও চলাচল করা যাচ্ছে না।

 

যা জানালো দুই করপোরেশন

এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোর মতো যদি সব সেবা সংস্থার ইউটিলিটি সার্ভিস একসঙ্গে থাকতো তবে এমন সমস্যায় পড়তে হতো না। প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদনের কারণে নতুন রাস্তাও কেটে ফেলতে হয়। তবে আমরা অতি জরুরি ছাড়া কোনও রাস্তা খুঁড়তে দিচ্ছি না।’

জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুনসী মো. আবুল হাসেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের একটি ওয়ান স্টপ সার্ভিস রয়েছে। কোনও সংস্থার রাস্তা কাটার প্রয়োজন হলে তারা সেখানে আবেদন করে। জরুরি হলে মেয়রের সম্মতিক্রমে অনুমোদন দেওয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে আমাদের একটি প্রকল্প চলছে। একটি কাজের সুফল পেতে হলে নগরবাসীকে কিছুটা দুর্ভোগ সহ্য করতেই হবে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে কাজগুলো দ্রুত শেষ হয়।’