বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এদিন তিন দলের নেতাদের বৈঠক হয়

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১০ অক্টোবরের ঘটনা।)

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ন্যাপ মোজাফফর এবং কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা ১৯৭৩ সালের এই দিন (১০ অক্টোবর) সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে ত্রিদলীয় ঐক্যজোট গঠনের ঘোষণাপত্র, সাংগঠনিক কাঠামো এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি কোরবান আলী অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আলোচনা অব্যাহত থাকবে। নেতারা পুনরায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন।’ তবে কবে নাগাদ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, সে বিষয়ে কোনও দিন-তারিখ- সময় উল্লেখ করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘যেকোনও সময় আমরা বৈঠকে মিলিত হতে পারি।’ ওয়াকিবহাল মহল থেকে জানা যায় যে, ঘোষণাপত্রে আরও সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে তিন দলের নেতারা পুনরায় বৈঠকে মিলিত হয়ে আলোচনা করবেন। ঘোষণাপত্র সংশোধনের ব্যাপারে তিন দলের নেতাদের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠানের পর পুনরায় দু-একদিনের মধ্যে তারা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মিলিত হবেন এবং বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত অনুমোদনের পর তা জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা হবে। এই দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোরবান আলী, আনোয়ার চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, মোস্তফা সারোয়ার, কাজী গোলাম মোস্তফা, শেখ ফজলুল হক মনি, বেগম সাজেদা চৌধুরী,  মোজাফফর ন্যাপের পক্ষ থেকে অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, চৌধুরী হারুনুর রশিদ, পঙ্কজ ভট্টাচার্য, মতিয়া চৌধুরী ও কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে কমরেড মনি সিং, আব্দুস সালাম ও কমরেড ফারহাদ উপস্থিত ছিলেন।

দৈনিক বাংলা, ১১ অক্টোবর ১৯৭৩আরবদের আরও সাহায্য দেওয়ার বিষয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে

এইদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আরবে যুদ্ধের বিরুদ্ধে এবং সেখানকার জনগণের প্রতি বাংলাদেশের সম্মতি ঘোষণা করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও  সাহায্য পাঠানোর কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।’ তিনি বাংলাদেশে আফ্রো-এশীয় গণসংহতি পরিষদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আরব বিশ্বের জনগণকে আরও কীভাবে সাহায্য করা যায়, সরকার তা গভীরভাবে বিবেচনা করে দেখছে।’

গণসংহতি পরিষদের প্রতিনিধিদল মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে আরব জনগণের পক্ষে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার প্রসংসা করেন। তারা এ ব্যাপারে সরকারকে আরও সক্রিয় হওয়ার জন্য অনুরোধ জানালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী উপরিউক্ত সাহায্য বিবেচনায় কথা উল্লেখ করেন। আফ্রো-এশীয় গণসংহতি পরিষদ মিশরের সংগ্রামী জনগণের জন্য বেশকিছু সাহায্য প্রদানের কথা প্রকাশ করে এবং তা যথাস্থানে পৌঁছে দেওয়ার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। পরিষদ জনগণের পক্ষে সেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী পাঠানোরও প্রস্তাব দেন।

দি ডেইলি অবজারভার, ১১ অক্টোবর ১৯৭৩নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব সম্পর্কে ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় নিরাপত্তা পরিষদে মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কিত বিতর্ক নিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বৈঠক মুলতবি হয়েছে। যুদ্ধের জন্য আরব রাষ্ট্রগুলোকে দোষারোপ করে সোভিয়েত প্রতিনিধি আধাঘণ্টার জন্য বৈঠক বর্জন করেন। কূটনৈতিক মহলের মতে, যুদ্ধে কোনও পক্ষ যে জয় লাভ করছে, সে বিষয়টি স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদ যুদ্ধবিরতির কোনও প্রস্তাব গ্রহণ করতে সমর্থ হবে না।

সোভিয়েত প্রতিনিধি বৈঠকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ও দেশরক্ষা মন্ত্রীকে আন্তর্জাতিক অপরাধী বলে উল্লেখ করেন। মিশরীয় প্রতিনিধি বলেন যে, ‘ইসরায়েল কায়রোর ওপরে হামলা চালিয়েছে এবং বিমান হামলায় অংশগ্রহণকারী চার জন ইসরায়েলি পাইলট এখন মিশরের হাতে আটক। ইসরায়েল অবশ্য কায়রোর বিমান হামলা চালাবার অভিযোগ অস্বীকার করে।’ মার্কিন প্রতিনিধি দামেস্কে ইসরাইলি বিমান আক্রমণে নিহত সকলের জন্য শোক প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে চীন একেবারেই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।