ভাসানচরে যাওয়ার আগ্রহ বেড়েছে রোহিঙ্গাদের

ভাসানচরে জাতিসংঘ যুক্ত হওয়ায় সেখানে যাওয়ার বিষয়ে রোহিঙ্গাদের নতুন করে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। যেসব সুবিধা রোহিঙ্গারা উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে পেতো ভাসানচরেও সেসব সুবিধা মিলবে বলে তারা ধারণা করছেন। তবে কেউ কেউ বলছেন, ভাসানচরের চেয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য জাতিসংঘের আরও উদ্যোগ নেওয়া উচিৎ। জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকার যেখানেই তাদের পাঠাবে, সেখানেই যাবেন। তবে মিয়ানমারে ফিরতে বেশি আগ্রহী তারা।

রবিবার (১০ অক্টোবর) রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন মাঝির সঙ্গে কথা বলে ভাসানচরের বিষয়ে তাদের ইতিবাচক বক্তব্য পাওয়া গেছে।

উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প ১ এর মাঝি করিম মুস্তফা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভাসানচরে জাতিসংঘ যুক্ত হওয়ায় আমরা খুশি। তবে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে একটা ভয় ছিল বন্যা  ও জলোচ্ছ্বাস নিয়ে। কিন্তু যারা গেছে তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে বন্যায় তেমন কোনও সমস্যা নেই। তবে বাজার সদাই, ওষুধ পানির সুযোগ সুবিধা নিয়ে তাদের আপত্তি ছিল। এখন সেই আপত্তি থাকবে না।’

এই রোহিঙ্গা নেতা বলেন, ‘আমাদের যেখানে নেবে সেখানেই যাবো। কিন্তু আমরা মিয়ানমারে যেতে চাই। আমাদের সেই ব্যবস্থাটা করতে পারলে ভালো হতো।’

রোহিঙ্গা ক্যাম্প

রোহিঙ্গা নেতা নুর বসর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি চেষ্টা করছি আমার আশেপাশে যারা রয়েছে তাদের বুঝানোর। আমরা জানি বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘ সর্বোচ্চ ভালোটাই চায়। তবে ভাসানচর নিয়ে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে কিছু বিষয়ে ভুল ধারণা রয়েছে। তারা অনেকেই ভাবে ভাসানচরে গেলে কোনও সাহায্য পাবে না, তবে জাতিসংঘ সেখানে যাওয়াতে এখন এই ভুলটাও তাদের ভেঙে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে নিজেরা বিষয়টা আলাপ করছি। জাতিসংঘ সেখানে যাওয়াতে রোহিঙ্গারা সকল সুবিধা পাবে এমন ধারণা ইতিমধ্যে রোহিঙ্গাদের মধ্যে শুরু হয়েছে।’

অনেক রোহিঙ্গা ভাসানচরে নিরাপদ মনে করে। সেখানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম কম হবে বলেও মনে করেন তারা। রোহিঙ্গা মানবাধিকার কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবী আউয়াল বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘ যেখানে রাখবে, রোহিঙ্গারা সেখানেই থাকবে। সাধারণ রোহিঙ্গারা নিরাপদে থাকতে চায়। কারণ ক্যাম্পকে ঘিরে একটি চক্র বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে চায়। যা সাধারণ রোহিঙ্গাদের পছন্দ না।’

রোহিঙ্গা ক্যাম্প

ভাসানচরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পৃক্তকরণের বিষয়ে সরকার ও জাতিসংঘের মধ্যে শনিবার (৯ অক্টোবর) চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। এ লক্ষ্যে সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সমঝোতা স্মারক সই করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই-কমিশন (ইউএনএইচসিআর)।

এই চুক্তির আলোকে জাতিসংঘ ভাসানচরে কাজ করবে।

নোয়াখালীর ভাসানচরে বর্তমানে ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে। উখিয়া ও টেকনাফের তুলনায় উন্নত বাসস্থান আর সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে ওই আশ্রয়কেন্দ্রে। এরপরও ভাসানচরে যেতে রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহ। এমনকি যারা সেখানে গেছেন, তাদের অনেকে পালিয়ে আসার চেষ্টাও করছেন। তবে জাতিসংঘের সঙ্গে চুক্তি হওয়ায় সেখানে যাবার আগ্রহ তৈরি হবে বলে রোহিঙ্গারা মনে করছেন।