(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বরের ঘটনা।)
এদিন সকালে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-ইডেন কলেজ শাখার সদস্যরা গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সংসদের নবনির্বাচিত সভাপতি শামীমা বেগম ও সাধারণ সম্পাদক ফজিলাতুন্নেছা ছাত্রীদের সাক্ষাৎদলের নেতৃত্ব করেন।
দেশে এদিন জরুরি অবস্থা ধারায় রাষ্ট্রপতিকে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণার ক্ষমতা দিয়ে আনা সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী বিলটি জাতীয় সংসদে ২৬৭ ভোটে পাস হয়। বিরোধী সদস্যরা বিলের ওপর ভোট গ্রহণের আগেই এর বিরোধিতা ও অগণতান্ত্রিক বলে অভিহিত করে ওয়াকআউট করেন। এদিকে সংসদ অধিবেশনের মধ্যবর্তী সময় ৬০ দিন থেকে ১২০ দিন করা হয়। এছাড়া নিবর্তনমূলক আটকের বিধান সংবলিত আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়। বিল সম্পর্কে বিরোধী সদস্যদের অভিযোগের জবাবে আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর বিনা কারণে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হবে না উল্লেখ করে বলেন, ‘বিশেষ জরুরি প্রয়োজনের কথা চিন্তা করেই সংবিধানে এ ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।’ আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আপৎকালীন অবস্থা মোকাবিলার জন্য প্রত্যেক দেশের সংবিধানে জরুরি অবস্থা ঘোষণার ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের সংবিধানে এমন কোনও ব্যবস্থা ছিল না। এখন সংসদ সংশোধনী এনে এই শূন্যতা পূরণ করছে মাত্র।’ তিনি বলেন, ‘এটি একটি মামুলি সংশোধনী।’
আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর বিলটি বিবেচনার জন্য উত্থাপন করেন। বাংলাদেশ জাতীয় লীগের আতাউর রহমান খান, ভাসানী ন্যাপের কামরুল ইসলাম, মোহাম্মদ সালাউদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন সদস্য যাচাইয়ের জন্য বিরোধী প্রচারণার প্রস্তাব করেন। কিন্তু কণ্ঠভোটে এ প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়।
বঙ্গবন্ধুর জাপান সফর নির্ধারিত
জাপানের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ বছরের ১৮ থেকে ২৪ অক্টোবর ৬ দিনের জন্য জাপান সফর করবেন বলে জানানো হয়। এদিন ঢাকায় প্রকাশিত বাংলাদেশ পররাষ্ট্র দফতরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়। ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। জাপানে ছয় দিনব্যাপী সফরকালে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বার্থ নিয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন। জাপানে বঙ্গবন্ধুর সফর হবে সকল প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশের ঘোষিত নীতির সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর সফরে বাংলাদেশ ও জাপানের জনগণের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব প্রতিফলিত হবে বলে কূটনৈতিক মহল মনে করে।
দিল্লির চুক্তি অনুযায়ী, পাকিস্তান থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো বাঙালিদের একটি দল নিয়ে জাতিসংঘ নির্ধারিত আফগান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এতে সামরিক বাহিনীর ২৮ জন জুনিয়র কমান্ডিং অফিসার ও তাদের পরিবার আসেন। পক্ষান্তরে তারা অবতরণের এক ঘণ্টা পর বিমানটি ৮৭ জন প্রাপ্তবয়স্ক ও ৪০ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক অবাঙালিকে নিয়ে পাকিস্তানের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করে। রাত ১০টায় আবারও ওই বিমানটি ১৪৬ জন বাঙালিকে নিয়ে লাহোর থেকে এসে ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করে।