সেই বছরের আরব যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা পাঠাতে প্রস্তুত বঙ্গবন্ধু

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১৮ অক্টোবরের ঘটনা।)

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাপান যাওয়ার পথে কুয়ালালামপুরে যাত্রাবিরতির সময় বলেছেন, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে আরবদের পাশে থেকে যুদ্ধ করতে, বাংলাদেশ সেখানে মুক্তিযোদ্ধা পাঠাতে প্রস্তুত। ১৯৭৩ সালের এই দিনে জাপান যাওয়ার পথে খুব ভোরে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে পৌঁছার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এক অনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ তাদের পাশে থাকবে এবং সব রকম সাহায্য দিতে প্রস্তুত রয়েছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আরবদের প্রতি নৈতিক ও বৈষয়িক সমর্থনদানের কথা ঘোষণা করেছে।’ তিনি বলেন, ‘সংগ্রামে লিপ্ত লোকদের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা আমাদের এই সমর্থনের ভিত্তি।’

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘মিসর ও সিরিয়ার জনগণের জন্য বাংলাদেশ এক লাখ পাউন্ড চা পাঠাচ্ছে। যুদ্ধে আহতদের আরও ভালো চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও একটি মেডিক্যাল টিম পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আরবদের মুক্তি-সংগ্রামে তাদের পাশেই থাকবো।’ বিমানবন্দরে মালয়েশিয়ার কৃষিমন্ত্রী এবং অন্যান্য পদস্থ সরকারি কর্মচারী বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানান।

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর স্বল্পকাল অবস্থানের কারণে আনন্দ প্রকাশ করেন দেশটির সরকার। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিক সম্মেলনে আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে আগ্রহী।’ যাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সেই দেশগুলোর সঙ্গে যুক্ত হওয়া বাংলাদেশের কোনও পরিকল্পনা রয়েছে কিনা, জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বিশ্বের কোন মুহূর্তে কী অবস্থা ও পরিস্থিতি দাঁড়ায়, তার ওপরে সেটা নির্ভর করবে।’ তিনি বলেন, ‘ভারত ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব এবং ওই অঞ্চলে যে ধরনের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উদ্ভব হোক না কেন, এই বন্ধুত্ব অটুট থাকবে।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন সমস্যার প্রতি জাপানের সহানুভূতি রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনায় জাপানের কাছ থেকে আর্থিক ও কারিগরি উভয় প্রকার সাহায্য আমরা চাইবো।’ শেখ মুজিব বলেন, ‘বাংলাদেশ দিল্লি চুক্তির প্রতি আস্থাশীল এবং এর বাস্তবায়ন পরিপন্থী কোনও কাজ তারা করবে না।’ এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘পাকিস্তান আমাদের স্বীকৃতি দেওয়ার কে, প্রশ্ন হলো আমরা পাকিস্তানকে স্বীকার করি কিনা।’

টোকিওতে বিশাল সংবর্ধনা

টোকিওতে নামার পরে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আন্তরিক সংবর্ধনা জানানো হয়। অর্থনৈতিকভাবে পরাক্রমশালী মহাশক্তি জাপানে সাত দিনের সফরে বঙ্গবন্ধু সেখানে পৌঁছান। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাপানের নেতাদের সঙ্গে অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেবেন। বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার ব্যাপারে ব্যাপকভিত্তিক আলোচনা করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের একাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমানের  উড়োজাহাজ থেকে বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে টোকিও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জাপানি প্রধানমন্ত্রী তানাকা বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের নেতাকে সংবর্ধনা জানান। তিনি বঙ্গবন্ধুকে বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ সুধীজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর বঙ্গবন্ধু গার্ড অব অনার পরিদর্শন করেন। এ সময় দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু সেখানে যে হোটেলে থাকবেন, সেখানে যাত্রা করেন।