এদিনের সিদ্ধান্তে যুদ্ধ পরবর্তী লোক বিনিময় জোরদার করা হয়

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২ অক্টোবরের ঘটনা।)

১৯৭৩ সালের ৮ অক্টোবর থেকে রাশিয়ার বিমান ঢাকা ও করাচির মধ্যে লোক পরিবহন শুরু করবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। ফলে দিল্লি চুক্তি মোতাবেক বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বিনিময় কাজ আরও জোরদার হবে বলে মনে করছিল কূটনীতিক মহল। খবরে প্রকাশ, শুরুতে জাতিসংঘের ভাড়া করা আফগান বিমানে করে প্রতিদিন উভয় দিক থেকে লোক আনা-নেওয়ার কাজ চলছিল।

জানানো হয়, ১৯৭৩-এর ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী সোহরাব হোসেন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে লোক বিনিময় বন্ধ রাখা হতে পারে বলে যে গুঞ্জন তা অস্বীকার করেন। এই দিন তার দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দিল্লি চুক্তি অনুযায়ী লোক বিনিময় অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, ব্রিটেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন, কানাডা ও বেলজিয়াম ত্রিমুখী ত্বরান্বিত করার জন্য বিমান সাহায্যের প্রস্তাব করে। তিনি বলেন, দিল্লি চুক্তি অনুযায়ী লোক বিনিময় অব্যাহত আছে। উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত চার হাজার ৮১২ জন আটক বাঙালি পাকিস্তান থেকে ঘরে ফিরে এসেছে। বাংলাদেশ থেকে ৪ হাজার ৮৪ জন পাকিস্তানি তাদের দেশে ফিরে গেছে। ইউএনআইর খবরে বলা হয়, দিল্লি চুক্তি অনুযায়ী লোক বিনিময়ের জন্য তারা বাংলাদেশকে সাহায্য করার প্রস্তাব দিয়েছে।

সাধারণ পরিষদে শরণ সিং যা বলেছিলেন

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বলেন, জাতিসংঘ দুই জার্মানি এবং বাহামার মতো রাষ্ট্রকে যেখানে স্বাগত জানায় সেখানে এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে জাতিসংঘের একাধিক রাষ্ট্রের স্বীকৃতিসমৃদ্ধ সাড়ে সাত কোটি মানুষের একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ আমাদের মধ্যে তাদের যৌক্তিক আসন পায়নি। 

এ প্রসঙ্গে আলজিয়ার্স অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ সম্মেলন আহ্বানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে অবিলম্বে জাতিসংঘে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া উচিত। বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি অব্যাহতভাবে অস্বীকার করে যাওয়া যতটা না জাতিসংঘের এক বিরাট পরাজয়, তার চেয়ে এটা জাতিসংঘের মূল লক্ষ্য আর মৌলনীতির ক্ষত হয়ে আছে।

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ১৯৫ পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীকে মুক্তি দিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ভুট্টো যেভাবে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের স্বীকৃতির সঙ্গে যুক্ত করছেন, সেটি একেবারেই যৌক্তিক না। তিনি সমালোচনা করে উল্লেখ করেন, ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এ তিনটি দেশি চুক্তিতে রাজি হয়েছিল যে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি সাপেক্ষে, তাতে ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধী ভারতে আটকে থাকবে। এর সমর্থনে তিনি ২৮ আগস্ট সম্পাদিত দিল্লি চুক্তি থেকে উদ্ধৃতি দেন। তিনি উল্লেখ করেন, এই চুক্তিতে বাংলাদেশ এ কথা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশ কেবল ন্যায্যতা ও সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বসতে পারে। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে বসবাসের আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এতে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্য বজায় থাকবে।

বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানালেন ভুট্টো

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদান করতে আগ্রহী। বিমানবন্দরে এক সমাবেশে বক্তৃতাকালে ভুট্টো বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করে বলেন, স্বীকৃতিদানে বাইরের কোনও চাপ নেই। ভুট্টো বলেন, পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে শুধু সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী। তিনি বাঙালিদের ‘আমাদের ভাই’ বলে উল্লেখ করেন। ভুট্টো বলেন, আসুন আমরা পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করি। তিনি জানান, প্রায় ২ লাখ বাংলাদেশি নাগরিককে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।