দেশ তামাকমুক্ত না হলে অধরাই থাকবে এসডিজি

২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এটি করা না গেলে এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়বে দেশ। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান আইনের সংস্কার ও সংশোধন প্রয়োজন। তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে জরুরি হয়ে হয়ে পড়েছে শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন।

সূত্র জানিয়েছে, ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ তামাকমুক্ত হবে কিনা এ নিয়ে সন্দিহান সংশ্লিষ্ট অনেকে। তারা মনে করেন, আন্তঃমন্ত্রণালয় জটিলতা কাটিয়ে অল্প সময়ে তামাক নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান আইন সংশোধন করে আরও শক্তিশালী আইন পাস জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী তামাক ব্যবহারের ফলে কোভিড-১৯ সংক্রমণে মারাত্মক অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। বর্তমানে দেশের প্রায় ৪ কোটি তামাক ব্যবহারকারী কোভিড-১৯ এর মৃত্যুঝুঁকিতে আছে। তাই সংশোধনীর মাধ্যমে বর্তমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন যুগোপযোগী করা সময়ের দাবি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এ সংশ্লিষ্ট একটি ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করতে ৬টি সুপারিশ করেছেন। প্রথমত, নির্ধারিত স্থান বিলুপ্তসহ সকল পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করতে হবে। তৃতীয়ত, তামাক কোম্পানির ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি’ বা সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা এবং প্যাকেটবিহীন জর্দা-গুল বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে। ই-সিগারেট এবং হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টসহ (এইচটিপি) সকল ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস আমদানি ও বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে এবং সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার বাড়ানোসহ তামাকপণ্য মোড়কজাতকরণে বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে। 

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ পেতে হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল এফসিটিসি’র আলোকে শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ আইন ও কঠোর বাস্তবায়ন দরকার।

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালে সাউথ এশিয়ান স্পিকারস সামিটের সমাপনী অনুষ্ঠানে এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের ঘোষণা দেন। এই নির্দেশনার আলোকে সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। 

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তামাক কোভিড-১৯ সংক্রমণের সহায়ক। সম্প্রতি প্যারাগুয়েতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঝুঁকি থেকে জনগণকে বাঁচাতে সকল পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও গণপরিবহনে ধূমপান শতভাগ নিষিদ্ধ করেছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ তামাকজনিত রোগে মারা যায়। পঙ্গুত্ব বরণ করে আরও কয়েক লাখ মানুষ। এখনও দেশের ৩৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী তামাক ব্যবহার করছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রন আইন সংশোধনী কমিটির সদস্য ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর ডিপার্টমেন্ট অব এপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী জানিয়েছেন, তামাকমুক্ত বাংলাদেশে অর্জনে বিদ্যমান আইন চূড়ান্ত রূপ পেতে অনেকগুলো ধাপ বাকি। সেগুলো পেরিয়ে সংসদে বিল আকারে উপস্থাপন করা পর্যন্ত কাজগুলো যাতে দ্রুত হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে আরও উদ্যোগী হতে হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার কাজ চলছে। এজন্য নির্ধারিত কমিটি কাজ করছে। আইন মন্ত্রণালয়কেও এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।